জঙ্গি তকমা দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে by শেখ মামুনূর রশীদ

বাংলাদেশের গায়ে জঙ্গি তকমা লাগিয়ে দেয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রাকে পিছিয়ে দিতে দেশী-বিদেশী একাধিক চক্র পরিকল্পিতভাবে এ তৎপরতা চালাচ্ছে। এক্ষেত্রে তারা বিদেশী সংবাদমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ ব্যবস্থা ফেসবুক টুইটার ব্যবহার করছে। এক সপ্তাহের কম সময়ের ব্যবধানে দুই বিদেশী নাগরিক খুনের ঘটনায় জঙ্গি সম্পৃক্ততা টেনে আনছে।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী খুনের সঙ্গে জড়িত প্রকৃত অপরাধীদের গ্রেফতার করে এদের চক্রান্ত নস্যাৎ করতে পারছে না। এ অবস্থায় নীতিনির্ধারকরা দুই খুনের বিষয়ে রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। এতে তদন্ত বাধাগ্রস্ত হতে পারে বলে সংশ্লিষ্টরা আশংকা করছেন।
নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা মনে করছেন এই দেশী ও বিদেশী চক্রের নিজস্ব এজেন্ডা আছে। লক্ষ্য বাস্তবায়নের অংশ হিসেবে তারা বাংলাদেশকে জঙ্গি রাষ্ট্র বানাতে চাচ্ছে। এর অংশ হিসেবে আইএসসহ নানা ধরনের জঙ্গি সংগঠন বাংলাদেশে সক্রিয় এটা প্রমাণ করতে চাচ্ছে। এদের এখনই রোধ করতে হবে। প্রকৃত অপরাধীকে শনাক্ত করে তাদের শাস্তির আওতায় আনতে হবে। অন্যথায় বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ধ্বংসের আশংকা আছে। তারা বলেন, যখন রিজার্ভ বেড়েছে, এমডিজিতে লক্ষ্য অর্জনের মধ্য দিয়ে মধ্যবর্তী আয়ের দেশ হওয়ার পথে অনেকটা পথ এগিয়ে গেছে, এ সময় পেছন থেকে টেনে ধরার জন্য নানা ধরনের ষড়যন্ত্র করছে চক্রগুলো। বিশ্লেষকদের মতে, এসব কারণেই ষড়যন্ত্রকারীরা দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার সঙ্গে আইএসের মতো জঙ্গি সংগঠনের সম্পৃক্ততা প্রমাণের চেষ্টা করছে। জঙ্গি ইস্যুতে সরকারের নীতিনির্ধারকদের দেয়া বক্তব্যকে কাজে লাগাচ্ছে তারা। এখন তারা বলার চেষ্টা করছে দেশে জঙ্গি নেই। কিন্তু তা কেউ বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না। এ পরিস্থিতিতে দেশের গায়ে জঙ্গি তকমা লাগানো অনেকটা সহজ হয়ে গেছে চক্রের জন্য। বিশ্লেষকদের মতে, বাস্তবতা হচ্ছে একবার এ ধরনের নেতিবাচক ‘সিল’ দেশের গায়ে পড়লে তা শুধু সরকারের ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ণ করবে না। দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হবে। ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ-উন্নয়ন-অগ্রগতি-কর্মসংস্থান-শ্রমবাজার-তৈরি পোশাক খাত, পর্যটন শিল্পসহ সবকিছু থমকে দাঁড়াবে। অর্থনীতিতে ভয়াবহ ধস নামবে। এই খাতের চিহ্ন বর্তমান সরকারের পাশাপাশি আগামীর সরকারগুলোকেও টেনে নিতে হবে। সিরিয়া, পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মতোন বাংলাদেশও ধীরে ধীরে ব্যর্থ রাষ্ট্রের দিকে ধাবিত হবে বলে তারা মনে করেন। সোমবার যুগান্তরকে দেয়া পৃথক প্রতিক্রিয়ায় নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ সুশীল সমাজের প্রতিনিধিরা এমন আশঙ্কার কথাই বলেছেন।
দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার সময় দেশের বাইরে ছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দেশে ফিরে রোববার গণভবনে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন তিনি। এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এ ঘটনার পেছনে নিশ্চয়ই তাদের (বিএনপি-জামায়াত) মদদ আছে। আমাদের অর্জনগুলো ম্লান করার জন্য এ ঘটনাগুলো ঘটানো হয়। এটার পেছনে নিশ্চয়ই একটা উদ্দেশ্য আছে। তাদের হাত আছে।’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিদেশী নাগরিক হত্যার ঘটনায় সন্দেহের তীর বিএনপি জামায়াতের দিকে ছুড়ে দিলেও দেশী-বিদেশী একাধিক চক্র দুটি খুনই জঙ্গি তৎপরতার অংশ হিসেবে প্রমাণ করার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরাও বিষয়টি এখনও স্পষ্ট করতে পারছে না, যা পরোক্ষভাবে কাজে লাগছে ষড়যন্ত্রকারীদের। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী একদিকে দাবি করছেন দেশে জঙ্গি নেই। অন্যদিকে আইএস সন্দেহে ময়মনসিংহ থেকে ৮ জনকে আটকের কথা ফলাও করে প্রচার করছে। এতে করে দিন দিন পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হয়ে উঠছে। দেশ ও সরকারের ভাবমূর্তিও হুমকির মধ্যে পড়ছে।
সংবিধান বিশেষজ্ঞ ড. শাহদীন মালিক যুগান্তরকে বলেন, দুই বিদেশী হত্যার পর সরাসরি বিএনপি-জামায়াতকে দোষারোপ করা চরম অদক্ষতার বহিঃপ্রকাশ। একইভাবে যারা জঙ্গি তৎপরতার কথা বলছেন তারাও নিজস্ব এজেন্ডা বাস্তবায়নের জন্য পরিকল্পিতভাবে এ কাজটি করছেন। যাতে করে সিরিয়া, পাকিস্তান-আফগানিস্তানের মতোন বাংলাদেশকেও ধীরে ধীরে ব্যর্থ রাষ্ট্র বানানো যায়। তিনি বলেন, ‘আমাদের এখান থেকেই অনেকে জঙ্গি জঙ্গি বলে প্রচারণা চালাচ্ছেন। রাতের টকশোতে বেশির ভাগ টেলিভিশন চ্যানেলে দেখা যায় আলোচনা হচ্ছে জঙ্গি নিয়ে। আমরাই জঙ্গি জঙ্গি বলে চেঁচামেচি করছি। যার সুযোগ বিদেশীরা তো নেবে।’
বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন যুগান্তরকে বলেন, পশ্চিমারা জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়টি মাথায় রেখে পশ্চিমাদের সমর্থন ও সহানুভূতি আদায়ে সরকার প্রথম থেকেই দেশে জঙ্গি আছে বলে প্রচারণা চালিয়েছে। এখন আবার তারাই বলছে দেশে জঙ্গি নেই। সরকারের জঙ্গি প্রচারণা এখন তাদেরই গলার কাঁটা হয়েছে। তাই দুই বিদেশী হত্যার দায় বিএনপি ও জামায়াতের ওপর চাপানো হচ্ছে। ফলে প্রকৃত অপরাধীরা আড়ালেই থাকবে। বহির্বিশ্বে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হবে। সরকারের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হবে।
অস্ট্রেলিয়ার ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর নিয়ে চলতে থাকা টানাপোড়েনের মধ্যে ২৮ সেপ্টেম্বর রাতে গুলশানের ৯০ নম্বর সড়কে সন্ত্রাসীদের গুলিতে নিহত হন ইতালির নাগরিক সিজারি তাভেল্লা। নিরাপত্তার অজুহাতে তারা শেষ মুহূর্তে সফর স্থগিত করে। এরপর রংপুরে জাপানের নাগরিক খুন হয়। সাউথ আফ্রিকার নারী ক্রিকেট দলের বাংলাদেশ সফর স্থগিত হয়ে যায়। তৈরি পোশাক শিল্পের ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিদের সংগঠন বায়ার্স ফোরামের পূর্বনির্ধারিত বৈঠক নিজেরাই স্থগিত করে দেয়। পোশাক শিল্প মালিকদের সঙ্গে সোমবার সকালে ঢাকায় এই বৈঠক হওয়ার কথা ছিল। এছাড়া বিদেশী নাগরিকদের চলাচলের ওপর সতর্কতা জারি করেছে বিভিন্ন দেশের দূতাবাস ও হাইকমিশন। নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখেই এসব করা হচ্ছে। বিদেশী কিছু গণমাধ্যমে দুই বিদেশী নাগরিক হত্যার পর নিরাপত্তা ইস্যুটি ফলাও করে প্রচার করছে। এটা অব্যাহত থাকলে বহির্বিশ্বে স্থায়ীভাবে ইমেজ সংকটে পড়ে বাংলাদেশ।
নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) একেএম মোহাম্মদ আলী সিকদার যুগান্তরকে বলেন, রাজনৈতিকভাবে স্বার্থ ক্ষুণ্ণ হয়েছে এমন কোনো গোষ্ঠী এই হত্যাকাণ্ডের পেছনে মদদ দিতে পারে বলেও মনে হচ্ছে। কারণ আন্তর্জাতিকভাবে এই দেশকে আইএস এবং জঙ্গি দেশের তকমা লাগিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা হাসিলের চেষ্টা হতে পারে। তাই তদন্ত সংশ্লিষ্টদের উচিত হবে বিদেশী নাগরিক হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের মুখোশ উন্মোচন করা। হোক সেটি দেশী অথবা বিদেশী ষড়যন্ত্র। না হলে দেশের ভাবমূর্তি মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ হবে। তিনি বলেন, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে থাকা কোনো বিদেশী শক্তি অথবা যৌথভাবেও এই হত্যাকাণ্ড চালাতে পারে। তিনি বলেন, এটি পূর্বপরিকল্পিত এবং আন্তর্জাতিকভাবে দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করার অপপ্রয়াস বলেই মনে হচ্ছে।
ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া বার্নিকাট ইতিমধ্যে বিদেশী নাগরিক হত্যার ঘটনায় সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করেছেন। দোষীদের বিচারের আহ্বান জানিয়ে তিনি এই হত্যার ঘটনার সব দিক তদন্ত করে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব অপরাধীদের বিচার করার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান। মার্কিন রাষ্ট্রদূত দাবি করেন, বিদেশী নাগরিক হত্যার আশঙ্কার কথা তারা আরও আগেই সরকারের সংশ্লিষ্ট্র মহলকে অবহিত করেছেন। বাংলাদেশে আইএসের উত্থান রোধে একজোট হয়ে কাজ করবেন বলেও জানান তিনি।
সাবেক রাষ্ট্রপতি ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ সোমবার যুগান্তরকে বলেন, ‘দুই বিদেশী হত্যার ঘটনা আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সরকারের ব্যর্থতারই প্রমাণ। এর সঙ্গে আইএস কিংবা অন্য কোনো জঙ্গি সংগঠনের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে বলে আমি মনে করি না।’ তিনি বলেন, কোথা থেকে এখানে আইএস আসবে। দেশের উন্নয়ন ও অগ্রযাত্রা ঠেকাতে কেউ কেউ জঙ্গি তৎপরতার কথা বলছেন। আইনশৃংখলা পরিস্থিতির উন্নতি করতে পারলে, মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারলে এসব অপপ্রচার ধোপে টিকবে না।
দেশের আরেক সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারার সভাপতি অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, দুই বিদেশী নাগরিককে হত্যার মধ্য দিয়ে একটি বিষয় পরিষ্কার হয়ে গেছে, দেশের নাজুক আইনশৃংখলা পরিস্থিতি আরও নাজুক হয়ে পড়েছে। তিনি বলেন, দেশে এসব কি হচ্ছে, বোঝা যাচ্ছে না। অধ্যাপক ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী বলেন, ঢালাওভাবে মন্তব্য না করে এসব বিষয়ে সরকারের ভূমিকা আরও দায়িত্বশীল হওয়া প্রয়োজন।
জানা গেছে, দুই বিদেশী হত্যাকাণ্ডের পর থেকেই নানা মহলে এক ধরনের ভীতিকর আবহ তৈরির অপচেষ্টা চলছে। বিশেষ করে ব্যবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ-তৈরি পোশাক খাত-আমদানি-রফতানি প্রভৃতি খাতে যাতে নেতিবাচক পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় সেই প্রচারণা চালাচ্ছে দেশী-বিদেশী চক্রগুলো। ইতিমধ্যে তৈরি পোশাক শিল্পের শংকিত বিদেশী ক্রেতারা বাংলাদেশ সফর স্থগিত করছেন।
বিজিএমইএর সাবেক সহ-সভাপতি মো. শহীদুল্লাহ আজীম যুগান্তরকে জানান, দীর্ঘদিন রফতানি আদেশে খরা গেছে। আগামী মৌসুমকে কেন্দ্র করে এখন রফতানি অর্ডার প্লেসমেন্টের মোক্ষম সময়। এই সময় এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। এর প্রভাব পোশাক খাতের ওপর পড়বে। এতে শুধু উদ্যোক্তাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে না, সার্বিক রফতানি খাতকেই এর মূল্য দিতে হবে।
অস্ট্রেলিয়া এবং দক্ষিণ আফ্রিকা ক্রিকেট দল সফর স্থগিত করার পেছনে ষড়যন্ত্র রয়েছে বলে মনে করেন বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান। সোমবার তিনি সাংবাদিকদের বলেন, ‘ষড়যন্ত্র অবশ্যই হচ্ছে। না হলে এভাবে হওয়ার কথা নয়।’ কেউ কেউ অবশ্য এর জন্য সরকারি দলকেই দায়ী করেছেন। তারা বলেছেন, পশ্চিমাদের কাছ থেকে বাহবা নিতে সরকারি দল নিজেরাই জঙ্গিবাদের কথা তুলেছিল। এখন তারা নিজেরাই এ ইস্যুতে বিপদে পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ভিসি অধ্যাপক ড. এমাজউদ্দিন আহমদ যুগান্তরকে বলেন, পর পর দু’জন বিদেশী নাগরিককে হত্যার ঘটনা একটি গভীর ষড়যন্ত্রেরই অংশ। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ করার অংশ হিসেবে বাইরের কেউ এই ষড়যন্ত্রের সঙ্গে যুক্ত থাকতে পারে। এখনই যদি পরিস্থিতি সামাল দেয়া না যায় তাহলে এ ধরনের ঘটনা একটার পর একটা ঘটতেই থাকবে।
তিনি বলেন, নীতিনির্ধারকরা যখন বলেন, বিএনপি-জামায়াত এ কাজ করেছে, তখন অন্য কোনো পথে তদন্ত করা আইনশৃংখলা বাহিনীর পক্ষে সম্ভব নয়। এই সুযোগে প্রকৃত অপরাধী পার পেয়ে যায়। আর এই সুযোগে দেশী-বিদেশী অপশক্তি বিষয়গুলোকে জঙ্গি তৎপরতা বলে চালায়- যা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করে। দেশকে ব্যার্থ রাষ্ট্র বানাতে এই একটি অপপ্রচারই যথেষ্ট।
সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা হাফিজ উদ্দিন খান বলেন, ‘দুই বিদেশীকে হত্যার ঘটনা খুবই খারাপ লক্ষণ। যারা এ কাজ করেছে তাদের অবশ্যই খুঁজে বের করতে হবে। দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। এ ধরনের হত্যাকাণ্ড রোধ করতে না পারলে পরিণতি ভয়াবহ রূপ নেবে- যা কারও কাম্য নয়। তবে আমি মনে করি না এটি জঙ্গিদের কাজ। কোনো অশুভ শক্তি এ ধরনের ঘটনার নেপথ্যে থাকতে পারে।’
সুজন সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, কিছু হলেই জঙ্গিদের ওপর না হয় বিরোধী দলের ওপর দোষ চাপানো হচ্ছে- যা খুবই শংকার এবং উদ্বেগের। অপরাধী চিহ্নিত করার আগেই কাউকে দোষারোপ না করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, এতে করে প্রকৃত অপরাধীরা পার পেয়ে যাবে। ড. বদিউল আলম মজুমদার বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ আইএস কিংবা জঙ্গিবাদের ঝুঁকিতে আছে। বাংলাদেশও এই ঝুঁকিতে রয়েছে কিনা তা খতিয়ে দেখতে হবে। কিন্তু কেউ কেউ আগ বাড়িয়ে বলছেন। তাদের এই আগ বাড়িয়ে বলার পেছনে অন্য কোনো মতলব থাকতে পারে। তিনি বলেন, ‘জঙ্গি তকমা লাগানো গেলে শুধু সরকারের ভাবমূর্তিই ক্ষুণ্ণ হবে না- দেশের ভাবমূর্তিও ক্ষুণ্ণ হবে। ব্যাবসা-বাণিজ্য-বিনিয়োগ-উন্নয়ন-অগ্রগতি-কর্মসংস্থান শ্রমবাজার-পর্যটন শিল্পসহ সবকিছু থমকে দাঁড়াবে। অর্থনীতিতে ভয়াবহ ধস নামবে।’
সাবেক নির্বাচন কমিশনার ও নিরাপত্তা বিশ্লেষক ব্রিগেডিয়ার (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন বলেন, পর পর দু’জন বিদেশী নাগরিককে একই কায়দায় হত্যা করা সংঘবদ্ধ দেশী-বিদেশী চক্রান্ত হতে পারে। সরকার প্রথমে ইতালিয়ান নাগরিক হত্যাকে বিচ্ছিন্ন ঘটনা বললেও রংপুরের প্রত্যন্ত এলাকায় জাপানি নাগরিক হত্যার পর এটি আর বিচ্ছিন্ন ঘটনা বলার অবকাশ নেই। এটি একটি সিরিজ ঘটনা হতে পারে। এগুলো কারা করছে দ্রুত খুঁজে বের করা দরকার।
তিনি বলেন, দেশে এখন বিদেশী বিনিয়োগ বাড়ছে। কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে। অর্থনৈতিকভাবেও দেশ এগুচ্ছে। সরকারও চেষ্টা করছে ভাবমূর্তি ফিরিয়ে আনতে। এই অবস্থায় টার্গেট করে বিদেশী নাগরিককে খুন করার ঘটনায় দেশের অর্থনীতি, বিদেশী বিনিয়োগ, নিরাপত্তা ও অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বড় ধাক্কা লাগবে।
সাবেক এই নির্বাচন কমিশনার আরও বলেন, জাপানের মতো দেশ, যারা কোনো রাজনীতি বা জটিলতার ধারেকাছেও নেই। আমাদের বড় উন্নয়ন সহযোগী। তাদের নাগরিককে হত্যার মধ্য দিয়ে মনে হয় বাংলাদেশে বিদেশী বিনিয়োগ, তাদের অবস্থানের ওপর প্রতিক্রিয়াশীল প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করা হচ্ছে। এটা আমাদের জন্য অশনি সংকেত।

No comments

Powered by Blogger.