চাপের মুখে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী

হাঙ্গেরির ভিকতর অরবান
নতুন বছরের শুরুটা ভালো হয়নি হাঙ্গেরির যুদ্ধংদেহী প্রধানমন্ত্রী ভিকতর অরবানের। জনপ্রিয়তা দিন দিন কমে যাচ্ছে তাঁর, বাড়ছে অসন্তোষ। কারণটা নতুন নয়। দারিদ্র্য যেখানে বাড়ছে, সেখানে তাঁর মন্ত্রী ও প্রিয়ভাজনদের বিলাসী জীবন, দুর্নীতি ও জনগণের ওপর করের বোঝা চাপানোর চেষ্টা—এসব কারণে আস্থাভাজন থেকে বিতৃষ্ণার বস্তুতে পরিণত হয়েছেন তিনি। প্রশাসনিক ও নৈতিক বিচ্যুতির কারণে এখন তিনি কোণঠাসা। একরোখা নীতি ও মনোভাবের কারণে আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও এখন একই পরিস্থিতির মুখে ভিকতর আরবার। গত বছরের অক্টোবরেই ইন্টারনেটে কর আরোপকে কেন্দ্র করে দেশটির জনগণের ক্ষোভের মুখে পড়েন অরবান। কূটনৈতিক দিক দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গেও হাঙ্গেরির সম্পর্ক অবনতির দিকে যাচ্ছে। দেশটির ছয় সরকারি কর্মকর্তাকে দুর্নীতিগ্রস্ত বলে চিহ্নিত করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। অরবানের অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র হাঙ্গেরির ওপর নিজেদের আধিপত্য বজায় রাখতেই এসব খবরদারি করছে। তবে সবচেয়ে বিপদের বিষয় হলো, নিজ দল রক্ষণশীল ডানপন্থী ফিদেজের সঙ্গেও অরবানের কোন্দল বাড়ছে। গণমাধ্যমে পরিচালিত জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, অরবানের প্রতি তাঁর দল ফিদেজের সমর্থন ৩৮ শতাংশ থেকে কমে ২৬ শতাংশে এসে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ, অরবানের প্রায় নয় লাখ ভোটার কমে গেছে। অরবানের জনপ্রিয়তা কমেছে ১৬ শতাংশ।
ইন্টারনেটে কর আরোপ করার পরে হাঙ্গেরির জনগণ প্রধানমন্ত্রী অরবানের ওপর যে কতটা অসন্তুষ্ট তার প্রমাণ পাওয়া যায়। করের প্রতিবাদে গত বছরের অক্টোবরে বুদাপেস্টের রাস্তায় কয়েক হাজার মানুষ বিক্ষোভ করেন। সরকারের এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা।
হাঙ্গেরিতে সাধারণ জনগণের জীবনমান কমে যাচ্ছে। সেখানে দিন দিন দারিদ্র্য বাড়ছে। জনগণ এসব নিয়ে এমনিতেই ক্ষুব্ধ। তাঁরা আরও বেশি ক্ষুব্ধ হন যখন দেখেন দেশটির মন্ত্রী ও সরকারি আমলারা বিলাসবহুল আয়েশি জীবন কাটাচ্ছেন। তাঁদের জৌলুসপূর্ণ জীবনযাপনে খোদ ফিদেজ দলের নেতারাও বিরক্তি প্রকাশ করেছেন। ফিদেজ দলের সাবেক প্রেসিডেন্ট ও হাঙ্গেরির শিক্ষামন্ত্রী জোলতান পাকোরনি এখন বুদাপেস্টের এক শহরের মেয়র। তিনি সরকারি মন্ত্রী ও আমলাদের বিলাসে গা ভাসানো বন্ধ করার আহ্বান জানান। কিন্তু তাঁর কথায় কান না দিয়ে তাঁকে সরিয়ে দেওয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী ভিকতর অরবানের চিফ অফ স্টাফ জানোস লাজার পাকোরনিকে সরানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখেন। কিন্তু মন্ত্রীদের বিলাসবহুল জীবনযাপন নিয়ে পাকোরনির করা মন্তব্য জনগণের মধ্যে জনপ্রিয়তা পায়। এ নিয়ে সমালোচনা চলতে থাকে। অরবানের বিভিন্ন সিদ্ধান্ত ও একরোখা মনোভাবের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে হাঙ্গেরির কূটনৈতিক সম্পর্ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্নীতিগ্রস্ত সন্দেহে হাঙ্গেরির ছয় সরকারি কর্মকর্তার যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি হয়েছে। ন্যাটোর মিত্র হিসেবে হাঙ্গেরির ওপর যুক্তরাষ্ট্রের এ ধরনের নিষেধাজ্ঞা অবাক করে দেওয়ার মতো। যুক্তরাষ্ট্র গোপনীয়তার স্বার্থে ওই ছয় কর্মকর্তার নাম প্রকাশ করেনি। তবে কর বিভাগের প্রধান ইলদিকো ভিদা দুর্নীতিগ্রস্ত ওই ছয় কর্মকর্তার তালিকায় নিজের নাম থাকার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি কোনো দুর্নীতি করেননি বলেও দাবি করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রের তোলা দুর্নীতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন অরবান। হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রীর অভিযোগ, যুক্তরাষ্ট্র এভাবে খবরদারি করতে চায়। ফিদেজ দলের পার্লামেন্টের নেতা আন্তাল রোগ্ন, লাজার ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী পিতার সিজারতো সরকার সমর্থিত গণমাধ্যমে দেওয়া বক্তব্যে একই অভিযোগ করেছেন। পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিজারতো বলেছেন, অভ্যন্তরীণ ও বাইরের কিছু শক্তি হাঙ্গেরিকে ধ্বংস করতে চায়।
হাঙ্গেরির সরকারি দলের মুখপাত্র জলটান কভাস বলেন, ২০১১ সাল থেকে মার্কিন প্রশাসন হাঙ্গেরির প্রতি নেতিবাচক মনোভাব পোষণ করে। যুক্তরাষ্ট্র হাঙ্গেরিকে যুদ্ধের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। এতে করে শুধু হাঙ্গেরি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। দেশের ভেতর ও বাইরের পরিস্থিতি থেকে এটা স্পষ্ট যে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিকতর অরবান এখন অনেকটাই কোণঠাসা। দ্য ইকোনমিস্ট অবলম্বনে

No comments

Powered by Blogger.