চার দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি কাবেরির হত্যাকারী

রাজধানীর মিশন ইন্টারন্যাশনাল কলেজের প্রভাষক কৃষ্ণা কাবেরি মণ্ডল হত্যার চার দিন অতিবাহিত হলেও চিহ্নিত আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এ নিয়ে নিহতের পরিবারের সদস্যরা অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তাদের ধারণা, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় রয়েছে আসামি কেএম জহিরুল ইসলাম ওরফে পলাশ। পুলিশ জানিয়েছে, জহিরুলকে গ্রেপ্তার করতে তৎপরতা অব্যাহত রয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাব ও ডিবি পুলিশ এ বিষয়ে তৎপরতা চালাচ্ছে। যে কোন সময় তাকে গ্রেপ্তার করা হতে পারে। বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) উপপরিচালক শীতাংশু শেখর বিশ্বাসের বাসায় হামলা ও তার স্ত্রী কৃষ্ণাকে হত্যা মামলার একমাত্র আসামি কেএম জহিরুল ইসলাম। সে শেয়ার লেনদেনকারী প্রতিষ্ঠান হাজী আহমেদ ব্রাদার্স সিকিউরিটিজ লিমিটেডের গুলশান শাখার ব্যবস্থাপক। ঘটনার পরদিন ৩১শে মার্চ সকালে গুলশান-১ ওই ব্রোকার হাউজে ছিল সে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক তার এক সহকর্মী জানিয়েছেন, এ সময় তাকে অন্যমনস্ক মনে হয়েছে। সকাল সাড়ে ৯টার পরে হঠাৎ একটি কল আসে তার ফোনে। এ সময় বনানীতে যাচ্ছেন বলে বের হয়ে যায় জহিরুল। তারপর থেকেই সে লাপাত্তা। জহিরুল বের হয়ে যাওয়ার কিছু সময় পরেই তার খোঁজ নিতে ওই প্রতিষ্ঠানে যায় পুলিশ। কিন্তু তাকে আর পাওয়া যায়নি। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা মোহাম্মদপুর থানার উপ-পরিদর্শক মাহাবুর রহমান জানান, হত্যাকাণ্ডে জহিরুলের সম্পৃক্ততার অভিযোগ পাওয়ার পর থেকেই তাকে গ্রেপ্তার করতে বিভিন্নস্থানে অভিযান চালাচ্ছে পুলিশ। তার পল্লবীর বাসায় অভিযান চালালেও সেখানে তাকে পাওয়া যায়নি বলে জানান তিনি। এ ঘটনার চারদিন অতিবাহিত হলেও আসামি গ্রেপ্তার না হওয়ায় অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন শীতাংশুর ভাই হিমাংশু শেখর বিশ্বাস। বরিশাল বিএম কলেজের শিক্ষক হিমাংশু বলেন, হত্যাকারীর নাম, ঠিকানা সবই দেয়া হয়েছে পুলিশকে। তার পরও চারদিন চলে গেছে রহস্যজনকভাবে তাকে গ্রেপ্তার করা যাচ্ছে না। পুলিশ জানিয়েছে, এই মামলাটি গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে পুলিশ। কিন্তু ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী শীতাংশু শেখর বিশ্বাস ও তার দুই কন্যা শ্রাবণী বিশ্বাস শ্রুতি ও অদ্রিতা বিশ্বাস অদৃতি অসুস্থ থাকায় তাদের কাছ থেকে বিস্তারিত তথ্য নেয়া যায়নি। ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (তেজগাঁও জোন) উপকমিশনার (তেজগাঁও) বিপ্লব কুমার বিশ্বাস বলেন, জহিরুলকে গ্রেপ্তার করতে তার বাসাসহ বিভিন্নস্থানে অভিযান চালিয়েছে পুলিশ। আর্থিক লেনদেনকে কেন্দ্র করেই এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়েছে। তদন্তের স্বার্থে শীতাংশু বিশ্বাস ও তার দুই মেয়ের কাছ থেকে আরও তথ্য প্রয়োজন। কিন্তু অসুস্থ থাকার কারণে তাদের কাছ থেকে সেভাবে তথ্য নেয়া যায়নি বলে জানান তিনি। শীতাংশুর স্বজনরা জানান, ঘটনার পর থেকে শীতাংশুর জ্যেষ্ঠ কন্যা শ্রাবণী বিশ্বাস শ্রুতি এ বিষয়ে পুলিশসহ স্বজনদের তথ্য দিয়েছে। এমনকি শীতাংশুর সঙ্গে কথা বলেছে পুলিশ। তবে অসুস্থতার কারণে দীর্ঘ সময় কথা বলতে পারেননি তারা। বুধবার রাতে শীতাংশু ও শ্রুতির মাথায় অস্ত্রোপচার করেছেন চিকিৎসকরা। শেষ রাতে জ্ঞান ফিরে শীতাংশু ও শ্রুতির। চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, তারা এখন আশঙ্কামুক্ত। শীতাংশুর স্ত্রী নিহত কৃষ্ণা কাবেরী মণ্ডলের বোন দীপা মল্লিক জানান, অসুস্থ থাকার কারণে কৃষ্ণার মৃত্যুর সংবাদ জানানো হয়নি শীতাংশু ও তার দুই কন্যাকে। যে কারণে কৃষ্ণার লাশটি ঢাকা মেডিকেল কলেজ মর্গের মরচ্যুয়ারিতে রাখা হয়েছে। দীপা বলেন, দাদা (শীতাংশু) আরেকটু সুস্থ হলেই তাকে এ বিষয়ে জানানো হবে। তার ইচ্ছানুসারেই কৃষ্ণার শেষকৃত্য হবে বলে জানান তিনি। স্ত্রী কৃষ্ণা কাবেরী মণ্ডল ও দুই কন্যা শ্রুতি এবং অদ্রিতাকে নিয়ে ইকবাল রোডের ৩/১২ নম্বর পাঁচতলা বাড়ির দোতলার ফ্ল্যাটে থাকেন বিআরটিএ’র উপপরিচালক শীতাংশু শেখর বিশ্বাস। তার গ্রামের বাড়ি রাজবাড়ী জেলার বালিয়াকান্দি থানার ডহর গ্রামে। তার পিতার নাম যতীন্দ্র নাথ বিশ্বাস। গত ৩০শে মার্চ রাতে ওই বাসাতেই হত্যা করা হয় শীতাংশুর স্ত্রী কৃষ্ণা কাবেরী মণ্ডলকে। এ ঘটনায় আহত শীতাংশু ও তার দুই কন্যা মেট্রোপলিটন মেডিক্যাল সেন্টারে চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার একমাত্র আসামি কেএম জহিরুল ইসলাম ওরফে পলাশ। সে পল্লবীর ১৪ নম্বর সড়কের ১৯ নম্বর বাড়ির তৃতীয় তলায় থাকতো। তার গ্রামের বাড়ি রাজশাহী জেলার বোয়ালিয়া থানার রামচন্দ্রপুরের ২৩০ স্কাইভিউ সাধুরনীড়। তার পিতার নাম কেএম শহীদুল ইসলাম।

No comments

Powered by Blogger.