সড়ক দখল করে নিরাপত্তা ফটক by আনোয়ার পারভেজ

বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারের নিরাপত্তা ফটক
নির্মাণের জন্য রাস্তা খুঁড়ে ভিত্তি স্থাপন করা হয়েছে।
গত বৃহস্পতিবার সকালে তোলা ছবি l প্রথম আলো
বগুড়া শহরের ফতেহ আলী বাজারে ব্যস্ততম সড়ক দখল করে নির্মাণ করা হচ্ছে নিরাপত্তা ফটক। বগুড়া পৌরসভা থেকে বাজারের তদারকি ও দেখভাল করা হলেও পৌর কর্তৃপক্ষ ও সওজকে না জানিয়ে বগুড়া-৬ (সদর) আসনের সাংসদ নুরুল ইসলাম ওমর জেলা পরিষদের বরাদ্দের টাকায় এটি নির্মাণ করছেন।
পৌর কর্তৃপক্ষের দাবি, ফটকটি নির্মাণ করা হলে পূর্ব বগুড়ার সঙ্গে শহরের সড়ক যোগাযোগ বিঘ্নিত হবে।
জাতীয় পার্টির সাংসদ নুরুল ইসলাম ফতেহ আলী বাজার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি। তিনি বাজারের একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানেরও মালিক। ওই কাজ বন্ধে এক সপ্তাহ আগে পৌরসভা থেকে জেলা পরিষদকে চিঠি দেওয়া হলেও কাজ অব্যাহত রয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ফটক নির্মাণে জেলা পরিষদ থেকে সাড়ে তিন লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। গত বুধবার রাতে বাজারের প্রবেশপথে গিয়ে দেখা গেছে, দোকান মালিক সমিতির নেতাদের উপস্থিতিতে শ্রমিকেরা ফটক নির্মাণের কাজ করছেন। ইট-সিমেন্টের পাকা দেয়াল তুলে কলাপসিবল গেট নির্মাণের কাজ চলছে। বৃহস্পতিবার সকালে বাজার করতে আসা চেলোপাড়া এলাকার আবদুস সবুর বলেন, চার রাস্তার সংযোগস্থলে এভাবে বাজারের স্থায়ী গেট নির্মাণ করা হলে যানজটে একসময় এ রাস্তা দিয়ে চলাচল অসম্ভব হয়ে পড়বে। ভবিষ্যতে সড়ক প্রশস্তকরণ দরকার হলে ফটকের কারণে তা সম্ভব হবে না।
ফতেহ আলী বাজারের দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হাফিজার রহমান বলেন, শহরের প্রধান ও সবচেয়ে বড় বাজার এটি। এখানে দুই শতাধিক দোকান রয়েছে। প্রতিদিন কোটি টাকার কেনাবেচা হয়। কিন্তু প্রবেশপথ অরক্ষিত থাকায় রাতে বাজারের কোনো নিরাপত্তা নেই। পৌরসভাকে বলেও কোনো লাভ হয়নি। সাংসদের একাধিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে বাজারে। এ কারণে দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হিসেবে সাংসদকে অনুরোধ করে প্রবেশপথে এই নিরাপত্তা ফটক নির্মাণ করা হচ্ছে। সাংসদ নিজে উপস্থিত থেকে ২২ মে কাজের ভিত্তি স্থাপন করেছেন।
যোগাযোগ করা হলে সাংসদ নুরুল ইসলাম বলেন, বাজারে কয়েক শ দোকান ও ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছাড়াও ফতেহ আলী মাজারকে ঘিরে বার্ষিক ওরসে লাখো মানুষের ভিড় হয়। অথচ রাত নামলেই বাজারে কোনো নিরাপত্তা থাকে না। এ কারণে বাজারের উন্নয়নে জেলা পরিষদের টাকায় প্রবেশপথে নিরাপত্তা ফটক নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি দাবি করেন, সড়ক খুঁড়ে ভিত্তিস্থাপন করা হয়েছে মনে হলেও নির্মাণকাজ শেষে সড়কের যানবাহন চলাচলে কোনো সমস্যা হবে না। তিনি আরও বলেন, ভবিষ্যতে সড়ক প্রশস্তকরণের প্রয়োজন পড়লে দুই পাশে অনেক দোকানই ভাঙা পড়বে। যখন সমস্যা হবে, তখন দেখা যাবে, আপাতত উন্নয়ন হোক।
বগুড়া পৌরসভার প্যানেল মেয়র আমিনুল ফরিদ বলেন, ওই ফটক নির্মাণ করতে গিয়ে বাজারের সামনের রাস্তার বেশ কিছু অংশ দখল করা হয়েছে। ওই রাস্তাটি সাতমাথা-গালাপট্টি-ফতেহ আলী বাজার, থানামোড়-চেলোপাড়া, নওয়াববাড়ি সড়ক-চেলোপাড়া চারটি সড়কের সংযোগস্থল ও জেলা শহরের সঙ্গে পূর্ব বগুড়ার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র রাস্তা। ফটক নির্মাণ বন্ধের জন্য জেলা পরিষদকে চিঠি দেওয়া হয়েছে।
বগুড়া জেলা পরিষদের প্রধান নির্বাহী আনওয়ার হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, সাংসদ নুরুল ইসলামের নিজস্ব বরাদ্দ থেকে নিরাপত্তা ফটক নির্মাণ করা হচ্ছে। তিনি যেখানে দেখে দিয়েছেন, সেখানেই কাজ শুরু করা হয়েছে। কিন্তু পৌরসভা থেকে আপত্তি জানিয়ে চিঠি দেওয়ায় আপাতত কাজ বন্ধের জন্য জেলা পরিষদের প্রকৌশল শাখাকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। ওই নির্দেশ লঙ্ঘন করে রাতে কাজ চালানোর কথা নয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।
জেলা পরিষদের প্রকৌশলী সলেমান আলী রাতের বেলা কাজ চলার বিষয়টি এড়িয়ে গিয়ে বলেন, বাজারের ফটক নির্মাণে সাড়ে তিন লাখ টাকা ব্যয় হচ্ছে।
সওজ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সড়ক দখল করে বাজারের ফটক নির্মাণের খবর পেয়ে একজন প্রকৌশলীকে সরেজমিনে তদন্তের জন্য সেখানে পাঠানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.