‘বাবুজি ভোট না আইলে দেশে শান্তি আইবো না?’ by ইমাদ উদ দীন

‘ভোট লইয়া আর কতদিন মারামারি হইব। দেশে কি নৌকা আর ধান ছড়ার ভোট আইবো না। বাবুজি ভোট না আইলে বুজি দেশে শান্তি আইবো না?’।
গত ২৯শে মার্চ জেলার জুড়ী উপজেলা উপনির্বাচনে বাগান এলাকার ভোটকেন্দ্রে সংবাদকর্মীদের কাছে দেশের চলমান অস্থিরতার খোঁজ-খবর নিতে গিয়ে এভাবেই প্রশ্ন রাখেন চা শ্রমিকরা। জেলার ৯২টি চা বাগানের মধ্যে জুড়ীতে রয়েছে ৯টি চা বাগান। এখন অবাধ তথ্য-প্রযুক্তির সুবাদে তারাও কাজের ফাঁকে দেশ-দুনিয়ার খবর রাখার সুযোগ পাচ্ছেন। অনেকেই জানান, সন্ধ্যার পর স্থানীয় বাজারগুলোতে বসেই টিভিতে সংবাদ দেখেই দেশ-দুনিয়ার খবর নেন। তথ্য এখন তাদের হাতের নাগালেই। তারা আরও জানালেন তাদের দৈনিক হাজিরা না বাড়লেও কষ্ট করে হলেও তাদের সন্তানদের লেখাপড়া চালিয়ে যাচ্ছেন। লেখাপড়া না শিখলে বাবুজি না খাইয়া মরতে হয়। বাবুজি আমরা মরছি আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম যাতে না মরে সে জন্য সরকারের কাছে বাগান এলাকায় প্রাথমিক ও মাধ্যমিক স্কুল চাই। দেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার প্রভাব পড়ছে প্রতিটি খাতে। চা ও রাবার শিল্পের রাজধানী হিসেবে খ্যাত মৌলভীবাজারের এ শিল্পগুলোতেও ব্যাপক প্রভাব পড়েছে। চা-পাতা ও রাবার সময়মতো ঢাকা ও চট্টগ্রামে না পাঠাতে পারায় অধিকাংশ বাগানের কাঁচামাল নষ্ট হচ্ছে। গত ৩ মাস ধরে আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন মালিকরা। শুষ্ক মওসুমে বাগানগুলোতে পাতা উত্তোলন কম হয় তারপরও যা সংগ্রহ হচ্ছে ও আগের স্টকে ছিল সেগুলোও ঢাকা ও চট্টগ্রামে না পাঠাতে পারায় আর্থিকভাবে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। আর আগত বর্ষা মওসুমেও দেশের রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যদি উৎপাদিত কাঁচামালগুলো চট্টগ্রাম ও ঢাকায় না পাঠানো যায় তাহলে বাগানগুলোও অচল হয়ে পড়বে। কারণ বর্ষা মওসুমই চা পাতা ও রাবারের কাঁচা মাল উৎপাদনের উৎকৃষ্ট সময়। নির্বাচনের দিন শ্রমিকদের সঙ্গে আলাপে এমনটি জানালেন তারা। নির্বাচন না হলে যে, দেশে শান্তি আসবে না আর চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতাও কমবে না এটা বুঝতে পেরেই তারা নির্বাচনের খোঁজ-খবর নিচ্ছেন। কারণ হরতাল-অবরোধের কারণেই তাদের আদি পেশার এ শিল্পটি প্রতিদিনই ক্ষতির শিকার হচ্ছে। জুড়ী উপজেলা উপনির্বাচনে বাগান এলাকার কেন্দ্রগুলোতেই ভোটারদের সরব উপস্থিতি দেখা গেলেও বস্তি বা শহর এলাকায় চোখে পড়ার মতো ভোটাররা একসঙ্গে ভোটকেন্দ্রে আসেননি। চা শ্রমিকরা যে উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে ভোট দিয়েছেন কিংবা ভোটকেন্দ্রে এসেছেন সেটা বাগান এলাকা ছাড়া অন্য কোথাও তেমন পরিলক্ষিত হয়নি। এমন কারণ জানতে অনেকের সঙ্গে আলাপ হয়। তারা অনেকেই জানালেন দেশের  চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার কোন সুন্দর সমাধান না হওয়ায় তারা রাজনীতি, রাজনীতিবীদ ও ভোটের উপর আস্থা রাখতে পারছেন না। এজন্য আগের মতো ভোটের প্রতিও মানুষের আগ্রহ থাকছে না। তারা মনে করেন, ভোট দিলেও যা, না দিলেও তা।  জুড়ীর মানিক সিং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে ৩৮৯১ জন ভোটারের মধ্যে সকাল ৮ থেকে ৯টা ৫ মিনিট পর্যন্ত ভোট পড়ে মাত্র ১৫৫টি। এর কারণ হিসেবে এ কেন্দ্রে ভোট দিতে আসা হামিদপুর গ্রামের বয়োবৃদ্ধ সাবেক ইউপি সদস্য হাজী মো. রেজান আলী বলেন, দেশে হানাহানি, মারামারি, খুন, গুম আর হরতাল-অবরোধ থামাতে সকলের অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচনের প্রয়োজন। এ সময় তার কথার সঙ্গে সায় দিলেন আরও অনেকেই। সৈকত সিংহ পাল বলেন, সকলের  অংশগ্রহণে জাতীয় নির্বাচন না হলে দেশে বয়ে চলা অশান্তি দূর হবে না। আমরা বাগান এলাকার লোকজন সবসময়ই শান্তিপ্রিয়, তাই আমরা শান্তির পক্ষে। আমরা ভোট পছন্দ করি, তাই এই উপনির্বাচনে বাগানের বেশির ভাগ ভোটার তাদের ভোট দিচ্ছেন। তাদের সরব উপস্থিতিও লক্ষ্যণীয়। এ সময় তার কথার সঙ্গে সায় দিলেন অঙ্গন নায়েক, রাজকুমারসহ অনেকেই। জুড়ী উপজেলা উপনির্বাচনে ভোট পড়েছে ৫৬ দশমিক ৯৮ শতাংশ। ভোটের আগে যে রকম উৎসাহ-উদ্দীপনা দেখা গিয়েছিল ভোটের দিন ভোটারের উপস্থিতি সে রকম লক্ষ্য করা যায়নি। জুড়ী উপজেলা উপনির্বাচনে প্রয়াত চেয়ারম্যান এমএ মুহিত আসুকের স্ত্রী গুলশানআরা মিলি ২২ হাজার ৪৫৫ ভোট পেয়ে সিলেট বিভাগের প্রথম মহিলা চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। জুড়ী উপজেলার দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান মুক্তিযোদ্ধা এমএ মুহিত আসুকের মৃতুতে আসনটি শূন্য হয়।

No comments

Powered by Blogger.