‘কবে দিব স্বীকৃতি?’ by মানসুরা হোসাইন

(জাতীয় প্রেসক্লাবে মতবিনিময় সভায় অংশ নিতে ঢাকায় আসেন সিরাজগঞ্জের রাজুবালাসহ (বাঁ দিক দিয়ে দ্বিতীয়) চারজন বীরাঙ্গনা। ছবি: প্রথম আলো) ‘মুক্তিযোদ্ধারা বন্দুক দিয়া যুদ্ধ করছে, দ্যাশ স্বাধীন করছে। আমরা নিজের মান দিয়া দ্যাশ স্বাধীন করছি। মুক্তিযোদ্ধা ও তাদের সন্তানরা সম্মান পায়। আমরা পাই না ক্যান? আমরা মানের স্বীকৃতি চাই।’
অভিমান নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় নির্যাতনের শিকার সিরাজগঞ্জের রাজুবালা। সম্প্রতি জাতীয় প্রেসক্লাবে অনুষ্ঠিত এক মতবিনিময় সভায় অংশ নিতে ঢাকায় এসেছিলেন চারজন বীরাঙ্গনা। সেখানেই কথা হয় রাজুবালার সঙ্গে। বাংলাদেশ নারী সাংবাদিক কেন্দ্র ও যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি সংগঠন ‘বীরাঙ্গনা ও মুক্তিযোদ্ধা’ শীর্ষক ওই মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। একাত্তরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হওয়ার বিবরণ দিয়ে রাজুবালা জানান, যুদ্ধের পর তাঁর জীবনে আরও বিপর্যয় নেমে আসে। স্বামী মেনে নিলেও শ্বশুর-শাশুড়ি তাঁর হাতের রান্না খেতেন না। স্বামী মারা গেছেন। ছেলেমেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে। এখন তাঁর দিন কাটে মন্দিরে মন্দিরে।
বীরাঙ্গনাদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে সরকার—এ কথা শুনে রাজুবালা বলেন, ‘শুনছি তো সরকার স্বীকৃতি দিব। কিন্তু কবে দিব? মরতে মরতে তো বীরাঙ্গনাদের সংখ্যাই কইম্যা যাইতাছে।’
সিরাজগঞ্জের আরেক বীরাঙ্গনা হাজেরা। তিনিও এসেছিলেন ওই অনুষ্ঠানে। তিনি জানান, যুদ্ধের পর তাঁকে ঘরে তোলেননি স্বামী। ছেলেমেয়েরাও মায়ের খোঁজ সেভাবে রাখেন না। পান না বয়স্কভাতা। এখন তাঁর দিন কাটে রেলওয়ে স্টেশনের পাশে।
রাজুবালা, হাজেরাদের মতো বীরাঙ্গনাদের সঠিক পরিসংখ্যান নেই সরকারের কাছে। তবে সম্প্রতি সরকার মুক্তিযোদ্ধাদের নতুন সংজ্ঞায় একাত্তরে পাকিস্তানি বাহিনী ও তাদের সহযোগীদের হাতে নির্যাতনের শিকার নারীদের (বীরাঙ্গনা) মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। গত ১৩ অক্টোবর জাতীয় মুক্তিযোদ্ধা কাউন্সিল (জামুকা) কার্যালয়ে এক সভায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
এ প্রসঙ্গে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক প্রথম আলোকে বলেন, ‘বীরাঙ্গনাদের নিয়ে যেসব সংগঠন কাজ করছে, তাদের কাছে তালিকা চেয়েছি। তারা দেবে বলেছে। তবে সবাই পাঠাচ্ছে না। এখন পর্যন্ত মাত্র ৩০০ জনের নাম পাওয়া গেছে। তাই গেজেট করা সম্ভব হচ্ছে না।’
মন্ত্রীর ভাষ্য, নারী মুক্তিযোদ্ধারা আগামী জানুয়ারি থেকে মুক্তিযোদ্ধা ভাতা পাবেন। জুলাই থেকে তাঁদের আবাসন ও চিকিত্সার ব্যবস্থা হাতে নেবে সরকার।
বীরাঙ্গনা নারীদের মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে স্বীকৃতি পাওয়ার জন্য আবেদন করতে হবে না জানিয়ে মোজাম্মেল হক বলেন, বিভিন্ন সংগঠনের পাঠানো তালিকার পাশাপাশি সরকার নারী কমিটি গঠন করবে। এ কমিটিই বীরাঙ্গনাদের খুঁজে বের করবে।

No comments

Powered by Blogger.