বাংলাদেশের সব দলকে একত্রে কাজ করতে উৎসাহী করে যুক্তরাজ্য

বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলকে একত্রিত হয়ে কাজ করার জন্য বারবার উৎসাহিত করে যুক্তরাজ্য। একই সঙ্গে সব রকম সহিংসতার নিন্দা জানায়। বৃটিশ তিন জন মন্ত্রী ২০১৪ সালে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গণতান্ত্রিক স্বচ্ছতাকে আরও শক্তিশালী করতে ও ভবিষ্যৎ নির্বাচনে পরস্পরের প্রতি আরও আস্থা সৃষ্টি করতে। গতকাল যুক্তরাজ্য সরকারের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এসব কথা বলা হয়েছে। বাংলাদেশ পলিটিক্যাল ভায়োলেন্স শীর্ষক ওই প্রতিবেদন  তৈরি করা হয়েছে ২০১৪ সালের ঘটনাপ্রবাহের ওপর ভিত্তি করে। রিপোর্টটি প্রকাশ করেছে যুক্তরাজ্য সরকারের ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ অফিস। এতে বলা হয়, মানবাধিকার বিষয়ক ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ মন্ত্রী ব্যারোনেস সাঈদা ওয়ারসি ৬ই জানুয়ারি সব পক্ষকে ভয়ভীতি প্রদর্শন ও সহিংসতা পরিহারের আহ্বান জানিয়েছেন। এতে বলা হয়, আইন প্রয়োগকারীদের দায়মুক্তির সংস্কৃতি বাংলাদেশের একটি বড় সমস্যা। বৃটিশ সরকারের ২০১৪ সালের মানবাধিকার ও গণতন্ত্র প্রতিবেদনে দেশভিত্তিক কেস স্টাডিতে ‘বাংলাদেশ-রাজনৈতিক সহিংসতা’- শিরোনামে বলা হয়, ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারি বাংলাদেশে ১০ম সংসদ নির্বাচনের আগ পর্যন্ত মারাত্মক পর্যায়ের সহিংসতা, ভয়-ভীতি প্রদর্শন, হরতাল ও অবরোধে বিপর্যস্ত হয়। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি সহ ১৮ দলীয় জোট সাংবিধানিকভাবে বৈধ নির্বাচনী ব্যবস্থায় আপত্তি জানায়। নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না এমন উদ্বেগে তারা নির্বাচন বর্জন করে। অর্ধেকেরও বেশি সংসদীয় আসনে কোন প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়নি। আর আওয়ামী লীগ টানা দ্বিতীয় মেয়াদে জয়ী হয়। নির্বাচনের দিনে সহিংসতায় ২১ জনের মৃত্যু হয়। বিদ্যালয়ভিত্তিক শতাধিক ভোটকেন্দ্র পুড়িয়ে দেয়া হয়। এতে বলা হয়, আমরা বারবার সকল প্রকার সহিংসতার নিন্দা জানিয়েছি। আর একসঙ্গে কাজ করার জন্য রাজনৈতিক দলগুলোকে উৎসাহিত করেছি। ৬ই জানুয়ারি মানবাধিকার বিষয়ক তৎকালীন ফরেন অ্যান্ড কমনওয়েলথ মন্ত্রী ব্যারোনেস ওয়ারসি, সকল দলের ভয়-ভীতি প্রদর্শন এবং সহিংসতার নিন্দা জানান। একই সঙ্গে তিনি বাংলাদেশের সকল রাজনৈতিক দলকে রাজনৈতিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে একসঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানান। এছাড়াও আমরা একান্ত আলাপে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর কাছে আমাদের উদ্বেগ জানিয়েছি। সফররত বাংলাদেশী মন্ত্রীদের কাছে উদ্বেগ জানিয়েছেন ব্যারোনেস ওয়ারসি। এছাড়াও বাংলাদেশ সফরে উদ্বেগ জানিয়েছেন, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সাবেক প্রতিমন্ত্রী অ্যালান ডানকান, আন্তর্জাতিক উন্নয়ন বিষয়ক সংসদীয় সাবেক আন্ডার সেক্রেটারি লিন ফেদারস্টোন। গণতান্ত্রিক জবাবদিহিতা জোরদার করতে এবং ভবিষ্যৎ নির্বাচনে অপেক্ষাকৃত ব্যাপক আস্থা গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোকে একসঙ্গে কাজ করতে আহ্বান জানিয়েছেন তিন মন্ত্রীই। নির্বাচনের পর বিএনপি শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল। যদিও বছরের শেষের দিকের রাজনৈতিক উত্তেজনার ফলে ব্যাপকভাবে রাজনৈতিক সহিংসতার পুনরুত্থান ঘটে। ২০১৪ সালে উল্লেখযোগ্যভাবে তুলনামূলক কম হরতাল ও অবরোধ হয়েছে। সামগ্রিকভাবে দেশটি তুলনামূলক শান্ত সময় পার করছিল। যা-ই হোক, দু’ বৃহৎ রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি’র মধ্যে কোন সংলাপ নেই। এনজিওগুলো প্রতিবেদন দিয়েছে যে, বাংলাদেশের সকল আইনশৃঙ্খলা বাস্তবায়নকারী সংস্থার দায়মুক্তি এখনও একটি মারাত্মক সমস্যা। নির্বাচনের পরে বহু বিচার-বহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ও গুম সংঘটনের অভিযোগ রয়েছে এসব বাহিনীর বিরুদ্ধে। এনজিওগুলো এসব হত্যাকাণ্ডের নিন্দা জানিয়েছে। নারায়ণগঞ্জে সাত খুনের ঘটনায় র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের জড়িত থাকার অভিযোগে দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় ওঠে। ব্যারোনেস ওয়ারসি গত মে মাসে বাংলাদেশের হাইকমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাতের সময় দ্রুত, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানান। এখন পর্যন্ত, দোষীদের খুঁজে বের করতে তিনটি তদন্তের কোনটিতেই ফলাফল আসেনি। কারও বিরুদ্ধেই অভিযোগ আনা হয়নি। সরকার বিদেশী অর্থ-সাহায্য আইন (সংসদীয় কমিটির অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে) ও নতুন সমপ্রচার নীতিমালা পুনর্বিবেচনার প্রস্তাব করেছে। অপরদিকে ডিজিটাল মাধ্যমে সরকারের সমালোচনা করেছে, এমন অনেককে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি আইনের অধীনে আটক করা হয়েছে। এর ফলে সুশীল সমাজের কার্যপরিধি, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং সমালোচনা ও ভিন্নমত দমনে সরকারের ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে। এছাড়াও সরকার বিচারপতিদের অভিশংসনে সংসদকে ক্ষমতা ফিরিয়ে দিয়েছে। এ ক্ষমতা কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে তার ওপর নির্ভর করে বিচারবিভাগের স্বাধীনতাকে হুমকির মুখে পড়তে পারে। প্রধানমন্ত্রী ডেভিড ক্যামেরন ২২শে জুলাই বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। এ সময় বাংলাদেশের  নির্বাচন নিয়ে তিনি হতাশা প্রকাশ করেন। উভয়ই মুক্ত সমাজ এবং রাজনৈতিক পদ্ধতির গুরুত্বের বিষয়ে একমত পোষণ করেন, যেখানে গণতান্ত্রিকভাবে অংশগ্রহণ এবং গণমাধ্যম স্বাধীনতাকে সম্মান দেখানো হয়।

No comments

Powered by Blogger.