সিডনিতে ১৬ ঘণ্টার জিম্মিদশা

অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে ক্যাফের মধ্যে অস্ত্রের মুখে কর্মী ও ক্রেতাদের জিম্মি
করে রেখেছে বন্দুকধারী। সেখান থেকে কোনো রকমে বেরুতে পেরে
রুদ্ধশ্বাসে ছুটছেন এক নারী। ছবি: রয়টার্স ও এএফপি
অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে অস্ত্র নিয়ে ক্যাফের মধ্যে ঢুকে কর্মী ও সেখানে আগত লোকজনকে জিম্মি করেন এক ব্যক্তি। গতকাল সোমবার সকালের ওই ঘটনার পর মাঝরাত পর্যন্ত চলে জিম্মিনাটক। এ সময়ে ১৬ ঘণ্টার বেশি রুদ্ধশ্বাস পরিস্থিতির মধ্যে ছিল সিডনি। মধ্যরাতে নিরাপত্তা বাহিনীর আচমকা এক অভিযানের পর পুলিশ জানায়, জিম্মিদশার অবসান ঘটেছে। রাত দুইটার দিকে নিরাপত্তা বাহিনীর ওই অভিযানে অস্ত্রধারী ব্যক্তিসহ তিনজন নিহত হয়। আহত হয় আরও চারজন। এদের মধ্যে তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। জানা গেছে, অস্ত্রধারী ব্যক্তির নাম হারুন মনিস (৪৯)। তিনি ইরানি নাগরিক। নিজেকে ‘আধ্যাত্মিক নেতা’ হিসেবে দাবি করতেন। রাজনৈতিক আশ্রয় নিয়ে তিনি ১৯৯৬ সালে অস্ট্রেলিয়ায় যান। ২০১২ সালে আফগানিস্তানে নিহত অস্ট্রেলীয় সেনাদের পরিবারের সদস্যদের কাছে ‘হুমকিমূলক’ চিঠি লেখার ঘটনায় তিনি দোষী সাব্যস্ত হন।
অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় শহর সিডনির কেন্দ্রস্থলে অবস্থিত লিন্দ্‌ত ক্যাফেতে জিম্মি নাটকের শুরু স্থানীয় সময় সকাল ১০টার দিকে। ক্যাফেটির কাছেই আছে নিউ সাউথ ওয়েলস রাজ্যের পার্লামেন্ট ভবন, রিজার্ভ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়া, মার্কিন কনস্যুলেট এবং কমনওয়েলথ ব্যাংক অব অস্ট্রেলিয়ার ভবন। একটু দূরেই বিখ্যাত সিডনি অপেরা হাউস। বন্দুকধারী ক্যাফের মধ্যে ঢুকেই অস্ত্র দেখিয়ে জিম্মি করে ফেলেন সেখানকার কর্মী ও আগত লোকজনকে। শুরুতে বিভিন্ন সূত্র থেকে বলা হয়, ১০ জন কর্মীসহ অন্তত ৪০ জনকে জিম্মি করা হয়েছে। ঘটনা জানার পর পুলিশ দ্রুত আশপাশের এলাকা ঘিরে ফেলে। কিছুক্ষণের মধ্যে আধা সামরিক বাহিনীর সদস্যদেরও ওই এলাকায় মোতায়েন করা হয়। কাছে-পিঠে যেসব অফিস আছে, সেখানকার লোকজনকে সরিয়ে নেওয়া হয়। এরপর পুলিশ জিম্মিদের উদ্ধারের তৎপরতা শুরু করে। ক্যাফের কর্মী ব্রুনো ঘটনার সময় বাইরে ছিলেন। তিনি অস্ট্রেলিয়ান ব্রডকাস্টিং করপোরেশনকে (এবিসি) বলেন, ‘আমি বাইরে থেকে দরজার দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলাম। তখন দেখলাম, ভেতরের সবাই হঠাৎ বসে পড়ল। মাথায় হ্যাট পরা এক ব্যক্তি শুধু পায়চারি করছেন।’ হ্যাট পরা ওই ব্যক্তিকেই জিম্মিকারী বলে উল্লেখ করেন ব্রুনো। স্থানীয় গণমাধ্যম জানিয়েছে, জিম্মিকারীর হাতে ছিল একটি শটগান। লোকজনকে জিম্মি করার পর তাঁর পক্ষ থেকে বিভিন্ন দাবিদাওয়া জানানো হয় বলে স্থানীয় গণমাধ্যম জানায়। কিন্তু পুলিশের অনুরোধে গণমাধ্যম তা প্রকাশ করেনি। একপর্যায়ে দেখা যায়, কালো কাপড়ের একটি ফ্লাগ ক্যাফের জানালায় ধরে রাখতে জিম্মি ব্যক্তিদের বাধ্য করা হয়েছে। এতে আরবিতে কিছু লেখা ছিল। এতে করে ঘটনার সঙ্গে সংঘবদ্ধ ইসলামি কোনো জঙ্গিগোষ্ঠীর জড়িত থাকার আশঙ্কা ছড়িয়ে পড়ে।
জরুরি বৈঠকে বসেন প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবোট। কিন্তু সরকারের পক্ষ থেকে তখন জানানো হয়, এ ঘটনার সঙ্গে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা আছে বলে মনে হচ্ছে না। প্রধানমন্ত্রী টনি অ্যাবোট বলেন, এ ঘটনার পেছনে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য আছে বলে আভাস পাওয়া গেছে। ক্যাফেটির ঠিক উল্টো পাশে মার্টিন প্লেস নামের ভবনে ‘চ্যানেল নাইন’ টেলিভিশনের কার্যালয়। টেলিভিশনটির সাংবাদিক ক্রিস রেজন খুদে ব্লগ লেখার ওয়েবসাইট টুইটারে লেখেন, ‘আমাদের সংবাদকক্ষ থেকে দেখা যাচ্ছে, প্রায় দুই ঘণ্টা পর পর জিম্মিদের অবস্থান বদল করানো হচ্ছে। জিম্মির সংখ্যা ১৫ জনের মতো।’ জিম্মিদশার প্রায় ছয় ঘণ্টা পর তিন ব্যক্তি ওই ক্যাফে থেকে বেরিয়ে আসতে সক্ষম হন। এর ঘণ্টা খানেক পর বেরিয়ে আসেন আরও দুই নারী। তবে তাঁরা পালিয়ে আসেন, নাকি জিম্মিকারী তাঁদের ছেড়ে দেয়, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। স্থানীয় সময় রাত দুইটার পর হঠাৎ ঘটনার নাটকীয় পরিবর্তন ঘটে। ক্যাফে থেকে কয়েকজনকে বেরিয়ে আসতে দেখে সশস্ত্র নিরাপত্তাকর্মীরা দ্রুতগতিতে এগিয়ে যান। তখন বাইরে থেকে গোলাগুলি ও চিৎকারের জোরালো শব্দ শোনা যায়। এর পর পরই আহত লোকজনকে বের করে আনেন নিরাপত্তাকর্মীরা। স্বাস্থ্যকর্মীরা এগিয়ে যান। আহত ব্যক্তিদের স্ট্রেচারে তুলে দ্রুত হাসপাতালে নেওয়া হয়। প্রায় ১৫ মিনিট এ অবস্থা চলার পর পুলিশের পক্ষ থেকে টুইটারে বলা হয়, ‘সিডনির জিম্মি নাটকের অবসান হয়েছে। বিস্তারিত শিগগির জানানো হবে।’

No comments

Powered by Blogger.