বিচার বিভাগকে পাশ কাটিয়ে কোনো কাজ নয় -নির্বাহী বিভাগের উদ্দেশে প্রধান বিচারপতি

প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার (মাঝে) হাতে
শ্রদ্ধা স্মারক তুলে দিচ্ছেন বিচারপতি নাজমুন আরা
সুলতানা। পাশে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক l প্রথম আলো
বিচার বিভাগকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য সব ক্ষেত্রে আইন মন্ত্রণালয়ের সহযোগিতা চেয়েছেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা। গতকাল শনিবার এক সংবর্ধনা সভায় তিনি বলেন, ‘বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের একটি অঙ্গ। একে পাশ কাটিয়ে কেউ যেন কাজ না করে।’
বাংলাদেশ মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশন আয়োজিত সংবর্ধনা সভায় গতকাল এ কথা বলেন প্রধান বিচারপতি। রাজধানীর বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মিলনায়তনে এ সভার আয়োজন করা হয়।
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আমরা বিচারকেরা ট্রেড ইউনিয়নের মতো দাবি-দাওয়া নিয়ে হাজির হব না। বিচার বিভাগ রাষ্ট্রের একটা অঙ্গ। এটাকে বাইপাস (পাশ কাটিয়ে) করে কেউ যেন কাজ না করে। আমরা চাই নির্বাহী বিভাগের সঙ্গে সহযোগিতার ভিত্তিতে কাজ করতে।’ আইনমন্ত্রীর উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আপনি তো আমাদের পরিবারের সদস্য। আপনি জানেন যে আমাদের কাজ করতে হয় বেশ কিছু প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে। তবে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, মানমর্যাদা রক্ষার্থে কিছু ন্যায্য দাবি বিচারকদের আছে। এ ব্যাপারে যদি কিছু বলে থাকি আমি, কাউকে আঘাত করার জন্য আজ পর্যন্ত কিছু বলিনি।’ তিনি বলেন, ‘আমি বিচার বিভাগের প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দেওয়ার জন্য বলি। সরকারের বাকি দুটি অঙ্গের (নির্বাহী ও আইন বিভাগ) বিষয় আমরা কোনোভাবে অস্বীকার করছি না। এ দুই প্রতিষ্ঠান যা-ই করুক না কেন, বিচার বিভাগের সহযোগিতা ছাড়া প্রশাসনিক বা নির্বাহী বিভাগের কোনো কাজ কার্যকর করা সম্ভব নয়।’
বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহা বলেন, জনপ্রশাসনের লোকবলের তথ্যভান্ডার সব মন্ত্রণালয়ের কাছে আছে, কিন্তু বিচার বিভাগের লোকবলের তথ্যভান্ডার আইন মন্ত্রণালয়ে নেই। এ জন্য নিম্ন আদালতে শূন্য পদে লোক দিতে ছয় মাস লেগে যায়। এতে মামলাজট বাড়ে। তিনি বলেন, পদ শূন্য হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সেগুলো পূরণ করতে হবে।
প্রধানমন্ত্রীর ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ’ কার্যক্রমের প্রশংসা করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘বিচার বিভাগের ডিজিটালাইজেশনে আমরা বিচারকেরা পিছিয়ে আছি।’ আইনমন্ত্রীকে উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘আগামী তিন মাসের মধ্যে মাঠপর্যায়ের প্রত্যেক বিচারককে ল্যাপটপ দেওয়া হবে। তখন আর হাতে নয়, কম্পিউটারে রায় লেখা হবে। এ ছাড়া ভয়েস রেকর্ডিংয়ের মাধ্যমে সাক্ষ্য গ্রহণ করা হলে হাতে লেখা নথি কারসাজির ঘটনাও ঘটবে না।’
নারী বিচারকদের দাবির পরিপ্রেক্ষিতে প্রধান বিচারপতি বলেন, সুপ্রিম কোর্টে ডে-কেয়ার সেন্টার চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। শুধু বিচারক নন, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য এ সুবিধা থাকবে। তবে সারা দেশে ডে-কেয়ার সেন্টার চালুর বিষয়টি বাস্তবসম্মত নয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিচার বিভাগে নারীদের যোগদান বাড়ছে উল্লেখ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, যেখানে ইংল্যান্ডে নারী জজ ১০ শতাংশ, বাংলাদেশে ১৯ শতাংশ নারী বিচারক রয়েছেন। সেটা বাড়তে বাড়তে হয়তো খুব শিগগির ৫০ শতাংশ হয়ে যাবে।
সংবর্ধনা সভায় প্রধান বিচারপতির হাতে শ্রদ্ধা স্মারক তুলে দেন মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের প্রতিষ্ঠাতা ও আপিল বিভাগের বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। বক্তব্য দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, আপিল বিভাগের আরেক সদস্য বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন প্রমুখ। মহিলা জজ অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নুরুন্নাহার ওসমানীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় স্বাগত বক্তব্য দেন আয়োজক সংগঠনের মহাসচিব উম্মে কুলসুম। অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন আইনসচিব আবু সালেহ শেখ মো. জহিরুল হক, সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার সৈয়দ আমিনুল ইসলাম, প্রধান বিচারপতির স্ত্রী সুষমা সিনহা প্রমুখ।

No comments

Powered by Blogger.