মুমিনুলের চ্যালেঞ্জ

মুমিনুল হক
কাল বেলা দুইটার দিকে ইনডোরে অনুশীলন শেষে তিনি রওনা হলেন মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামের জিমের দিকে। গা জ্বালানো চৈত্রের গরমে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। প্রচণ্ড দাবদাহ উপেক্ষা করে মুমিনুল হক তবু যাচ্ছেন অনুশীলনের পরের পর্ব শুরু করতে। এটাই তাঁর গত কদিনের রুটিন। কদিন পরই শুরু ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ। খেলার জন্য তৈরি হচ্ছেন। এবারের লিগে মুমিনুল কিছু প্রমাণ করার যেন তাগিদ পাচ্ছেন। আচ্ছা প্রমাণ করার কীই-বা আছে তাঁর? ১৭ টেস্টে ৫৬ গড়ে যাঁর রান ১৪৫৬, যিনি অল্পের জন্য ভাঙতে পারেননি এবি ডি ভিলিয়ার্সের সবচেয়ে বেশি টানা ১২ টেস্টে পঞ্চাশ বা পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলার রেকর্ড, তাঁকেই কিনা প্রমাণ দিতে হবে? মুমিনুলের এই চ্যালেঞ্জ ৫০ ওভারের ক্রিকেটে নিজেকে মেলে ধরার। ২৬ ওয়ানডেতে ২৩.৬০ গড়ে ৫৪৩ রান। তাঁর মতো ব্যাটসম্যানের পাশে বড্ড বেমানান। টেস্ট হচ্ছে একজন ক্রিকেটারের সর্বোচ্চ পরীক্ষা। সেই কঠিন পরীক্ষায় ‘এ’ প্লাস পেয়ে উত্তীর্ণ মুমিনুল কেন সীমিত ওভারে ভালো করতে পারছেন না? প্রশ্নটা এতবার শুনতে হয়েছে যে তিনি নিজেও বিরক্ত, ‘এই উত্তরটা কয়েক শ বার দিয়েছি! আরেকবার দিচ্ছি। সুযোগটা হয়তো নিজেই হারিয়েছি। প্রথম দিকে টেস্টে আমার পারফরম্যান্স যেমন ছিল, সেটি যদি ওয়ানডেতেও করতে পারতাম তাহলে হয়তো এই সংস্করণেও নিয়মিত হতে পারতাম।’ কেন ব্যর্থ হচ্ছেন—এই ‘নিগূঢ় রহস্য’ ভেদ করার চেষ্টা করেছেন কখনো? মুমিনুলের কাছেও উত্তর নেই, ‘কেন ব্যর্থ হচ্ছি, কখনো ওভাবে বিশ্লেষণ করিনি। তবে কোনো সংস্করণে খারাপ করলে স্বাভাবিকভাবে দল আপনাকে নিয়ে চিন্তা করবে না।’ সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মুমিনুলের ব্যর্থতার বিশ্লেষণে এই প্রশ্নটাও উঠতে পারে যে যথেষ্ট সুযোগ তিনি পেয়েছেন কি না। ২০১৫ বিশ্বকাপে দুটি ম্যাচ খেলার পরই রঙিন পোশাকে বাংলাদেশ দলের দরজাটা তাঁর জন্য বন্ধ হয়ে গেল। মুমিনুল অবশ্য এসব নিয়ে ভাবেন না, ‘যথেষ্ট সুযোগ পেয়েছি কি না, এমন নেতিবাচক চিন্তা কখনো করিনি। পেছনে কী হয়েছে, তা নিয়ে আসলে ভাবি না। এখন বাংলাদেশ দলে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা। এক দিনের ম্যাচে আমাকে ভালো করতে হবে। সামনে প্রিমিয়ার লিগ আছে। এখানে ভালো করলে হয়তো ওয়ানডেতে আবার সুযোগ আসতে পারে।’ এবার প্রিমিয়ার লিগের ‘প্লেয়ার ড্রাফট’ পদ্ধতি মুমিনুলকে তুলেছে ভিক্টোরিয়া স্পোর্টিং ক্লাবে। খুব নামীদামি ক্রিকেটার নেই ২০১১-১২ মৌসুমের চ্যাম্পিয়নদের। ভিক্টোরিয়াকে শিরোপা জেতানোর আশা মুমিনুলের নিজেরও নেই। ভালো অবস্থানে থাকাই তাঁর মূল লক্ষ্য, ‘বাস্তবতা মেনেই বলছি, আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার চিন্তা করছি না। তিন-চারের মধ্যে থাকাই মূল লক্ষ্য। এই দল নিয়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়া কঠিন।’ গত আগস্টে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ঢাকা টেস্টের পর থেকেই বাংলাদেশ দলের বাইরে মুমিনুল। এর পর থেকে ঘরোয়া ক্রিকেটেই সীমাবদ্ধ তাঁর পদচারণ। তাতে অবশ্য তিনি হতাশ নন। বরং সামনের দিনগুলোয় সব ধরনের ক্রিকেটেই রাঙাতে চান ২৪ বছর বয়সী এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যান, ‘আল্লাহর ওপর ভরসা রাখছি আর কঠোর অনুশীলন করছি। জীবন শেষ হয়ে যায়নি। এখনো ছোট, সামনে তো অনেক দিনই পড়ে আছে।’

No comments

Powered by Blogger.