রাজাপক্ষের পরাজয়ের পেছনে র–এর কর্মকর্তা?

মাহিন্দা রাজাপক্ষেকে ক্ষমতাচ্যুত করতে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বীকে সহায়তার অভিযোগে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র) কলম্বো প্রধানকে শ্রীলঙ্কা বরখাস্ত করেছিল। রাজনৈতিক ও গোয়েন্দা সূত্র এ কথা জানিয়েছে। তবে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় র-এর ওই প্রতিনিধিকে বরখাস্ত করার বিষয়টি অস্বীকার করে দাবি করেছে, নিয়মিত প্রক্রিয়ার অংশ হিসেবে তাঁকে বদলি করা হয়েছে। খবর রয়টার্সের। ৮ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত নির্বাচনে ক্ষমতা হারানো রাজাপক্ষে রয়টার্সকে বলেছেন, তিনি এ বিষয়ে সবকিছু জানেন না। অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার নবনির্বাচিত সরকার বলেছে, তারা গণমাধ্যমের প্রতিবেদনটি সম্পর্কে অবগত হলেও বিষয়টি নিশ্চিত করতে পারছে না। তবে কলম্বো ও নয়াদিল্লির কয়েকটি সূত্র জানিয়েছে, র-এর কলম্বো শাখা প্রধানের বিরুদ্ধে বিরোধী প্রার্থী মাইথ্রিপালা সিরিসেনার পক্ষে সমর্থন আদায়ের চেষ্টা করার অভিযোগ করেছিল কলম্বো। তাদের অভিযোগে বলা হয়, ওই র কর্মকর্তা নির্বাচনের আগে সিরিসেনাকে রাজাপক্ষের মন্ত্রিসভা ত্যাগ করার প্ররোচনা দেন। এ কারণে তাঁকে প্রত্যাহার করে নেওয়ার জন্য ভারতকে আহ্বান জানায় শ্রীলঙ্কা। গত ২৮ ডিসেম্বর শ্রীলঙ্কার সানডে টাইমস-এ প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে বলা হয়, সম্মিলিত বিরোধী দলের সঙ্গে সংযোগের কারণে র-এর কলম্বো শাখার প্রধানকে সরে যেতে হয়েছে। ভারতের দক্ষিণ উপকূলের অদূরে অবস্থিত ছোট দ্বীপরাষ্ট্র শ্রীলঙ্কার অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে ভারতের উল্লেখযোগ্য প্রভাব রয়েছে। ১৯৮৭ সালে শ্রীলঙ্কা সে দেশের সরকার ও তামিল টাইগার বিদ্রোহীদের মধ্যে শান্তি-প্রচেষ্টায় মধ্যস্থতা করতে সে দেশে সেনা পাঠায় ভারত।
দুই দফায় ক্ষমতায় থাকা রাজাপক্ষে সরকার আঞ্চলিক প্রতিদ্বন্দ্বী চীনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ায় প্রভাব হারানোর ব্যাপারে ভারতের উদ্বেগ বেড়ে চলছিল। এ রকম প্রেক্ষাপটেই রাজাপক্ষের পরাজয় হলো। গত বছর চীনের দুটি ডুবোজাহাজকে রাজাপক্ষে যখন শ্রীলঙ্কার উপকূলে ঢোকার অনুমোদন দেন, তখন ভারতের উদ্বেগ বিপৎসংকেতে পরিণত হয়।
ভারতের এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শ্রীলঙ্কার বিরোধী দলগুলোকে একজন যৌথ প্রার্থীর বিষয়ে মতৈক্যে পৌঁছাতে কাজ করার অভিযোগ ওঠার পর কলম্বোর র প্রধানকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়। তাঁর বিরুদ্ধে নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনাসহ কয়েকজন এমপিকে রাজাপক্ষের দল থেকে পদত্যাগ করতেও উৎসাহিত করার অভিযোগ ওঠে।
ভারতের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা শ্রীলঙ্কার এক আইনপ্রণেতা ও কর্মকর্তা বলেন, বিরোধী দলের প্রধান নেতা রনিল উইকরামাসিংহেকে রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে প্রতিদ্বন্দ্বিতা না করতে বোঝানোর অভিযোগও রয়েছে র-এর ওই প্রতিনিধির বিরুদ্ধে। তিনি বলেন, র-এর ওই প্রতিনিধির সঙ্গে সাবেক প্রেসিডেন্ট চন্দ্রিকা কুমারাতুঙ্গার যোগাযোগ ছিল। কুমারাতুঙ্গা সিরিসেনাকে রাজাপক্ষের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে বড় ভূমিকা পালন করেন। নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট সিরিসেনা আগামী মাসে দিল্লিতে তাঁর প্রথম বিদেশ সফরের কথা ঘোষণা করেন। সিরিসেনা বলেছেন, তাঁর পররাষ্ট্রনীতির ‘প্রথম এবং মূল বিষয়’ হবে ভারত।

No comments

Powered by Blogger.