পানির সংকট ও বিক্ষোভ

গরমের তীব্রতা বাড়লে নাগরিক জীবনে পানির চাহিদাও বাড়ে—এ কথা সবার জানা থাকলেও যাঁদের সবচেয়ে বেশি জানার কথা, তাঁরা হলেন ওয়াসার কর্মকর্তারা। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে তাঁরা এবারের শুকনো মৌসুমে পানি সরবরাহে অব্যবস্থাপনা ও অদক্ষতার একটি নতুন উপাখ্যান তৈরি করেছেন। গত কয়েক দিনে মগবাজার-মালিবাগ-ওয়্যারলেস গেট এলাকা ও মিরপুর-১০ নম্বরে মানুষ বিক্ষোভ করেছে। তার মানে অবশ্যই এটা নয় যে পানিবঞ্চিত প্রতিটি এলাকার মানুষই রাজপথে নেমে পড়বে। অথচ একটু দায়িত্বশীলতা ও দূরদর্শিতার সঙ্গে নিজ কর্তব্য পালনে মনোযোগী থাকলে এই পরিস্থিতি বহুলাংশে এড়ানো সম্ভব ছিল। কারণ, এটা খুবই পরিষ্কার যে একটি ব্যাপক এলাকার মানুষ পানির কষ্টের শিকার হয়েছে এবং সেটা প্রধানত ব্যবস্থাপনাগত ব্যর্থতারই ফল। কয়েকটি স্থানে পানির স্তর নিচে নেমে যাওয়াকে আমরা যদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ বলি, তাহলে ‘মোটা পাইপ’ বসাতে গিয়ে সরু পাইপ বন্ধ হয়ে সংকট তৈরি হওয়াকে নিশ্চয় মানবসৃষ্ট দুর্যোগ বলতে পারি। বিশেষ করে যখন ওয়াসা নিজেই দাবি করে যে নগরবাসীর চাহিদার তুলনায় তারা বেশি পানি উৎপাদন করে। কিন্তু সরবরাহ লাইনের ত্রুটির কারণে সর্বত্র যথাসময়ে পানি পৌঁছায় না।
আমরা আশা করব, যেসব সমস্যা প্রতিকারের বাইরে ছিল এবং যা দায়িত্বে গাফিলতির কারণে সৃষ্ট কিন্তু এড়ানো যেত, তার মধ্যে পার্থক্য আনা হবে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে নিশ্চিত করতে হবে যে ব্যবস্থাপনাগত ব্যর্থতার বিষয়ে উপযুক্ত জবাবদিহি নিশ্চিত করা হয়েছে। তারা আদৌ এ বিষয়ে উদ্বিগ্ন তার প্রমাণ দিতে হলে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের উচিত হবে বিষয়টি জনগণের কাছে ব্যাখ্যা করা। কয়েকটি স্থানে ওয়াসা যেভাবে ‘বৈদ্যুতিক ও যান্ত্রিক’ ত্রুটির কথা দাবি করছে, এ বিষয়ে বিশেষজ্ঞদের মতামত দরকার। এটা বিস্ময়কর যে বিদ্যুৎ বিভাগ এর কোনো ব্যাখ্যা দিচ্ছে না। আগে কোথাও পানির সংকট হলে সে বিষয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করা হতো। এখন তার প্রচলন যাঁরা তুলে দিচ্ছেন, তাঁদেরও জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.