চট্টগ্রামে শেখ মহিউদ্দিন হত্যার এক বছরে মামলার অগ্রগতি নেই by ওমর ফারুক

গত বছরের ৭ অক্টোবর চরপাথরঘাটায় শেখ মহিউদ্দিনকে (৪৮) প্রকাশ্য কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার ঘটনা ঘটে। অপরাধ ছিল গায়ে ফুটবল পড়া নিয়ে শিশুদের মারধরের প্রতিবাদ ও পরে সালিশি বৈঠকে মাতবরদের দাবি মোতাবেক দুই লাখ টাকা জামানত প্রদানে অস্বীকৃতি। এ কারণে ক্ষুদ্ধ স্থানীয় মহব্বত আলী গং তাকে খুন করে। শত বছর আগে ভিন্ন জেলা থেকে কর্ণফুলীর চরপাথরঘাটায় বসত গড়ে ছিলেন শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিনের পূর্বপুরুষেরা। মহিউদ্দিন হত্যা এক বছরে মামলার কোনো অগ্রগতি নেই। নিহতের পরিবার বহিরাগত ও খুনিরা স্থানীয় ইস্যু তৈরি করে মামলায় রাজনৈতিক ও আর্থিক প্রভাব তৈরি করা হয়েছে।
ঘটনার আগে ৫ আগস্ট খেলার সময় পথচারীর গায়ে ফুটবল পড়াকে নিয়ে দুই পরে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার রেশ ধরে হত্যা করা হয় শেখ মোহাম্মদ মহিউদ্দিনকে। হত্যার ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে কুখ্যাত সন্ত্রাসী মহব্বত আলীসহ ১৮ জনের নাম উল্লেখ করে মামলা দায়ের করা হলেও স্থানীয় ও বহিরাগত ইস্যুর প্রভাবে কর্ণফুলী থানা পুলিশের ভূমিকা ছিল রহস্যজনক। এ কারণে বাদি পরিবারের আপত্তিতে মামলাটি তদন্তের জন্য হস্তান্তর করা হয় নগর গোয়েন্দা পুলিশের কাছে; কিন্তু গত এক বছরে অধিকাংশ আসামি রয়ে গেছে অধরা। তবে এলাকাতেই আছেন মামলার এজাহারভুক্ত আসামিরা। আসামিদের অবস্থানের ব্যাপারে সংবাদ দেয়া হলেও তাদের গ্রেফতারে পুলিশের কোনো সাড়া মিলছে না।
নিহতের পরিবারের অভিযোগ, পুলিশ রাজনৈতিক ও বিত্তবানদের তদবিরে মূল ঘটনাটি ধামাচাপা দেয়ার অপচেষ্টা করছে। মামলার এজাহারভুক্ত অধিকাংশ আসামিকে বাদ দিয়ে চার্জশিট দেয়ার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। পুলিশের সাথে আসামিদের এ সংক্রান্তে গোপন চুক্তি হওয়ার বিষয়ে এলাকায় গুঞ্জন উঠেছে। আর আসামিরা চলাফেরা করছে প্রকাশ্যে। এমনকি তারা রাতে নিজ নিজ বাড়িতেও অবস্থান করছে; কিন্তু পুলিশকে সংবাদ দেয়া হলে পুলিশ বাদি পরিবারকে এ ব্যাপারে নাক না গলানোর এবং তাদের বিরক্ত না করার পরামর্শ দেন বলে অভিযোগ করেন বাদি পরিবারের সদস্য ও নিহতের ছোট ভাই শেখ মোহাম্মদ ফয়সল। তিনি নয়া দিগন্তকে জানান, আসামিদের সাথে পুলিশ আঁতাত করে এবং তদন্তকারী কর্মকর্তার পরামর্শ মোতাবেক আসামিরাই মোহাম্মদ সালাউদ্দিন নামে অন্য এক আসামিকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। পরে পুলিশ তাকে আদালতে উত্থাপন করেন। আদালতের কাছে ওই আসামি পুলিশের শিখিয়ে দেয়া মোতাবেক ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দেয়। তাতে মূল পাঁচ-ছয় আসামি এ ঘটনার সাথে জড়িত ছিলেন না বলে আদালতের কাছে দেয়া স্বীকারোক্তিতে জানান তিনি। এর মাধ্যমে আসামিদের বাদ দেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়। এ ছাড়া গত এক বছরে আটক তিন আসামির মধ্যে একজনকেও রিমান্ডে না নেয়ার অভিযোগ করা হয়। তারা বলেন, আসল ঘটনা পুলিশ উদঘাটন করেছে বলেই হয়ত আসামিদের রিমান্ডে নেয়নি; কিন্তু এক বছরে মামলার চার্জশিটও দেয়া হয়নি। কিন্তু কেন সময়পেণ করা হচ্ছে তা-ও অজানা।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ আগস্ট ইছানগর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের পাশে শিশুরা খেলার সময় বলটি নুরুল আলম নামে এক ব্যক্তির গায়ে পড়ে। এরই সূত্র ধরে শিশুদের মারধরের প্রতিবাদ করায় কয়েক যুবকের সাথে মহব্ববত আলীর অনুসারীদের হাতাহাতি ও পরে সংঘর্ষ হয়। ঘটনার পর থেকে উভয় পরে মধ্যে সালিস মীমাংসার জন্য বৈঠক হয়। সালিসে মহিউদ্দিনের কাছ থেকে সালিসকারীরা দুই লাখ টাকা জামানত দাবি করেন; কিন্তু প্রতিপ মহব্বত আলী থেকে কোনো জামানত চাওয়া হয়নি। এ কারণে দাবিকৃত টাকা মহিউদ্দিন জমা দিতে অস্বীকৃতি জানান। এতে ুব্ধ হয় প্রতিপ। এর পরে একটি মামলার নির্ধারিত দিনে আদালতে হাজিরা দিতে সকাল ৯টায় ঘর থেকে বের হয়ে রিকশায় কর্ণফুলী নদীর ঘাটে যাওয়ার পথে প্রকাশ্যে মহিউদ্দিনকে কুপিয়ে ও গলা কেটে খুনের পর পাশের ড্রেনে ফেলে দেয় দুর্বৃত্তরা। এ ঘটনায় দু’টি গ্র“পে মোট ১৮-২০ সদস্য কিলিং মিশনে অংশ নেয়। ঘটনার দিন সকালে মহিউদ্দিন বাড়ি থেকে বের হওয়ার পর তার গতিবিধির ওপর নজরদারি করা হয়। কর্ণফুলী ডকইয়ার্ড গেটে পৌঁছামাত্র হামলা চালিয়ে তাকে হত্যা করা হয়।

নিহতের পরিবারের সদস্য লামিয়া তাবাচ্ছুম নয়া দিগন্তকে জানান, এ ঘটনার পর স্থানীয়রা খুনিদের বিচার দাবি করে এলাকায় ব্যাপক পোস্টারিং, সভা-সমাবেশ ও মানববন্ধন করেন; কিন্তু তাতেও প্রশানের টকন নড়েনি। নিহতের ভাই শেখ মোহাম্মদ ফয়সল অভিযোগ করেন, আসামিরা মামলা নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি করলে তাদের হত্যার ভয় দেখাচ্ছে। তারা প্রকাশ্যে ঘুরছে আর নিহতের পরিবারের সদস্যদের রাস্তাঘাটে দেখলে উসকানিমূলক ও ব্যঙ্গ করে কথাবার্তা বলছে।
এ বিষয়ে ফোনে যোগাযোগ করা হলেও মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা দেবাশিষ কোনো মন্তব্য করেননি।

No comments

Powered by Blogger.