চলতি থেরাপি- আফটার ঈদ by ইকবাল খন্দকার

ঈদের আগে আমি কোনোভাবেই বিয়ের পিঁড়িতে বসব না। তার কাছে জানতে চাওয়া হলো, ঈদের পর হলে তার কী এমন সুবিধা, আর ঈদের আগে হলে কী এমন অসুবিধা

ক’দিন আগেও ঈদ আসি আসি করছিল। অবশেষে ঈদ এলো, এসে আবার চলেও গেল। আহ, ঈদের জন্য কত প্রস্তুতিই না ছিল আমাদের। ঈদের-পরবর্তী অবস্থা নিয়ে কথা বলার আগে সেই সব প্রস্তুতির কথা একটু বলে নিই। ঈদের আগে আবু বকর ভাইয়ের বাড়িতে গেলাম জরুরি একটা কাজে। গিয়ে দেখি তিনি বাড়ি নেই। ভাবীকে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় গেছেন। ভাবী বললেন বাজারে গেছেন। রেইনকোট কিনবে। রেইনকোট কিনবে! বলেন কী? রেইনকোট কেন? বর্ষার সিজন তো চলে গেছে সেই কবে। এই অফ সিজনে রেইনকোট দিয়ে কী করবে? ভাবী বললেনÑ ঈদে কাজে লাগানোর জন্য। আমি বিস্ময়ের চরম সীমানায় পৌঁছে বললামÑঈদে রেইনকোট কী কাজে লাগাবে? ভাবী বললেনÑ গত ঈদে সেমাই খেতে গিয়ে একটা জামাও ভালো রাখেনি। সব ক’টার মধ্যে সেমাইয়ের ঝোল লাগিয়ে বিনাশ বানিয়ে ফেলেছে। এবার যাতে জামায় সেমাইয়ের ঝোল লাগতে না পারে, এ জন্য সেমাই খেতে বসার আগে রেইনকোট গায়ে দিয়ে নেবে। এবার বলা যাক জব্বার ভাইয়ের কথা। জব্বার ভাইয়ের মাথায় জব্বর চুল। কিন্তু ঈদের তিন দিন আগে মাথা কামিয়ে ফেললেন। আমরা জিজ্ঞেস করলামÑ কেন জব্বার ভাই, মাথা কামালেন কেন? চুলে উকুনটুকুন হয়েছে নাকি? জব্বার ভাই বললেনÑ গত রোজার ঈদে প্লেটে চুমুক দিয়ে সেমাই খেতে গিয়ে চুলে সেমাইয়ের রস লাগিয়ে ফেলেছিলাম। তারপর যখন ঘুমাতে গেলাম, চুলে উঠল পিঁপড়া। বাপরে বাপ, সে কী কামড়! এবার সেমাই খাওয়ার সময় যাতে চুলে সেমাই লাগতে না পারে, তাই মাথাই কামিয়ে ফেলব।
এবার বলা যাক আমার এক দাদার ঘটনা। দাদার মন খুব খারাপ। জিজ্ঞেস করলাম মন খারাপ কেন? দাদা বিশাল বড় একটা শ্বাস ফেলে বললেনÑ কোরবানির ঈদ গেল তো, তাই মনটা খারাপ। আমি অবাক হয়ে বললামÑ বুঝলাম না বিষয়টা। দাদা বললেনÑ কোরবানির ঈদের দিন দুপুরে আমি গরুর  গোশত দিয়ে ভাত খেতে বসেছি। গোশতটা খুব একটা সুবিধার ছিল না। কেমন জানি রাবারের মতো ছিল। তাই টেনে টেনে ছিঁড়তে হচ্ছিল। এক সময় আমি গোশতে কামড় দিয়ে বেশ জোরে একটা টান মারলাম। ব্যস, আমার চাপার একটা দাঁত খুলে পড়ে গেল। দাঁত খুলে গেছে, তাতে আমার কোনো দুঃখ নেই বা ছিল না। দুঃখ একটাইÑ দাঁতটা খুলে গিয়ে ঠাস করে বাড়ি লাগল তোর দাদীর চমশার কাচে। তোর দাদী আমার পাশে বসেই খাচ্ছিল কি না। তো আমার দাঁতের বাড়ি লেগে তোর দাদীর চশমার কাচটা আর আস্ত থাকল না রে! শখের চশমার জন্য তোর দাদীর সে কী কান্নাকাটি!
আমার এক খালাতো বোনের বিয়ের কথাবার্তা চলছিল বেশ ক’মাস ধরেই। অবশেষে মুরব্বিরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হলেন যে, ঈদের দু-একদিন আগেই বিয়ের কাজটা সম্পন্ন করে ফেলা হবে। মুরব্বিদের এই সিদ্ধান্ত কোনোভাবেই মেনে নিতে পারল না খালাতো বোন। সে বললÑ বিয়ে হলে হতে হবে ঈদের পর। ঈদের আগে আমি কোনোভাবেই বিয়ের পিঁড়িতে বসব না। তার কাছে জানতে চাওয়া হলো, ঈদের পর হলে তার কী এমন সুবিধা, আর ঈদের আগে হলে কী এমন অসুবিধা। খালাতো বোন বললÑ ঈদের আগে হলে শুধু অসুবিধাই না, রীতিমতো জীবনের ঝুঁকি। ঈদের আগে সবার বাড়িতেই  কোরবানির গরু থাকে। আর ষাঁড় গরু লাল কাপড় দেখলে তেড়ে আসে। বিয়েতে আমি লাল বেনারসি পরি আর ষাঁড়ের হাতে মারা পড়ি আর কী!
এবার আরেকটা ঘটনা বলে শেষ করা যাক। ঈদের পরদিন দুলাভাইয়ের বাড়িতে গেলাম। গিয়ে দেখি তাদের আলমারিতে একটা হ্যান্ডমাইক। কী ব্যাপার দুলাভাই, হ্যান্ডমাইক কেন? হকারি করবেন নাকি? দুলাভাই বললÑ গত বছর কোরবানির গরু নিয়ে বাজার থেকে ফেরার পথে মানুষের কাছে গরুর দাম বলতে বলতে গলা ভেঙে ফেলেছিলাম। এবার যাতে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি না ঘটে, তাই হ্যান্ডমাইক কিনেছিলাম। ভালোই উপকার দিয়েছে। বলেছি আস্তে করে, সাউন্ড হয়েছে জোরে। গলার ওপর কোনো চাপ পড়েনি।

No comments

Powered by Blogger.