পুরান ঢাকার উন্নয়ন পরিকল্পনা ফাইলবন্দী by হামিম উল কবির

আধুনিক শহরে রূপান্তরের উদ্দেশ্যে পুরান ঢাকার জন্য নতুন পরিকল্পনা ফাইলবন্দী হয়ে আছে। রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক) জমা দেয়া ফাইলটি গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে ধুলো জমে আছে বলে জানা গেছে। এ নিয়ে কোনো মিটিং হচ্ছে না। মোগল আমলে গড়ে ওঠা পুরান ঢাকা পরিণত হয়েছে ঘিঞ্জি শহরে। পুরান ঢাকার ভেতরে এমন অনেক রাস্তা আছে, যেখানে পাশাপাশি দু’জন মানুষ হেঁটে যেতে পারে না। বাংলাদেশের বিপজ্জনক শহরগুলোর মধ্যে পুরান ঢাকাকে অন্যতম হিসেবে ধরা হয়। ২০১০ সালের জুন মাসে পুরান ঢাকার নিমতলীর নবাব কাটরায়  সংঘটিত আগুনে কমপক্ষে ১১৮ জন মানুষ মারা যায়, আহত হয়েছিল শতাধিক। এরপরেই রাজউক পুরান ঢাকাকে ঢেলে সাজানোর কথা বলে; কিন্তু কাজে গতি পায়নি। এ বিষয়ে রাজউকের সদস্য (পরিকল্পনা) শেখ আবদুল মান্নান জানিয়েছেন, পুরান ঢাকাকে আধুনিক শহরে রূপান্তরের একটি পরিকল্পনা রাজউক গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে জমা দিয়েছে। আমরা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের অপেক্ষায় আছি। পরিকল্পনায় ১৯৫৩ সালের টাউন ইমú্রুভমেন্ট অ্যাক্ট পরিবর্তনের সুপারিশ করা হয়েছে। এই অ্যাক্টটি পরিবর্তন করা না হলে পুরান ঢাকার জন্য কোনো কিছু করা সম্ভব হবে না।

পুরান ঢাকার চার থেকে পাঁচ ফুট রাস্তা দিয়ে কোনোমতে রিকশায় করে, ঠেলাগাড়ি দিয়ে অথবা মাথায় করে প্রয়োজনীয় মালামাল আনানেয়া করতে হয়। ঘনবসতিপূর্ণ এ শহরেই রয়েছে ঢাকা শহরের ৪০০ বছরের স্মৃতিচিহ্ন। এ শহরটিকে আধুনিক করার জন্য রাজউক পরিকল্পনা নিয়েছে। কিন্তু কিভাবে বাস্তবায়ন করা হবে, তা নিয়ে রাজউকের পরিকল্পনাবিদদের মধ্যেই সংশয় রয়েছে। কারণ ঘনবসতি ও ঘিঞ্জি শহর হলেও এটাকে বাংলাদেশের ‘বিজনেস হাব’ ধরা হয়। কয়েক হাজার কোটি টাকার ব্যবসা হয় এখানে। এখানে রয়েছে কয়েক হাজার বড়-ছোট কারখানা। রয়েছে শতাধিক প্লাস্টিক কারখানা, জুতার কারখানা। নানা ধরনের রাসায়নিকের ব্যবসা আছে। দাহ্য পদার্থ যেমন ইথানল, মিথানল, হাইড্রোজেন পার অক্সাইড, লুব্রিকেন্ট তেল, নানা ধরনের স্পিরিট, কস্টিক সোডা, নানা ধরনের আঠা, প্লাস্টিক গ্র্যানিউলস ইত্যাদি ব্যবসা রয়েছে। নানা ধরনের যন্ত্রপাতির ব্যবসা রয়েছে, আছে যন্ত্রপাতির তৈরির কারখানা। একটি বিশাল ব্যবসাকেন্দ্র এবং ঘনবসতিপূর্ণ এলাকাকে ঢেলে সাজিয়ে নতুন ও আধুনিক শহরে রূপান্তর করতে হলে সব দিক বিবেচনা করেই সামনে অগ্রসর হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন পরিকল্পনাবিদরা।
পরিকল্পনাবিদেরা পুরান ঢাকাকে সিঙ্গাপুরের আদলে নতুন করে গড়ার সুপারিশ করেছেন। বিশিষ্ট পরিকল্পনাবিদ শেলটেকের এমডি ড. তৌফিক এম সেরাজ জানিয়েছেন, সিঙ্গাপুরকে যেভাবে আধুনিক শহরে রূপান্তর করা হয়েছিল আমাদের পুরান ঢাকাকে সেভাবেই আধুনিক করে গড়ে তোলা যায়। সেজন্য সবদিক বিবেচনা করে পরিকল্পনা করতে হবে। নতুন একটি জায়গায় কয়েক হাজার অ্যাপার্টমেন্ট নির্মাণ করে, এর সাথে প্রয়োজনীয় অবকাঠামো তৈরি করে যে এলাকাকে নতুন করে গড়তে হবে সে এলাকার মানুষকে নির্মিত অ্যাপার্টমেন্টে স্থানান্তর করা হয় সিঙ্গাপুরে। এরপর খালি করে দেয়া এলাকাকে নতুন করে গড়ে পুরনোদের আবার তাদের জায়গায় ফিরিয়ে আনা হয়। এভাবেই সিঙ্গাপুরকে রূপান্তর করা হয় আধুনিক শহরে।
এ ব্যাপারে রাজউকের সাবেক চেয়ারম্যান মো: নুরুল হুদা জানিয়েছেন, পুরান ঢাকাকে নতুন করে গড়ে তোলার জন্য রাজউক কামরাঙ্গীরচরকে মডেল হিসেবে নিয়েছে। এ এলাকায় সরকারের অনেক খাস জমি রয়েছে। এখানে কিছু এপার্টমেন্ট নির্মাণ করে পুরান ঢাকার যে অংশকে ভাঙা হবে সেখানকার বাসিন্দাদের পুনর্বাসন করা হবে। পুরান ঢাকার নির্দিষ্ট অংশ নতুন করে গড়ে তোলা হলে সেখানে সাবেক বাসিন্দাদের নতুন এপার্টমেন্টে তুলে দিয়ে আবারো পুরান ঢাকার অন্য অংশ ভাঙা হবে। এভাবে ধাপে ধাপে পুরান ঢাকাকে আধুনিক শহরে রূপ দেয়ার পরিকল্পনা করা হয়। এ উদ্দেশ্যে একটি সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিট স্টাডি) করা হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.