হ্যামিলটনে অন্যরকম বাংলাদেশ by তালহা বিন নজরুল

উইলিয়ামসনকে আউট করে নিজের দ্বিতীয় উইকেটটি পেলেন সাকিব। অভিনন্দন
জানাতে ছুটলেন সতীর্থরা। কাল হ্যামিল্টনে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচে l প্রথম আলো
শাবাশ! বাংলাদেশ, শাবাশ! জয় আসেনি, তাতে কি! ওদের বুক তো কেঁপেছে। হ্যামিলটনে অন্য বাংলাদেশকে দেখা গেল। ব্যাটে-বলে দারুণ লড়াই করেও জিততে পারেনি বাংলাদেশ। প্রায় হাতের মধ্যে থাকা খেলাটি নিউজিল্যান্ড জিতে নিয়েছে। এ হারে হতাশা ছিল না, ছিল না আফসোস। জিতলে আনন্দের সীমা থাকতো না এই যা। বাংলাদেশের ৭ উইকেটে করা ২৮৮ রান টপকাতে নিউজিল্যান্ডকে ৭ উইকেটই হারাতে হয়। হাতে ছিল তাদের ৮ বল। এ হারে বাংলাদেশ গ্রুপ এ’তে চতুর্থস্থানেই থাকছে তা প্রায় নিরানব্বই ভাগ নিশ্চিত। বাকি এক ভাগ থাকছে যদি আজ স্কটল্যান্ডের কাছে বড় ব্যবধানে অস্ট্রেলিয়া হেরে যায়। আর অর্থ হলো কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ হচ্ছে ভারত। বাংলাদেশকে এখন নিউজিল্যান্ডেই থাকতে হচ্ছে। কারণ চতুর্থ কোয়ার্টার ফাইনালটি হবে ওয়েলিংটনে, ২১শে মার্চ। দক্ষতা আর অভিজ্ঞতায় তো নিউজিল্যান্ডই এগিয়ে ছিল। সঙ্গে ছিল চিরচেনা মাঠ আর হাজারও সমর্থকের সরব সমর্থন।  খেলায় নয়, কৌশলে মার খেয়েছে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক সাকিব আল হাসানের দল। অভিজ্ঞতার অভাবও বলতে পারেন। যদিও বাংলাদেশের লাখো সমর্থক কাল ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাকিবের কৌশল আর পরিকল্পনার জন্য। তাদের অভিযোগ- সাকিবের কারণেই হাতছাড়া হয়ে গেল এক অসাধারণ জয়। শেষদিকে বোলার নির্বাচন নিয়েই তাদের আপত্তি। সুযোগ থাকা সত্ত্বেও রুবেল হোসেন, তাসকিন বা সৌম্য সরকারের পেস বোলারের সহায়তা না নিয়ে কেন পার্টটাইম স্পিনার নাসির হোসেন আর মাহমুদুল্লাহ রিয়াদের হাতে বল দেয়া হলো। এই মাহমুদুল্লাহকে মাশরাফি ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে বলই করতে দেননি। নিউজিল্যান্ডের ইনিংসের শুরুতেই সবাইকে চমকে দেন সাকিব নিজে বল হাতে নিয়ে। তার পরের ওভারে আরও বড় চমক দেখান তিনি প্রথম খেলতে নামা তাইজুলের হাতে বল তুলে দিয়ে। নিউজিল্যান্ড অধিনায়ক মার্টিন ক্রো ২৩ বছর আগে ১৯৯২ বিশ্বকাপে নতুন বলে এক প্রান্ত দিয়ে স্পিন আক্রমণের নজির স্থাপন করেন। দিপক প্যাটেলের সেই স্পিনে বেশ কাজও হয় এবং নিউজিল্যান্ড সেবারও অপ্রতিরোধ্য গতিতে সেমিফাইনালে উঠেছিল। এবার দুইপ্রান্ত থেকে স্পিন আক্রমণ চালিয়ে নতুন আলোচনার জন্ম দিলেন সাকিব। ক্রিকেট ইতিহাসের যে কোন ফরম্যাটেই দুই প্রান্ত থেকে স্পিন আক্রমণ খুবই বিরল। তবে এ সিদ্ধান্ত সাকিবের একার না দলের নীতি-নির্ধারকদের তা জানা যায়নি। সাধারণত রাতের বেলায় স্পিনারদের বল গ্রিপ করতে কষ্ট হয় যদি শিশির থাকে। আর নিউজিল্যান্ডের পেসাররাই তো বাংলাদেশের ইনিংসে প্রথম আঘাত হেনেছিল। তাই বাংলাদেশের সিদ্ধান্ত অবাক করার মতোই। বাংলাদেশ অধিনায়ক অবশ্য তার ম্যাচ পরিকল্পনা সঠিক ছিল বলেই দাবি করেছেন। ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, আজ স্পিনারদের কিছুটা বেশি সহায়তা ছিল। প্রথমদিকে স্পিনাররা  বেশি সহায়তা  পেয়েছে। আমরা যদি প্রথমে বোলিং করতাম, তাহলে হয়তো আমাদের স্পিনাররা আরও ভাল করতে পারতো। ম্যাচ হেরেছি, এটা নেতিবাচক। তবে ইতিবাচক অনেক কিছু নেয়ার আছে। ইতিবাচক দিকগুলো মাথায় রাখলে কোয়ার্টার ফাইনালে আমরা দারুণ কিছু করতে পারবো। আর বলতে হয় আমরা আজ ভাল  খেলেছি। তারা কষ্ট করে জিতেছে। গাপটিল ভাল খেলেছে। টেইলরও উইকেটে পড়ে থেকেছে।  শেষদিকে মনে হয়েছে- আমরা কিছু রান কম করেছি।’
এই সমলোচনাটুকু বাদ দিলে বাংলাদেশ দল কাল হেরেও মন জয় করে সবার। শুধু বাংলাদেশের সংবাদ মাধ্যমেই নয়, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের সংবাদ মাধ্যমেও বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়। নিউজিল্যান্ডের জয় যে সহজ ছিল না এবং তারা যে হারতেও পারতো তা স্বীকার করে নিয়েছে তারা। বাংলাদেশ আর এক জায়গায় হেরেছে আর তা হলো ভাগ্য। নিউজিল্যান্ডের যে ব্যাটসম্যানটি আম্পায়ারের কল্যাণে জীবন পেয়েছিলেন সেই মার্টিন গাপটিলই শতরান করে বাংলাদেশের পরাজয় তরান্বিত করেন। ইংল্যান্ডের মতো নিউজিল্যান্ডও টসে জিতে বাংলাদেশকে ব্যাটিংয়ের আমন্ত্রণ জানান কিউই অধিনায়ক। তার এ সিদ্ধান্ত সঠিক প্রমাণ করেন ট্রেন্ট বোল্ট। ৩৪ বল খেলা বাংলাদেশ যখন প্রথম উইকেট হারায় তখন দলের সংগ্রহ মাত্র ৪। দশম ওভারের চতুর্থ বলে তামিম যখন আউট হন তখন দলের সংগ্রহ ২৭। দুই ওপেনারই বোল্টের শিকার। এরপর আগের খেলার মতো যথারীতি মাহমুদুল্লাহ আর সৌম্য সরকার বিপর্যয় সামাল দেন। ক্রম উন্নতির ধারা বজায় রেখে সৌম্য তার প্রথম ফিফটি তুলে নেন। আর মাহমুদুল্লাহও তার ধারা ঠিক রেখে তুলে নেন টানা দ্বিতীয় শতক। বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ও দ্বিতীয় শতকের মালিক এখন তিনিই। তবে কাল মুশফিক বেশিক্ষণ থাকতে পারেননি। সাব্বির অসাধারণ ব্যাটিং করে ৪০ রান যোগ করে গেছেন। সাকিব আরও বড় ইনিংস খেলতে পারতেন। কিন্তু অহেতুক বলের লাইনে না গিয়েই উপর্যুপরি হাঁকাতে গিয়ে ক্যাচ তুলে দেন উইকেটের পেছনে। এমনটি না হলে স্কোর ৩০০ পেরোতে পারতো। আর তা হলে কিউইরাও আরেকটু বেশি চাপে থাকতো। তবুও ২৮৮ রান কম মনে হচ্ছিল না। কিন্তু গাপটিল-রস টেইলরের সংযমী আর কোরি অ্যান্ডারসন-গ্র্যান্ট ইলিয়টের ঝড়ো ব্যাটিংয়ে নিউজিল্যান্ড আট বল হাতে রেখেই জয়ের লক্ষ্যে পৌঁছে যায়। এই প্রথম তারা গ্রুপ পর্বের সব খেলাতেই জয় পেলো। তবে এবার এ খেলাতেই প্রথম তারা প্রতিপক্ষের সব ব্যাটসম্যানকে আউট করতে পারেনি। আর তাই সাকিবের কথায় হারলেও এ ম্যাচে বাংলাদেশ অনেক কিছুই পেয়েছে। তার কথায়, ‘এই ম্যাচে আত্মবিশ্বাসী হওয়ার মতো বেশকিছু বিষয় আমরা পেয়েছি। আশা করছি তা আমাদের কোয়ার্টার ফাইনালে কাজে লাগবে। আমরা  সেদিকেই তাকিয়ে আছি। এই ম্যাচে খুব কাছে গিয়েও আমরা হেরে গেছি। নিঃসন্দেহে এটি খুবই হতাশাজনক। তবে ম্যাচটি দুর্দান্ত ছিল। শেষে ভাল  খেলা দলই জিতেছে।’

No comments

Powered by Blogger.