তাপসকে খুনের ঘটনায় মামলা: আসামি অর্ধশত

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের কর্মী তাপস সরকার নিহত হওয়ার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেনসহ ৩০ জনের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। গতকাল সোমবার দিবাগত রাত সোয়া দুইটায় হাটহাজারী থানায় মামলাটি করেন নিহত তাপসের সহপাঠী হাফিজুল ইসলাম। এতে অজ্ঞাত আরও ১৫-২০ জনকে আসামি করা হয়েছে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে তাপস সরকার গত রোববার শাহ আমানত ছাত্রাবাসের সামনে গুলিবিদ্ধ হন। আহত হন পাঁচজন। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়ার পর তাপসকে মৃত ঘোষণা করা হয়। হতাহত ছাত্রদের সবাই ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক পক্ষ সিএফসি (চুজ ফ্রেন্ডস উইথ কেয়ার) ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ পক্ষের নেতা-কর্মী। ক্যাম্পাস সূত্র জানায়, ছাত্রলীগের বগিভিত্তিক একটি পক্ষ হচ্ছে সিএফসি ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ, যার নেতৃত্ব দিচ্ছেন ছাত্রলীগের সাবেক সম্পাদক নাসির হায়দার বাবুল। বগিভিত্তিক ভিএক্স (ভার্সিটি এক্সপ্রেস) পক্ষের নেতৃত্ব দিচ্ছেন চট্টগ্রাম উত্তর জেলা আওয়ামী লীগের নির্বাহী কমিটির সদস্য মঞ্জুরুল আলম মঞ্জু ও বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক এরশাদ হোসেন। মঞ্জুরুল ও এরশাদ দুজনই একই বাড়ির বাসিন্দা।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে উন্নয়নকাজের কমিশনের ভাগ-বাঁটোয়ারা নিয়ে কার্যত সাবেক দুই নেতা নাসির হায়দার বাবুল ও এরশাদ হোসেনের মধ্যে দ্বন্দ্ব চলছে। সাবেক এই দুই নেতার দ্বন্দ্বে ছাত্রলীগের সাধারণ নেতা-কর্মীরা ব্যবহৃত হচ্ছেন।
পুলিশ সূত্র জানায়, তাপস হত্যা মামলার আসামিরা হলেন আশরাফুজ্জামান আশা, রুবেল দে, শাহরীদ শুভ, ফরহাদ হোসেন, এনামুল হাসান, সোহেল খান, রাশেদ হোছাইন, মিজানুর রহমান বিপুল, সরওয়ার পারভেজ, রেজাউল করিম, হাবিবুর রহমান, আবু আহাদ, প্রদীপ চক্রবর্তী, আরিফুল ইসলাম, জালাল আহমেদ, রূপম বিশ্বাস, এরশাদ হোসেন, জাহিদুল আউয়াল, শফিক আহমেদ, শুভগত বড়ুয়া, জায়েদ মাহমুদ, জমির উদ্দিন, কাউছার মিয়া, আসিফ ইকবাল, আবিদ রায়হান, আজমীর আরিফ, মোহাম্মদ হানিফ (স্থানীয় মাদক ব্যবসায়ী), সরওয়ার উদ্দিন রাসেল, শাহাদাৎ হোসেন ও মোহাম্মদ হাসান।
এদিকে গতকাল সোমবার সিএফসি ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের পক্ষের নেতা-কর্মীরা এই হত্যার প্রতিবাদে উপাচার্য কার্যালয় অবরুদ্ধ করেন। তাঁদের অভিযোগ ছিল, তাঁরা আসামির তালিকায় প্রক্টরের নাম রাখায় মামলা নেওয়া হচ্ছে না। একই সঙ্গে এ ঘটনার মদতদাতা হিসেবে প্রক্টরকে দায়ী করেন তাঁরা।
তবে গতকাল রাতে করা মামলায় আসামির তালিকায় নেই প্রক্টরের নাম। এ বিষয়ে জানতে চাইলে সিএফসি ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগের পক্ষের নেতা ও বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সুমন মামুন বলেন, ‘আসামিদের তালিকায় প্রক্টরের নাম দেখে পুলিশ প্রশাসন জানায়, ওপরের নির্দেশ রয়েছে প্রক্টরের নামে মামলা না নেওয়ার। কয়েকবার এ বিষয়ে যোগাযোগ করলেও পুলিশ গড়িমসি করে। পরে আমরা সবাই বসে প্রক্টর যেহেতু একটি প্রতিষ্ঠান, তাই আসামির তালিকা থেকে প্রক্টরের নাম বাদ দিয়ে মামলার সিদ্ধান্ত নিই ও মামলা করি।’
অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (উত্তর) মো. শহিদুল্লাহ প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রক্টরকে আসামি করার জন্য প্রচণ্ড একটা চাপ ছিল। আমাদের চাওয়া ছিল প্রকৃত হত্যাকারীরাই যেন আসামি হয়। ঘটনার বাইরে কাউকে অাসামি করা হলে মামলাটি আদালতে প্রমাণ করা যেমন কঠিন হবে, তেমনি প্রকৃত আসামিরা পার েপয়ে যাবে।’
শহিদুল্লাহ আরও বলেন, ‘আমরা নিহত তাপসের আত্মীয়র জন্য অপেক্ষা করেছিলাম। কিন্ত ওই পরিবারের কেউ চট্টগ্রামে না আসায় তাপসের সহপাঠী ও বন্ধু হাফিজুল ইসলামের মামলা নিয়েছি। এতে পাঁচ-ছয়জন আসামি ঘটনাস্থলে ছিলেন না। আমরা তদন্ত করে আসল হত্যাকারীদের বিরুদ্ধে দ্রুত সময়ের মধ্যে অভিযোগপত্র দাখিল করব।’
মামলার বাদী হাফিজুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘আসামিদের সবাই দোষী। তাঁদের আমি চিনি। তাপস খুনের ঘটনায় কেউ সরাসরি জড়িত, আবার কেউ উসকানি দিয়ে ঘটনাটি ঘটিয়েছে। আমি আমার বন্ধু ও সহপাঠী তাপস খুনের বিচার চাই।’
এদিকে আজ মঙ্গলবার বিজয় দিবসের কর্মসূচিতে ভিএক্স এবং সিএফসি ও ক্যাম্পাস ছাত্রলীগ অংশ নেয়নি। উভয় পক্ষের নেতা-কর্মীরা আজ ক্যাম্পাসে অনুপস্থিত ছিলেন।

No comments

Powered by Blogger.