ভোটে থাকতে আপিল মিন্টু-পিন্টুর

ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের কাজ শেষ করেছে নির্বাচন কমিশন। বুধবার মেয়র পদপ্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের পর গতকাল কাউন্সিলর প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র বাছাই শেষ হয়েছে। প্রাথমিক বাছাইয়ের পর  ১২১৪ জনকে কাউন্সিলর পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার জন্য যোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। এরমধ্যে সংরক্ষিত নারী কাউন্সিল পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করবেন ২৩৫ জন। যাচাই বাছাইয়ের শেষ দিনেও গতকাল সরকার সমর্থিত প্রার্থীদের বিশেষ সুবিধা দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া উত্তর সিটির রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে এক প্রার্থীকে আটক করেছে শেরেবাংলানগর থানা পুলিশ। অপরদিকে রিটার্নিং অফিসারের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে আপিল করেছেন বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবদুল আওয়াল মিন্টু, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক নাসির উদ্দিন পিন্টুসহ ২২ জন। ব্যবসায়ী আবদুল আউয়াল মিন্টু ঢাকা উত্তরের প্রার্থী হওয়ার জন্য মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। আর নাসিরউদ্দিন আহম্মেদ পিন্টু মনোনয়নপত্র দিয়েছিলেন ঢাকা দক্ষিণে। দক্ষিণে মেয়র পদে রেজাউল করিম চৌধুরীও তার প্রার্থিতা ফিরে পেতে ঢাকার বিভাগীয় কমিশনারের কাছে আপিল করেছেন। শনিবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত আপিল গ্রহণ করা হবে। বিভাগীয় কমিশনারই ঢাকা সিটি নির্বাচনের আপিল কর্তৃপক্ষ। বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের কর্মকর্তা শহীদুল ইসলাম জানান, মেয়র পদে তিনজনসহ কাউন্সিলর পদের মনোনয়নপত্র বাতিল হওয়া ২২ জন আপিল করেছেন। বিভাগীয় কমিশনার মো. জিল্লার রহমান আগামী ৪ঠা এপ্রিল বিকাল সাড়ে ৪টার পর আপিল শুনানি করবেন। মিন্টুর ছেলে তাফসির আউয়াল সাংবাদিকদের বলেন, বাবার পক্ষে আপিল আবেদন জমা দেয়া হয়েছে। শনিবার শুনানি হবে। বুধবার মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের প্রথম দিনে মিন্টুসহ দুই মেয়র পদপ্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করেন উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলম। প্রার্থীর সমর্থনকারী আব্দুর রাজ্জাক উত্তর সিটি করপোরেশনের ভোটার না হওয়ায় মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল করার কথা জানান রিটার্নিং কর্মকর্তা। এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি মিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হলেও উত্তরে তার বড় ছেলে তাবিথ আউয়ালের মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত পিন্টুর মনোনয়নপত্র বাতিল হয় মামলা সংক্রান্ত পর্যাপ্ত তথ্য না দেয়ায়। আর আয়কর রিটার্নের নথি জমা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় রেজাউল করিম চৌধুরীর মনোনয়নপত্র বাতিল ঘোষণা করেন দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা মিহির সারওয়ার মোর্শেদ। বাছাইয়ের পর মেয়র পদে ঢাকা উত্তরে ১৯ জন, দক্ষিণে ২৩ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র  বৈধ করেছে রিটার্নিং কর্মকর্তা। নির্বাচন কর্মকর্তারা জানান, মনোনয়নপত্র বাতিল হলে বাছাইয়ের পর তিন দিনের মধ্যে আপিলের বিধান রয়েছে। আপিল কর্তৃপক্ষ তিন দিনের মধ্যে তা নিষ্পত্তি করবে। তফসিলে ৯ই এপ্রিল পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের সময় রেখেছে নির্বাচন কমিশন। আপিল নিষ্পত্তি শেষে মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের পর প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের নিয়ে ২৮শে এপ্রিল ঢাকা ও চট্টগ্রামের তিন সিটিতে ভোট হবে।
রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গতকাল রাতে জমাকৃত মনোনয়নপত্র বাছাই শেষ হয়েছে। আজ খসড়া প্রার্থী তালিকা প্রকাশ করা হবে।
উত্তর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কার্যালয় সূত্র জানায়, সিটি নির্বাচনে ৩৬টি সাধারণ ওয়ার্ডে ৪৯৪ জন প্রার্থী মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে ৪৭ জন কাউন্সিলর প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল হয়েছে। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৩৫ জন প্রার্থীর মধ্যে ২২ জন প্রার্থীর মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনী কর্মকর্তা নওয়াবুল ইসলাম জানান, দক্ষিণ সিটিতে ৬৩৬ জন সাধারণ কাউন্সিলর পদে মনোনয়নপত্র জমা দেন। এর মধ্যে ১০৩ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। সংরক্ষিত নারী কাউন্সিলর পদে ১৫১ জনের মধ্যে ৩১ জনের মনোনয়নপত্র বাতিল করা হয়। গতকাল দুপুরে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে রিটার্নিং অফিসার মিহির সারওয়ার মোর্শেদ বলেন, ব্যাংক, থানা, সিটি করপোরেশনসহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তর থেকে প্রার্থীদের ব্যাপারে তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে স্বচ্ছতার সঙ্গে আমরা বৈধ প্রার্থীদের নির্বাচনের জন্য যোগ্য ঘোষণা করেছি। ১০ই এপ্রিল তাদেরকে প্রতীক বরাদ্দ করা হবে। তিনি বলেন, অযোগ্য প্রার্থীরা নির্বাচনে অংশ নেয়ার জন্য আগামী ৩ দিনের মধ্যে ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার বরাবর আপিল করতে পারবেন। আপিলে যারা বৈধ বলে ঘোষিত হবেন তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পাবেন।
এদিকে গতকাল ঢাকা উত্তর সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয় থেকে এক কাউন্সিলর প্রার্থীকে আটক করেছে শেরেবাংলানগর থানা পুলিশ। আটককৃত ওই প্রার্থীর নাম সাইদুর রহমান। তিনি ঢাকা সিটি উত্তরের ২৮ নং ওয়ার্ডের জামায়াত সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী। গতকাল বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ঢাকা সিটি উত্তরের রিটার্নিং অফিসারের অস্থায়ী কার্যালয় থেকে মনোনয়নপত্র বাছাই চলাকালে তাকে আটক করা হয়। পুলিশের দাবি, সাইদুর রহমানের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা রয়েছে। তবে আটক কাউন্সিলর প্রার্থী সাইদুর রহমান তাৎক্ষণিক সাংবাদিকদের জানান, তার বিরুদ্ধে  কোন মামলা নেই। তার বিজয় নিশ্চিত জেনে প্রতিপক্ষের লোকজন তাকে নির্বাচন থেকে বিরত রাখতে ষড়যন্ত্র করছে। তার মনোনয়নপত্রও বাতিল করা হয়েছে। রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. শাহ আলম জানান, বৈধ ঘোষিত প্রার্থীরা তিন দিনের মধ্যে আপিল করতে পারবেন।
এদিকে মনোনয়নপত্র বাছাইয়ের সময় রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়ের কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ প্রার্থীর পক্ষে পক্ষপাতিত্বের অভিযোগ করেছেন। কোন প্রার্থীকে বিশেষ সুবিধা দেয়া ছাড়াও গোপনে জমাকৃত কাগজের ভুল সংশোধনের সুযোগ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে।
দক্ষিণ সিটির ২২ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থী মো. মনিরুল হক বাবু জানান, মহানগর নাট্যমঞ্চের অডিটোরিয়ামে যাচাই বাছাইয়ের সময় অনেক প্রার্থীর কিছু মুদ্রণের ভুল সংশোধন, প্রার্থীর স্বাক্ষর করিয়ে নেয়া হয়েছে। স্বাক্ষর ছাড়া জমা দেয়া কারও আবেদন বাতিল আবার কারও আবেদন গ্রহণ করা হয়েছে। বাবু আরো অভিযোগ করেন, প্রথম দিনে ইসি’র ওয়েব সাইটে দেয়া হলফনামায় স্বাক্ষর না থাকলেও গতকাল স্বাক্ষর পাওয়া গেছে। ওয়েব সাইটের গরমিল সংক্রান্ত অভিযোগে তিনি বলেন, মূল কাগজে স্বাক্ষর দেখাচ্ছেন অথচ ফটোকপিতে স্বাক্ষর নেই। এতে প্রমাণিত হয় জমা দেয়ার সময় স্বাক্ষর ছিল না পরে স্বাক্ষর দেয়ার সুযোগ দেয়া হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.