১ দিনের পুলিশ কমিশনার শিশু সাদিক by শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ

১০ বছরের শিশু সাদিকের ইচ্ছে পুলিশ কমিশনার হওয়ার। তাই তাকে খাঁকি টুপি আর পুলিশের পোশাক পরিয়ে বসিয়ে দেয়া হলো কমিশনারের চেয়ারে। ঘটনাটা ঘটেছে বুধবার ভারতের হায়দারাবাদে। সাদিকের বাড়ি তেলেঙ্গানার করিমনগর জেলায়। দীর্ঘদিন ধরে সে ব্লাড ক্যান্সারে ভোগছে। ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছে পুলিশে চাকরি করার। বাবা, মা ও স্বজনদের কাছ থেকে শুনেছে পুলিশে চাকরি করলে অনেক গুণ্ডাদের শাস্তি দেয়া যায়। তাই স্বপ্ন ছিলো একদিন পুলিশ হবেই।  এবং মন দিয়ে কাজ করে সে হয়ে উঠবে পুলিশ কমিশনার।

>> এক দিনের পুলিশ কমিশনার সাদিক যা আদেশ করবে তাই পালন করবে সবাই। ওর পাশে বসে আদেশের অপেক্ষায় থাকলেন মাহেন্দ্র রেড্ডি।
কিন্তু বাধা হয়ে দাঁড়ালো ভাগ্য। সাদিকের শরীরে বাসা বাঁধলো ব্লাড ক্যান্সার। কঠিন এ রোগটি তাকে তিলে তিলে শেষ করে দিচ্ছে। কিন্তু এভাবে শেষ হয়ে গেলে তো পুলিশ কমিশনার হওয়া যাবে না। সাদিক হয়তো মনে মনে ভেবেছে, যদি একটা ইচ্ছেপূরণ দৈত্য পাওয়া যেতো। দৈত্যটাকে বললেই যে কোনো দিন এসে তাকে উড়িয়ে নিয়ে যাবে। এবং গুন্ডাদের ধরার জন্য পুলিশ কমিশনার বানিয়ে দেবে। তখনো সে জানতো না, সত্যি সত্যিই যে একটা ইচ্ছেপুরণ দৈত্য আছে। হঠাৎ একদিন ওর দরজায় হাজির হলো দৈত্যটা। জিজ্ঞেস করলো, তুমি কি হতে চাও?
সাদিক জানালো ইচ্ছের কথা। অমনি ওটা সব ব্যবস্থা করে ফেললো এবং তাকে পুলিশ কমিশনারও বানিয়ে দিলো। সাদিকের সেই ইচ্ছেপুরণ দৈত্যটার নাম ‘উইশ ফাউন্ডেশন’। দেখতে কিন্তু দৈত্যের মতো নয়, অনেকগুলো মানুষ মিলে এ ফাউন্ডেশনটি তৈরি করেছে। এরা সাদিকের মতো অসুস্থ শিশুদের ইচ্ছেপুরণ করার জন্য কাজ করে। সাদিকের জন্যও এরা কাজ করলো। কথা বললো হায়দারাবাদের পুলিশ কমিশনার মাহেন্দ্র রেড্ডির সাথে। তিনিও সানন্দে রাজি হয়ে গেলেন। অবশেষে সব আয়োজন করে বুধবার সাদিককে বসিয়ে দেয়া হলো কমিশনারের চেয়ারে। সে তখন এক দিনের জন্য পুলিশ কমিশনার। সে যা আদেশ করবে তাই পালন করবে সবাই। ওর পাশে বসে আদেশের অপেক্ষায় থাকলেন মাহেন্দ্র রেড্ডি। সামনে, পেছনে অসংখ্য পুলিশ। সবাই মিলে স্যালুট করলো সাদিককে।
কিন্তু এতটুকু সাদিক আর কি আদেশ করবে? সবাই তাকে জিজ্ঞেস করলো, কমিশনার হিসাবে সে এখন কি করতে চায়? ও সোজা সাপটা বলে দিলো ছোটবেলার সেই ইচ্ছের কথা ‘আমি গুণ্ডাদের ধরতে চাই।’ সাদিককে কমিশনারের চেয়ারে বসিয়ে আনন্দিত মাহেন্দ্র রেড্ডিও। তিনি বললেন, আমি অসুস্থ ছেলেটির ইচ্ছে পুরণ করতে পেরে তৃপ্তি পাচ্ছি। ইচ্ছেপুরণ দৈত্য অর্থাৎ উইশ ফাউন্ডেশনের একজন পুষ্প দেবি। তিনি বললেন, আমরা অসুস্থ শিশুদের ইচ্ছেপুরণের জন্য চেষ্টা করি। ওরা যেন বেঁচে থাকার বাকি দিনগুলো আনন্দে কাটাতে পারে। আমাদের এ ফাউন্ডেশন অনেক শিশুদেরই ইচ্ছে পুরণ করেছে। শিশুদের কেউ পছন্দের তারকাদের সাথে আড্ডা দিতে চেয়েছে। আবার কেউ রাজনৈতিক নেতাদের সাথে সময় কাটাতে চেয়েছে।
তিনি জানান, গত আগস্টে তেলেঙ্গানার মুখ্যমন্ত্রী কে. চান্দরশেখর রায় এক অসুস্থ ছেলের সাথে হাসপাতালে মিটিং করে তার ইচ্ছে পূরণ করেছেন। পুষ্প দেবি জানালেন, তেলেঙ্গানার খাম্মাম জেলার এক অসুস্থ মেয়ের ইচ্ছে অভিনেতার সাথে দেখা করার। তিনি  মেয়েটার ইচ্ছে পুরণ করার জন্য তেলেগুর অভিনেতাদের কাছে আহ্বান জানিয়েছেন।

হিন্দুস্তান টাইমস, গালফ নিউজ অবলম্বনে শাহ মুহাম্মদ মোশাহিদ

No comments

Powered by Blogger.