আমেরিকা কি শিক্ষা নেবে?

আফগানিস্তানে মৌলবাদী তালেবানদের বিরুদ্ধে আমেরিকার যুদ্ধ শেষ। অন্তত আনুষ্ঠানিকভাবে রোববার কাবুলে এক অনুষ্ঠান করে জানিয়ে দিয়েছে মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট ন্যাটো। যদিও মার্কিন রাষ্ট্রপতি বারাক ওবামা তার দ্বিতীয়বারের নির্বাচনী প্রচারেই জানিয়ে রেখেছিলেন, ২০১৫ সালে মার্কিন সেনারা আফগানিস্তান থেকে স্বদেশে ফিরবে। তিনি অবশ্য তার কথা রেখেছেন, কিন্তু বিদায় বেলায় মার্কিন প্রশাসনের কাছে প্রশ্ন দাঁড়ালো - আফগানিস্তানে ১৩ বছর ধরে জেহাদি তালেবানদের সঙ্গে যুদ্ধ করে কী পেলো তারা? সেখানে সাফল্যের বদলে পরাজয়ের গ্লানি নিয়েই ফিরতে হয়েছে তাদের। রোববার বিদায়ী অনুষ্ঠানে ন্যাটো সেনাদের সামনেও ঘুরেফিরে একই জিজ্ঞাসা উঁকি দিয়েছে। ১৩ বছর মরণপণ লড়াই করে তাদের লাভ না লোকসান হলো? বিস্ময়ের ব্যাপার, বিদায়ী অনুষ্ঠানে মার্কিন সেনাদের আফগানিস্তান ছেড়ে যাওয়ার দরুন কেউ কোনো চোখের জল ফেললো না। আফগানদের সঙ্গে মার্কিন সেনারা ১৩টি বছর কাটিয়েও কি তাদের মন জয় করতে পারেনি? নাকি মার্কিনীদের উপস্থিতি দুর্ব্যবহার ও নৃশংসতা তাদের মনে অসন্তোষ তৈরি করেছে? আমেরিকায় ৯/১১-তে সন্ত্রাসবাদী হানার পর প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ আফগানিস্তানে মার্কিন হানাদারির নির্দেশ দেন। যুদ্ধের নির্দেশ দেবার সময় বুশ তার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে, এমনকি মন্ত্রিসভার সঙ্গেও কোনো রকম পরামর্শ না করে আফগানিস্তানে যুদ্ধের নির্দেশ দেন। মার্কিন প্রশাসনের অনেকেরই মত হচ্ছে, আফগানিস্তান-যুদ্ধে জয় তো দূরের কথা আমেরিকাকে শোচনীয় পরাজয় নিয়ে দেশে ফিরতে হচ্ছে। আফগান যুদ্ধে আমেরিকার সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ সঙ্গী বৃটেনকেও অপমানজনক পরাজয় স্বীকার করে এর আগেই আফগানিস্তান ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। ২০০১ সালে আফগানিস্তান আক্রমণের পর আমেরিকার একটাই লাভ হয়েছে, তাহলো তালেবানদের সরকার থেকে ক্ষমতাচ্যুত করা। কিন্তু এর জন্য বিপুল পরিমাণ মূল্যও গুনতেও হয়েছে আমেরিকাকে। ন্যাটো বাহিনীর আড়ালে অন্তত ৫০টি দেশকে নিয়ে আফগানিস্তানে একটি নিরাপত্তা বলয় তৈরি করা হয়। এরা নিজ নিজ দেশের সেনা সরবরাহ থেকে শুরু করে সমস্ত রসদ জোগান দিয়ে আমেরিকাকে সহায়তা করে। কিন্তু তাতেও শেষ রক্ষা হয়নি। যুদ্ধ চালাতে আমেরিকাকে ব্যয় করতে হয়েছে ২ লক্ষ কোটি ডলার। এত বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করেও আমেরিকা আফগান জনগণকে নিরাপত্তা দিতে পারেনি। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী উন্নতি ঘটাতে পারেনি। উল্টো হাজার হাজার অসামরিক আফগান মানুষের মৃত্যু হয়েছে, বাসস্থান থেকে তাদের সপরিবারে উৎখাত হতে হয়েছে। এক হিসাবে দেখা যায়, ন্যাটো বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ৩,৫০০ বিদেশী সেনা প্রাণ হারিয়েছে লড়তে গিয়ে। এর মধ্যে মার্কিন সেনার সংখ্যা হচ্ছে ২,২২৪ জন। আফগান নিরাপত্তা বাহিনীর অন্তত ৫০০০ জনকেও প্রাণ দিতে হয়েছে। ২০১০ সালে আক্রমণ তীব্র করার জন্য প্রেসিডেন্ট ওবামার নির্দেশে ১,৪০,০০০ সেনা পাঠানো হয় আফগানিস্তানে। ফল কী হয়েছে, ভালো বলতে পারবে আমেরিকা। তবে যুদ্ধ আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হলেও, মার্কিন সেনারা দেশে ফিরলেও, সব সেনা কিন্তু আফগানিস্তান থেকে যাচ্ছে না। অন্তত ১২ থেকে ১৩ হাজার মার্কিন সেনা আফগানিস্তানে থেকে যাবে। আগামী বছর এর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়াবে ১৭০০০। দু’দেশের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী, আফগান নিরাপত্তা বাহিনীকে প্রশিক্ষণ দিতে নাকি এই সেনারা থাকবে। লন্ডনের ‘গার্ডিয়ান’ পত্রিকা মন্তব্য করেছে, বিগত অর্ধশতাব্দীতে এমন শোচনীয় পরাজয় বৃটেন দেখেনি, আর আধুনিক বিশ্বে এমন বিপর্যয়কর হার দেখেনি আমেরিকা। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে এ থেকে আমেরিকা, বৃটেন কি শিক্ষা নেবে?

No comments

Powered by Blogger.