কমেছে পাসের হার, জিপিএ-৫

এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় এবার পাসের হার ও জিপিএ-৫ দুটোই কমেছে। ৮টি সাধারণ বোর্ডসহ ১০ শিক্ষা বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৭.০৪ শতাংশ। গত বছর যা ছিল ৯১.৩৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পাওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও কমেছে। গত বছরের তুলনায় জিপিএ-৫ কমেছে ৩০ হাজার ৩৭৫ জন। এ বছর মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ১ লাখ ১১ হাজার ৯০১ জন। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ১ লাখ ৪২ হাজার ২৭৬ জন। এ বছর শতভাগ পাস করেছে ৫ হাজার ৯৫টি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ৬ হাজার ২১০টি। এবার ফলে সব সূচকেই অবনতি লক্ষ্য করা গেছে। কয়েক বছর ধরে পাস ও জিপিএ-৫ পাওয়ার শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও এবারই এতে ব্যতিক্রম। ৬০ দিনের মধ্যে পরীক্ষার ফল প্রকাশের বাধ্যবাধকতা থাকলেও এ বছর তিন দিন আগেই ফল প্রকাশ করা হয়েছে। নির্ধারিত সময়ের মধ্যে ফল দিতে পারায় সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ। গতকাল সচিবালয়ে ফল প্রকাশ করে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, এবছর এসএসসি পরীক্ষার সময় অস্বাভাবিক পরিস্থিতি ছিল। যা এর আগে কখনও আমরা দেখিনি। পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোটের লাগাতার হরতাল-অবরোধের কারণে অভূতপূর্ব ঘটনা ঘটেছে। হরতালের কারণে বারবার পরীক্ষা পেছাতে হয়েছে। এ জন্য শিক্ষার্থীরা কোন পরীক্ষা কবে হবে- এ বিষয়টি নিয়ে অন্ধকারে ছিল। এ জন্য তাদের প্রস্তুতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পরীক্ষার ফল কিছুটা খারাপ হওয়ার পেছনে তিনি এটিকেই কারণ হিসেবে উল্লেখ করেন। এর আগে সকাল ১০টায় সকল শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যানদের সঙ্গে নিয়ে শিক্ষামন্ত্রী পরীক্ষার ফলাফল গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন। সকাল ১০টা ১৭ মিনিটে প্রধানমন্ত্রী তার ল্যাপটপে পরীক্ষার ফলাফল দেখেন।
ফল বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সব বোর্ডের শিক্ষার্থীদের মধ্যে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, উত্তীর্ণের সংখ্যা, পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক দিয়ে ভাল করেছে ছেলেরা। ছেলেদের পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪১ এবং মেয়েদের ৮৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। ৬০ হাজার ৩৭০ জন ছেলে পেয়েছে জিপিএ-৫, অন্যদিকে মেয়েদের মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫১ হাজার ৫৩১ জন। পাসের হার ও জিপিএ-৫ এর সংখ্যার পাশাপাশি এবার কমেছে শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে। এই বোর্ডে এ বছর দাখিল পরীক্ষায় শতভাগ পাস করেছে ২ হাজার ৫২৩টি প্রতিষ্ঠান। আর সবচেয়ে কম রয়েছে সিলেট শিক্ষা বোর্ডে। অন্যদিকে একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি (শূন্য পাস) শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এ বছর ৪৭টি। গত বছর এই সংখ্যাটি ছিল ২৪। গতবারের তুলনায় এবার শূন্য পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা বেড়েছে ২৩টি। সবচেয়ে বেশি শূন্য পাস করেছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ড থেকে। এই বোর্ডে শূন্য পাসের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৩৮টি।
সাধারণ শিক্ষা বোর্ড: ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে পাসের হার, জিপিএ-৫, পাস করার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাসহ সব সূচকের কমেছে। এবার ৮টি বোর্ডে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ১১ লাখ ৮ হাজার ৬৮৩ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৯ লাখ ৬১ হাজার ৪০৫ জন। ৮টি বোর্ডে গড় পাসের হার ৮৬ দশমিক ৭২ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৯২ দশমিক ৬৭ শতাংশ। সাধারণ বোর্ডগুলোতে মোট জিপিএ-৫ পেয়েছে ৯৩ হাজার ৬৩১ জন। যা গত বছর ছিল ১ লাখ ২২ হাজার ৩১৩ জন শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীর সংখ্যা এ বছর কমেছে ২৮ হাজার ৬৮২ জন। ৮টি শিক্ষা বোর্ডের মধ্যে পাসের হারে গত বারের মতো এবারও শীর্ষে রয়েছে রাজশাহী শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৯৪ দশমিক ৯৭ শতাংশ। সার্বিকভাবে পাসের হারে সবার শেষে রয়েছে সিলেট শিক্ষা বোর্ড। এই বোর্ডে পাসের হার ৮১ দশমিক ৮২ শতাংশ।
মাদরাসা বোর্ড: মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে দাখিল পরীক্ষায় এবছর পরীক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৫৪ হাজার ৬২২ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ২ লাখ ২৯ হাজার ৬৬৬ জন। জিপিএ-৫ পেয়েছে ১১ হাজার ৩৩৮ জন। যা গতবারের তুলনায় ২ হাজার ৬৭৫ জন কম। গড় পাসের হার ৯০ দশমিক ২০ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৮৯ দশমিক ২৫ শতাংশ। সার্বিকভাবে পাসের দিক দিয়ে এই বোর্ড দ্বিতীয়।
কারিগরি বোর্ড: কারিগরি শিক্ষা বোর্ডে এ বছর অংশগ্রহণকারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ১ লাখ ১০ হাজার ২৮৯ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৯১ হাজার ৪৫৭ জন। পাসের হার ৮৩ দশমিক ০১ শতাংশ। যা গত বছর ছিল ৮১ দশমিক ৯৭ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ৯৩২ জন। এবার বেড়েছে ৯৮২ জন।
বিজ্ঞান বিভাগের ফল ভাল: বিষয়ভিত্তিক দিক দিয়ে এবছর ৮টি সাধারণ শিক্ষা বোর্ডে সবচেয়ে ভাল ফল করেছে বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা। এই বিভাগে পাসের হার ৯৬ দশমিক ৩৫ শতাংশ। এছাড়া ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পাসের হার ৮৬ দশমিক ৯৩ শতাংশ। মানবিক বিভাগে ৭৯ দশমিক ৩২ শতাংশ। বিজ্ঞান বিভাগে কম সংখ্যক শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও জিপিএ-৫ পেয়েছে বেশি সংখ্যক। এই বিভাগে মোট পরীক্ষার্থী ছিল ৩ লাখ ২১ হাজার ২১৪ জন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৮৬ হাজার ২৭৫ জন। ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে ৩ লাখ ৫৮ হাজার ১৬৭ জন। এর মধ্যে জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬ হাজার ১৪৯ জন। মানবিক বিভাগ থেকে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ৪ লাখ ২৯ হাজার ৩০২ জন শিক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ নিলেও জিপিএ-৫ পেয়েছে মাত্র ১ হাজার ২০৭ জন।
ছেলেরা ভাল করেছে: এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষায় সার্বিক ফলাফলে মেয়েদের তুলনায় ভাল করেছে ছেলেরা। পরীক্ষায় অংশগ্রহণ, পাসের হার ও জিপিএ-৫ প্রাপ্তির দিক থেকে এগিয়ে আছে তারা। সার্বিক ফলাফল বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, এবছর পরীক্ষায় মোট ৭ লাখ ৬১ হাজার ৬৩০ জন ছেলে অংশগ্রহণ করে। এর মধ্যে পাস করেছে ৬ লাখ ৬৫ হাজার ৭৬৪ জন। তাদের পাসের হার ৮৭ দশমিক ৪১ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৬০ হাজার ৩৭০ জন। অন্যদিকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণে মেয়েদের সংখ্যা ছিল ৭ লাখ ১১ হাজার ৯৬৪ জন। এর মধ্যে উত্তীর্ণ হয়েছে ৬ লাখ ১৬ হাজার ৮৫৪ জন। তাদের গড় পাসের হার ৮৬ দশমিক ৬৪ শতাংশ। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৫১ হাজার ৫৩১ জন।
দেশসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: প্রতিবারের মতো এবারও ৫টি ক্যাটিগরিতে দেশসেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নির্বাচিত করা হয়েছে। এবার প্রথম স্থান দখল করেছে রাজধানী ডেমরার শামসুল হক খান স্কুল অ্যান্ড কলেজ। দ্বিতীয় হয়েছে রাজধানীর রাজউক উত্তরা মডেল কলেজ, তৃতীয় স্থানে রয়েছে মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, চতুর্থ চট্টগ্রামের কলেজিয়েট স্কুল, পঞ্চম ভিকারুন নিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ।
শূন্য পাস প্রতিষ্ঠান: এবছর এসএসসি ও দাখিল পরীক্ষায় কমেছে শতভাগ পাস করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা। বেড়েছে শূন্য পাস প্রতিষ্ঠানের সংখ্যাও। একজন শিক্ষার্থীও পাস করেনি এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা রয়েছে ৪৭টি। এর মধ্যে সর্বাধিক ৩৮টি রয়েছে মাদরাসা শিক্ষা বোর্ডে। বাকি ৯টির মধ্যে দিনাজপুর বোর্ডে ৫টি, ঢাকা বোর্ডে ২টি ও যশোর বোর্ডে ২টি। আবার শতভাগ পাস শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা গতবারের চেয়ে এবার কমেছে। এবছর শতভাগ শিক্ষার্থী পাস করেছে এমন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান রয়েছে ৫ হাজার ৯৫টি। এর মধ্যে সর্বাধিক শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা মাদরাসা বোর্ডে ২ হাজার ৫২৩টি। সবচেয়ে কম শতভাগ পাস করা প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা সিলেট বোর্ডে।
বিদেশের প্রতিষ্ঠান: এসএসসি পরীক্ষায় বিদেশের আটটি কেন্দ্রে পাস ৯৭ করেছে দশমিক ৬৬ শতাংশ শিক্ষার্থী। জিপিএ-৫ পেয়েছে ৭২ জন। বিদেশের আটটি কেন্দ্রে অংশ নেয়া ২৯৯ শিক্ষার্থীর মধ্যে ২৯২ জন পাস করেছে, পাসের হার ৯৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। গত বছর বিদেশের সাতটি কেন্দ্র থেকে ৯৮ দশমিক ২৯ শতাংশ শিক্ষার্থী পাস করেছিল। সেই হিসাবে এবার বিদেশের কেন্দ্রে পাসের হার কমেছে শূন্য দশমিক ৬৩ শতাংশ। তবে বিদেশী আট কেন্দ্রের মধ্যে ছয়টি কেন্দ্র থেকে শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেছে। এরমধ্যে রয়েছে জেদ্দার বাংলাদেশ ইন্টারন্যাশনাল স্কুল, দোহার বাংলাদেশ মাশহুর-উল হক মেমোরিয়াল হাই স্কুল, আবুধাবির শেখ খলিফা বিন জায়েদ বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল, মানামার বাংলাদেশ স্কুল, রাসআল খেইমার বাংলাদেশ ইসলামিয়া স্কুল, ওমানের বাংলাদেশ স্কুল সাহাম। তবে দুটি কেন্দ্র থেকে শিক্ষার্থীরা শতভাগ পাস করেনি। এরমধ্যে রিয়াদের বাংলাদেশ অ্যাম্বাসি স্কুল ও ত্রিপলীর বাংলাদেশ কমিউনিটি স্কুল।
পুনঃনিরীক্ষণ:  প্রকাশিত ফলে যদি কোন শিক্ষার্থী অসন্তুষ্ট থাকে কিংবা ফল পুনঃনিরীক্ষণ করতে চায় সেজন্য বরাবরের মতো এবারও সুযোগ রেখেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। আগামী ৩১শে মে থেকে ৬ই জুন পর্যন্ত এসএসসি, দাখিল ও সমমানের পরীক্ষার ফল পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা যাবে। শুধু টেলিটক মোবাইল থেকে এই পুনঃনিরীক্ষণের আবেদন করা যাবে বলে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়। আবেদন করতে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে বোর্ডের নামের প্রথম তিন অক্ষর লিখে স্পেস দিয়ে রোল নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে বিষয় কোড লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। প্রতি বিষয় এবং প্রতিটি পত্রের জন্য ১২৫ টাকা ফি কাটা হবে। ফিরতি এসএমএসে আবেদন বাবদ কত টাকা কাটা হবে তা জানিয়ে একটি পিন নম্বর দেয়া হবে।
আবেদন করতে ইচ্ছুক হলে জঝঈ লিখে স্পেস দিয়ে ণঊঝ লিখে স্পেস দিয়ে পিন নম্বর লিখে স্পেস দিয়ে যোগাযোগের জন্য একটি মোবাইল নম্বর লিখে ১৬২২২ নম্বরে পাঠাতে হবে। যেসব বিষয়ে দুটি পত্র (যেমন- বাংলা, ইংরেজি) রয়েছে সেসব বিষয়ে একটি বিষয় কোডের বিপরীতে দুটি পত্রের জন্য আবেদন হিসেবে গণ্য হবে এবং ফি হিসেবে ২৫০ টাকা কাটা হবে। একই এসএমএসের মাধ্যমে একাধিক বিষয়ে আবেদন করা যাবে। সেক্ষেত্রে বিষয় কোড পর্যায়ক্রমে কমা (,) দিয়ে লিখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.