ন্যাশনাল ব্যাংক টুইন টাওয়ার নির্মাণ, সুরক্ষায় অব্যবস্থা আর তদারকির অভাবে ধস

রাজধানীর সুন্দরবন হোটেলের পাশের নির্মাণাধীন ভবনের
জন্য খোঁড়া বিশাল গর্তের কারণে বৃহস্পতিবার রাতেও দুই
দফায় ধস নামে। এতে ভবনের উত্তর-পূর্ব কোণের কয়েকটি
বিলবোর্ড ভেঙে পড়ে। গতকাল তোলা ছবিl প্রথম আলো
চারদিকে পর্যাপ্ত সুরক্ষা ও নিরাপত্তাব্যবস্থা (শোর পাইলিং) না থাকা, পাইলিং নকশা অনুসরণ না করা এবং নির্মাণকাজে উপযুক্ত তদারকির অভাবে সোনারগাঁও ক্রসিং-সংলগ্ন জমিতে ন্যাশনাল ব্যাংক টুইন টাওয়ার নির্মাণস্থলের আশপাশের অংশ ধসে পড়েছে। দুর্ঘটনার পর গঠিত রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) তদন্ত কমিটি সূত্র এ কথা জানিয়েছে।
গত বুধবার সকালে ভবন নির্মাণস্থলের পাশের সুন্দরবন হোটেলের সীমানাপ্রাচীর, ভূগর্ভস্থ তলার নিচের অংশবিশেষ ও একটি সড়কের একাংশ ধসে পড়ে। বৃহস্পতিবার রাতে দুই দফায় ধসের ঘটনায় উত্তর-পূর্ব অংশের (সার্ক ফোয়ারা ও পান্থপথ) ফুটপাতে ফাটল ধরে।
রাজউকের তিন সদস্যের কমিটি দুই দিন ধরে কাজ করছে। কমিটির একজন সদস্য গতকাল শুক্রবার প্রথম আলোকে বলেন, পাইলিং নকশা সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয়নি, পাইলিংয়ের গভীরতাও হয়তো পর্যাপ্ত ছিল না। নিরাপত্তাবেষ্টনীতে পর্যাপ্ত ইস্পাত বা গাছের গুঁড়ি পোঁতা হয়নি।
তবে কমিটির প্রধান ও রাজউকের প্রধান প্রকৌশলী হাফিজুর রহমান মুন্সি এ বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দিতে অপারগতা জানিয়ে বলেন, ‘উপযুক্ত সুরক্ষা ও নিরাপত্তাব্যবস্থা না থাকলে যেকোনো ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে এ ধরনের ধসের ঘটনা ঘটতে পারে।’
১২ তলা টুইন টাওয়ার নির্মাণের জন্য কয়েক মাস আগে থেকেই তোড়জোড় চলছিল। মালিক বা নির্মাণকারীরা নকশা অনুমোদনকারী কর্তৃপক্ষ রাজউককে বিষয়টি কখনোই অবহিত করেনি। গত ফেব্রুয়ারিতে রাজউকের পক্ষ থেকে ন্যাশনাল ব্যাংক কর্তৃপক্ষকে অবহিতও করা হয়। রাজউকের কর্মকর্তা এ জেম এম শফিউল হান্নান প্রথম আলোকে বলেন, টুইন টাওয়ার অনুমোদনের সময় ‘ইনডেমনিটি বন্ড’ বা মুছলেকা ছিল। তাতে বলা হয়েছিল, কাজ শুরুর আগে কাজের সময়কালসহ যাবতীয় বিষয় রাজউককে অবহিত করতে হবে। এ ছাড়া নির্মাণের সময় আশপাশের কোনো ভবন বা রাস্তাঘাটের ক্ষয়ক্ষতি হলে তার দায়ভার ভবন মালিক ও নির্মাণপ্রতিষ্ঠানকেই নিতে হবে। ক্ষতিপূরণ বহনও করবে তারা।
গতকাল ঘটনাস্থলে ন্যাশনাল ব্যাংকের দায়িত্বশীল কোনো কর্মকর্তাকে পাওয়া যায়নি। এই দুর্ঘটনার জন্য বৃহস্পতিবার রাজউক ন্যাশনাল ব্যাংক ও নির্মাতাপ্রতিষ্ঠান এম এস কনস্ট্রাকশনের বিরুদ্ধে মামলা করে। তারপর থেকে নির্মাণ প্রকল্পের পরিচালক আখতারুল আলমকে পাওয়া যাচ্ছে না।
দ্রুত পর্যাপ্ত বালু ফেলা প্রয়োজন: গতকাল বেলা ১১টার দিকে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক ঘটনাস্থলে এসে বালু ফেলাসহ যাবতীয় কাজে ন্যাশনাল ব্যাংকের অসহযোগিতার সমালোচনা করেন। তিনি বলেন, ‘আমি মেয়র হয়ে যদি রাত দুইটা পর্যন্ত থাকতে পারি, ন্যাশনাল ব্যাংকের কোনো কর্মকর্তা নেই কেন? ন্যাশনাল ব্যাংকের কোনো সিনিয়র ম্যানেজমেন্ট প্রথম দিন প্রথম দুই ঘণ্টা ছাড়া গত দুই দিন ছিলই না। এটা তাদের দায়িত্ব।’
ঘটনাস্থলে ফায়ার সার্ভিস কর্মকর্তা, উত্তর সিটি করপোরেশন ও রাজউকের প্রকৌশলীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সুন্দরবন হোটেলের পাশের অংশটিতে আপাতত কোনো দুর্ঘটনার আশঙ্কা নেই। বসুন্ধরা শপিং মলের উল্টো পাশের যে অংশে পাইলিং করা হচ্ছে, সে জায়গাও আশঙ্কাজনক অবস্থায় আছে। বৃষ্টি হলে অংশটি ধসে যেতে পারে।
বৃহস্পতিবার রাতে নতুন যে জায়গায় ধসের ঘটনা ঘটে, সেখানে পর্যাপ্ত বালু ফেলা উচিত বলে উপস্থিত কর্মকর্তারা জানান। তাঁদের মতে, পুরো গর্তে অন্তত দেড় হাজার ট্রাক বালু ফেলা উচিত। কিন্তু গতকাল বিকেল পর্যন্ত ৮০০ ট্রাকের মতো বালু ফেলা সম্ভব হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.