গ্রেফতার হলেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা by আবু সালেহ আকন

একমাত্র ছেলেকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। ছেলের অপরাধ কী জানেন না এই মা।
গতকাল আদালত এলাকায় এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি : নয়া দিগন্ত
গ্রেফতার হলেই উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা। কথিত বন্দুকযুদ্ধ বা ক্রসফায়ারে জীবন যাবে, না গুলি খেয়ে পঙ্গু হবে এ আশঙ্কায় থাকেন স্বজনরা। কোনো কোনো ক্ষেত্রে এ আশঙ্কা সঠিক প্রমাণিত না হলেও কারো কারো আশঙ্কা ঠিকই ফলে যায়। গত সোমবার রাতে রাজশাহীর মতিহার থানার শ্যামপুর থেকে আটক হওয়া সবুজ আলী এর একটি উদাহরণ। সবুজ আলী মঙ্গলবার রাতে গুলিবিদ্ধ হয়েছেন। তার সাথে আটক হওয়া অপর যুবক তানজিদুর রহমানের খোঁজ মেলেনি গত বুধবার পর্যন্ত। এ দিকে ঢাকায় আটক হওয়া তিন ছাত্রকে দুই দিন পরে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। দেশে গড়ে প্রতিদিন ২০ দলীয় জোটের অন্তত ৩০০ নেতাকর্মী গ্রেফতার হচ্ছেন। গতকালও দেশের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাপক গ্রেফতার অভিযান চালায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। গত বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়, এ দিন ভোর পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় পুলিশ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২১ জনকে গ্রেফতার করে। এর মধ্যে বিএনপির আটজন এবং জামায়াত-শিবিরের ১৩ জন নেতাকর্মী রয়েছেন। পুলিশ জানিয়েছে, তারা নাশকতায় জড়িত।
খুলনার বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের ৫২ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। মঙ্গলবার রাত থেকে বুধবার সকাল পর্যন্ত জেলার আটটি থানায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে মহানগর যুবদলের সহসভাপতি ইকরামুল কবির মিল্টনও রয়েছেন। এ ছাড়াও ৬ নম্বর ওয়ার্ড যুবদলের সাধারণ সম্পাদক নাসিম ও সোনাডাঙ্গা থানা যুবদলের প্রকাশনা সম্পাদক হারুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
এ দিকে খুলনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুকুমার বিশ্বাস সাংবাদিকদের বলেছেন, ভোরে নগরীর গগন বাবু রোড এলাকায় একটি ট্রাকে আগুন দিয়েছে কে বা কারা।
পাবনায় নাশকতার আশঙ্কায় জামায়াত-বিএনপিসহ ৬৪ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। এর মধ্যে পৌর জামায়াতের আমির মাওলানা আব্দুল লতিফ জামিনে মুক্তি পাওয়ার পর পুলিশ তাকে জেলগেট থেকে ফের গ্রেফতার করে।
রংপুরের বিভিন্ন থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে বিএনপি-জামায়াতের আট কর্মীসহ ৪৩ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। চলমান সরকারবিরোধী আন্দোলনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন স্থানে সহিংসতায় জড়িত সন্দেহে বিএনপি-জামায়াতের ১৩ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ।
নাশকতার অভিযোগে মানিকগঞ্জে বিএনপি-জামায়াতের পাঁচ নেতাকর্মীকে আটক করেছে পুলিশ। মেহেরপুরে ১৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়। এ ছাড়া দেশের অন্যান্য স্থানে চলছে অভিযান।
সূত্র জানায়, যখন কোথাও কেউ গ্রেফতার হয় তখন তাদের স্বজনদের মধ্যে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়ে।
গত সোমবার তিন ছাত্র আটক হওয়ার পরে তাদের স্বজনেরা চরম উদ্বেগ প্রকাশ করে সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি প্রদান করেন। গত ৯ মার্চ বিকেল সাড়ে ৫টায় রাজধানীর কদমতলী এলাকা থেকে ড. মাহবুবর রহমান মোল্লা কলেজের ছাত্র সাইদুল ইসলাম, তা’মীরুল মিল্লাত মাদরাসার ছাত্র হাসান রাব্বি এবং সিটি কলেজের ছাত্র নাকিবুল আরেফিনকে বাসার সামনে থেকে আটক করে পুলিশ। আটককৃত ছাত্রদের বাবা আনোয়ার হোসেন, হানিফ শিকদার ও মাওলানা ফয়সাল আহমেদ এক যৌথ বিবৃতিতে চরম উদ্বেগ প্রকাশ করেন। গতকাল ওই তিন ছাত্রকে আদালতে হাজির করা হয়।
সোমবার রাতে রাজশাহীর মতিহার থেকে আটক করা হয় দুই ছাত্রকে। প্রথমে পুলিশ আটকের বিষয়টি স্বীকার করলেও পরে তা অস্বীকার করে। আটককৃত তানজিদুর রহমানের বাবা নূর ইসলাম এবং সবুজ আলীর বাবা সাদেক আলী এক বিবৃততে বলেছেন, সোমবার রাত ১টায় আমাদের দুই সন্তান, ইসলামিয়া কলেজের ছাত্র তানজিদুর রহমান রিপন এবং একই প্রতিষ্ঠানের ডিগ্রি প্রথম বর্ষের ছাত্র সবুজ আলীকে ঘুমন্ত অবস্থায় সবার সামনে বাসা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। পরে সকালে আমরা আমাদের সন্তানদের সাথে মতিহার থানায় দেখা করি এবং খাবারও দিই। কিন্তু দুপুরে হঠাৎ করে পুলিশ তাদের গ্রেফতারের কথা অস্বীকার করে। মঙ্গলবার রাত দেড়টায় সবুজ আলীকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাওয়া যায়। সবুজ আলীর বাবা অভিযোগ করেছেন, মঙ্গলবার রাত দেড়টায় এক পুলিশ কর্মকর্তা তাকে ফোন করে বলেন তোমার ছেলেকে দেখতে চাইলে এই মুহূর্তে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে আসতে হবে। তিনি গিয়ে হাসপাতালে পুলিশি হেফাজতে সবুজকে চিকিৎসাধীন দেখতে পান। গতকাল সকালে মতিহার থানার ওসি আব্দুর রউফ সাংবাদিকদের বলেন, সবুজকে নিয়ে বিনোদপুর মতিমহলের আশপাশে অভিযান চালালে সে পালানোর চেষ্টা করে এবং আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করে। এ অবস্থায় পুলিশ গুলি চালালে সে আহত হয়। এ দিকে সবুজকে গুলিবিদ্ধ অবস্থায় পাওয়া গেলেও রিপনের খোঁজ গতকাল পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.