খালেদা জিয়া অবরোধমুক্ত

(ছবি:-১ বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে থাকা পুলিশের ভ্যান ও জলকামান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে প্রধান ফটক থেকে পুলিশও সরে গেছে। ছবি: প্রথম আলো) (ছবি:-২ ১৫ দিন পর রোববার রাতে হঠাৎ করে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশের ব্যারিকেড সরানো হয়। ছবিটি রাত তিনটার দিকে বেসরকারি টেলিভিশন ইন্ডিপেন্ডেন্ট থেকে সংগৃহীত।) বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে থাকা পুলিশের ভ্যান ও জলকামান সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। বেলা ১১টার দিকে প্রধান ফটক থেকে পুলিশ সরে গেছে। সেখানে খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত নিরাপত্তা বাহিনীর (সিএসএফ) সদস্যদের দেখা গেছে। সিএসএফের একটি গাড়ি ফটকের সামনে আড়াআড়িভাবে রাখা আছে। ফটকের ভেতরেও সিএসএফের একটি গাড়ি আড়াআড়িভাবে রাখা।
খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের ফটকে কেন অবস্থান করছেন—জানতে চাইলে সিএসএফের সদস্যরা বলেন, কেন রাখা হয়েছে বলতে পারব না। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে। সিএসএফের অবস্থানের ব্যাপারে জানতে চাইলে বিএনপির মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শায়রুল কবির খান বলেন, কেন গাড়ি রাখা হয়েছে তা সিএসএফই বলতে পারবে। গতকাল রাতে হঠাৎ করে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য ও পুলিশ তুলে নেওয়া হয়েছে। হয়তো বা নিরাপত্তার কারণেও সিএসএফ রাখা হতে পারে।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে রাজধানীর চন্দ্রিমা উদ্যানে তাঁর কবরে খালেদা জিয়া শ্রদ্ধা জানাতে যাবেন কি না—জানতে চাইলে শায়রুল কবির খান দাবি করেন, জিয়াউর রহমানের কবরে কাউকেই যেতে দেওয়া হচ্ছে না। এর আগে যাঁরা সেখানে গেছেন তাঁদের বাধা দেওয়া হয়েছে। গতকাল রোববার রাত আড়াইটার পর হঠাৎ করে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে থাকা পুলিশের দুটি গাড়ি সরিয়ে নেওয়া হয়। সকালে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের আশপাশে পাঁচ-ছয়জন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। গুলশান-২-এর ৮৬ নম্বর সড়কের প্রবেশ মুখ থেকে পুলিশ সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ওই এলাকায় অবশ্য কয়েকজন পুলিশ সদস্যকে টহল দিতে দেখা গেছে। তবে গুলশান-২-এর ৮৮ নম্বর সড়কে পুলিশের কয়েকটি গাড়ি দেখা গেছে।
এ ব্যাপারে গতকাল দিবাগত রাত পৌনে তিনটার দিকে যোগাযোগ করা হলে গুলশান থানায় কর্তব্যরত কর্মকর্তা উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর প্রথম আলোকে বলেন, তিনি এমন খবর জানেন না। তবে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশের পিকআপ ভ্যান ও জলকামান সরিয়ে নেওয়ার কথা জানান বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের কর্মকর্তা শামসুদ্দিন দিদার। রাত তিনটার দিকে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘রোববার রাত আড়াইটার পর হঠাৎ করেই চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ের সামনে থেকে পুলিশের দুটি পিকআপ ভ্যান সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর জলকামান সরিয়ে নেওয়া হয়।’ ওইসময় দিদার জানান, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের সামনের নিয়মিত নিরাপত্তায় যাঁরা থাকতেন, তাঁরা আছেন।
গুলশানে নিজের রাজনৈতিক কার্যালয়ে ১৫ দিন ধরে কার্যত অবরুদ্ধ হয়ে আছেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। ৩ জানুয়ারি রাত নয়টার পর থেকে খালেদা জিয়ার গুলশান কার্যালয়ের সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়। ওই দিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে তিনি ‘অসুস্থ’ রুহুল কবির রিজভীকে দেখতে নয়াপল্টনে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁকে বাধা দেয়। এর পর থেকে অবরুদ্ধ হয়ে আছেন খালেদা জিয়া। অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় ৫ জানুয়ারি খালেদা জিয়া অবরোধের ডাক দেন। ৬ জানুয়ারি থেকে দেশে অবরোধ চলছে। এই অবরোধে রোববার পর্যন্ত ১৫ দিনে সহিংসতায় নিহত হয়েছেন ২৭ জন। গত ১৭ জানুয়ারি রাত পৌনে একটার দিকে খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের প্রধান ফটকে আবারও তালা দেওয়া হয়। রোববার (১৮ জানুয়ারি) সকালে তা আবার খুলে নেওয়া হয়। এরপর খালেদা জিয়ার কার্যালয়ের প্রধান ফটকে আর তালা লাগানো হয়নি। গুলশান-২-এর ৮৬ নম্বর সড়কের ৬ নম্বর বাসাটি খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক কার্যালয়। কার্যালয়টি একটি দোতলা ভবন। খালেদা জিয়া বসেন দ্বিতীয় তলায়।
রোববার সন্ধ্যা পর্যন্ত খালেদা জিয়ার সঙ্গে বাইরের কেউ দেখা করতে যাননি। খালেদা জিয়া অবরুদ্ধ থাকা অবস্থায় দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য, শীর্ষ নেতারা তাঁর সঙ্গে দেখা করেন। তাঁর সঙ্গে দেখা করে ফেরার পথেই সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানের গাড়িতে আগুন দেয় ও গুলি করে দুর্বৃত্তরা। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, মহিলা দলের সাধারণ সম্পাদক শিরিন সুলতানা, খালেদা জিয়ার বিশেষ সহকারী শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, প্রেস সচিব মারুফ কামাল খান প্রমুখ খালেদা জিয়ার সঙ্গে কার্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করছেন।
৫ জানুয়ারির ‘একতরফা’ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ সরকারের পদত্যাগের দাবিতে ৬ জানুয়ারি থেকে চলছে অবরোধ। তবে ৪ জানুয়ারি থেকেই শুরু সংঘাতের। এই দিন থেকে রোববার পর্যন্ত ১৫ দিনে সহিংসতায় নিহত হলেন ২৭ জন। আহত পাঁচ শতাধিক। এ সময়ে আগুন দেওয়া হয় ২৩৮টি যানবাহনে। ভাঙচুর করা হয় অন্তত ৩০৭টি।

No comments

Powered by Blogger.