উঁকি দিল সূর্য, শুরু হলো উৎসব -এইচএসবিসি-প্রথম আলো ভাষা প্রতিযোগ by আরিফুল হক

রংপুরে ভাষা প্রতিযোগে ফলাফল ঘোষণার পর
অতিথিদের সঙ্গে বিজয়ীরা l ছবি: প্রথম আলো
বিদ্যালয় ভবনের সামনে বিশাল খোলা মাঠ। মাঠে টানানো হয়েছে শামিয়ানা। উৎসব শুরুর আগে সকালের আকাশে ছিল কালো মেঘ। এই বুঝি বৃষ্টি নামে! শিক্ষার্থীদের সরব উপস্থিতি মনে করিয়ে দিল, মেঘ দেখে কেউ করিস না ভয়, আড়ালে তার সূর্য হাসে। শিক্ষার্থীদের উৎসবি মেজাজ দেখেই বুঝি পালিয়ে গেল মেঘেরা। উঁকি দিল সূর্য। গতকাল শুক্রবার রংপুরের ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রংপুর জিলা স্কুল প্রাঙ্গণে এমন পরিবেশেই বসেছিল এইচএসবিসি-প্রথম আলো ভাষা প্রতিযোগের আঞ্চলিক উৎসবের আসর। এ উৎসবে সহযোগিতা করছে গণসাক্ষরতা অভিযান।
শুরুর অনেক আগে থেকেই শিক্ষার্থীরা জড়ো হতে থাকে। শিক্ষার্থীদের সঙ্গে অনেক অভিভাবকও এসেছিলেন। এই উৎসবে রংপুর, দিনাজপুর, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও, নীলফামারী, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম ও লালমনিরহাট জেলার ১০৮ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ৮৬০ জন শিক্ষার্থী অংশ নেয়।
সকাল সাড়ে নয়টায় বন্ধুসভার সদস্যদের জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মধ্য দিয়ে শুরু হয় উৎসব। জাতীয় পতাকা উত্তোলন করে উৎসবের উদ্বোধন করেন রংপুর জিলা স্কুলের প্রধান শিক্ষক এ আর মিজানুর রহমান। একই সঙ্গে ভাষা প্রতিযোগের পতাকা উত্তোলন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম। এরপর শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিয়ে ভাষা প্রতিযোগের স্মারক বেলুন উড়িয়ে দেন অতিথিরা।
উদ্বোধনী বক্তব্যে এ আর মিজানুর রহমান বলেন, শিক্ষার্থীদের নিয়ে প্রথম আলো নানা ধরনের কাজ করে চলেছে। বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মানোন্নয়নে ভূমিকা রাখছে। এ উৎসবের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের মাতৃভাষার চর্চা বেগবান হবে।
৪০ মিনিটের মূল্যায়ন পরীক্ষা শেষে প্রশ্নোত্তর পর্ব শুরু হয়। প্রশ্নোত্তর পর্বের মধ্যে চ্যানেল নাইন আয়োজিত পাওয়ার ভয়েজের শিল্পী শামীম গান গেয়ে শোনান।
এই পর্বে অতিথিরা মঞ্চে উপস্থিত থেকে শিক্ষার্থীদের নানা প্রশ্নের উত্তর দেন। এ সময় ভালো ও বুদ্ধিদীপ্ত প্রশ্ন করার জন্য অনেক শিক্ষার্থীর হাতে বই তুলে দেওয়া হয়।
প্রশ্নোত্তর পর্বটি প্রাণবন্ত করে তোলেন ভাষা প্রতিযোগ-২০১৫-এর সমন্বয়ক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক তারিক মনজুর। এ সময় শিক্ষার্থীদের প্রশ্নের উত্তর দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মোহাম্মদ আজম, ভাষাবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক তুহিন ওয়াদুদ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক রাহেল রাজিব, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মামুন অর রশীদ। প্রথমা প্রকাশনের প্রধান সমন্বয়কারী জাফর আহমদ অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন।
প্রতিযোগিতায় বিজয়ী শিক্ষার্থীরা ঢাকায় অনুষ্ঠেয় জাতীয় উৎসবে অংশ নেবে। সব বিভাগের মধ্যে সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে সেরাদের সেরা হয়েছে রংপুর জিলা স্কুলের সপ্তম শ্রেণির শিক্ষার্থী তন্ময় কুমার সরকার। বিজয়ীদের সনদ, পদক ও বই দিয়ে পুরস্কৃত করেন অতিথিরা। বন্ধুসভার বন্ধুরা পরিয়ে দেন স্মারক টি-শার্ট। পুরো অনুষ্ঠানে সহযোগিতা করেছে বন্ধুসভা।
প্রতিটি বিভাগে ১৫ জন করে (পাঁচজন প্রথম, পাঁচজন দ্বিতীয় ও পাঁচজন তৃতীয়) ৬০ জন বিজয়ী হয়েছে।
ক বিভাগের প্রথম পাঁচজন হলো রংপুর জিলা স্কুলের সাজিদ-উল করিম, সৈয়দ লাদীদুল ইসলাম ও মাহমুদুল হাসান, রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের তাহসীন সুবাহ, মিঠাপুকুর আইডিয়াল পাবলিক স্কুলের জুহায়ের তাজবিদ।
খ বিভাগের প্রথম পাঁচজন হলো রংপুর জিলা স্কুলের তন্ময় কুমার সরকার, আ ন ম তৌফিকুজ্জামান, রংপুর সরকারি বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের সামিহা তাসনিম, মিঠাপুকুর আইডিয়াল স্কুলের আতিকা জাহান, রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের নাঈম ইসলাম।
গ বিভাগের প্রথম পাঁচজন হলো রংপুর জিলা স্কুলের গোলাম রাব্বী, মাহমুদুল হাসান ও শাহরিয়ার আল মোহাইমিনুল, রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল ও কলেজের পার্থ সরকার, পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ার কাজী শাহাবুদ্দিন বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও কলেজের সাদিয়া আফরিন।
ঘ বিভাগের প্রথম পাঁচজন হলো রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক ও কলেজের রেফায়া বিনতে হামিদুর, সৈয়দপুর সরকারি কারিগরি কলেজের মিনকিস নাহার, রংপুর ক্যান্টনমেন্ট স্কুল ও কলেজের পৃথ্বীরাজ দাস, মিঠাপুকুর হেনা মেমোরিয়াল কলেজের উম্মে খাদিজা, রংপুর সরকারি কলেজের রাকিব হাসান।

No comments

Powered by Blogger.