৩০ বছর পর ‘নির্দোষ’ প্রমাণিত, মুক্তি পাচ্ছেন ‘মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামী’

যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালাবামা অঙ্গরাজ্যের অ্যান্থনি রেই হিনটন দীর্ঘ ৩ দশক মৃত্যুদ- কার্যকরের প্রতীক্ষায় প্রহর গুণেছেন। হত্যাকা- ও ডাকাতির অভিযোগে জেলের রুদ্ধ প্রকোষ্ঠে জীবনের ৩০টি বসন্ত পার করার পর তার মামলাটি প্রত্যাহার করে নিয়েছে আদালত। গ্রেপ্তারের সময় তার বয়স ছিল ২৯ বছর। যৌবন পেরিয়ে আজ তিনি প্রবীণ। তার বিরুদ্ধে সব অভিযোগ তুলে নেয়া হয়েছে। ‘নির্দোষ’ প্রমাণিত হয়েছেন তিনি। অচিরেই মুক্তি দেয়া হবে অ্যান্থনিকে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এএফপি। ১৯৮৫ সালে ২ জনকে হত্যা ও পৃথক ঘটনায় ২টি রেস্টুরেন্টে ডাকাতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল অ্যান্থনিকে। জেফারসন কাউন্টি সার্কিট আদালতের বিচারক লরা পেট্রো অ্যান্থনির বিরুদ্ধে আনীত সব অভিযোগ প্রত্যাহার করে নেন। তার বিরুদ্ধে অপরাধের কোন তথ্য-প্রমাণ নেই বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন অ্যান্থনির প্রধান আইনজীবী ব্রায়ান স্টিভেনসন। এরপর তাকে মুক্তি দেয় আদালত। স্টিভেনসন বলেন, শেষ পর্যন্ত অ্যান্থনিকে মুক্তি দেয়া হবে ভেবে আমরা রোমাঞ্চ অনুভব করছি। কারণ, বিনা দোষে মৃত্যুদ- কার্যকরের অপেক্ষা করছিলেন অ্যান্থনি রেই হিনটন। তিনি আরও বলেন, অ্যান্থনি যে নির্দোষ, তার সাক্ষ্য-প্রমাণ সুস্পষ্টভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে। অ্যালবামার ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘ সময় মৃত্যুদন্ডের প্রতীক্ষায় থাকা এবং একই সঙ্গে প্রতীক্ষায় থাকার পর মুক্তি পাওয়ার বিরল ঘটনার অন্যতম এটি। অ্যালাবামার বার্মিংহামের একটি ফাস্ট ফুড রেস্টুরেন্টে ডাকাতির সময় ওই রেস্টুরেন্টের ২ ম্যানেজারকে গুলি করে হত্যা করে দুষ্কৃতকারী। ওই ঘটনার কোন প্রত্যক্ষদর্শী বা আঙুল ছাপের কোন প্রমাণ পায়নি পুলিশ। ওই একই বছর আরেকটি রেস্টুরেন্টে ডাকাতির ঘটনা ঘটে এবং সেই রেস্টুরেন্টের ম্যানেজারকেও গুলি করা হয়। তিনি গুরুতর আহত হন এবং অ্যান্থনিকে সন্দেহভাজন অপরাধী হিসেবে শনাক্ত করেন ওই ম্যানেজার। কিন্তু, অ্যান্থনির বক্তব্য অনুযায়ী, ডাকাতির সময় তিনি ১৫ মাইল দূরে কাজে ব্যস্ত ছিলেন। পুলিশ অ্যান্থনির মায়ের পিস্তলটি জব্দ করে এবং ৩টি অপরাধের ক্ষেত্রেই পিস্তলটি ব্যবহৃত হয়েছে বলে অভিযোগ আনে। স্টিভেনসন বলেন, ‘কৃষ্ণাঙ্গ’ অ্যান্থনিকে ভুলভাবে দোষী সাব্যস্ত করে মৃত্যুদ-ের রায় দেয়া হয়েছিল। এর একটি কারণ তিনি কৃষ্ণাঙ্গ। অ্যান্থনি দীর্ঘ ৩০টি বছর নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এসেছেন। কিন্তু, তাতে কোন ফল হয়নি। অবশেষে তিনি তার অধিকার ফিরে পেয়েছেন। এমনকি ওই পিস্তলটি যে অপরাধগুলো ঘটার সময় ব্যবহৃত হয়নি, সেটাও বেরিয়ে এসেছিল ফরেনসিক বিশেষজ্ঞ ও সাবেক এক এফবিআই প্রতিনিধির পরিচালিত ফরেনসিক রিপোর্টে। যুক্তরাষ্ট্রের ডেথ পেনাল্টি ইনফরমেশন সেন্টারের দেয়া তথ্যানুযায়ী, ১৯৭৩ সালের পর ১৫২তম এবং ২০১৫ সালে ‘দ্বিতীয়’ ব্যক্তি হিসেবে অ্যান্থনি নির্দোষ প্রমাণিত হলেন।

No comments

Powered by Blogger.