মামলা থেকে মুক্ত হলেন লিমন

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) গুলিতে পা হারানো ঝালকাঠির রাজাপুরের তরুণ লিমন হোসেন অবশেষে তাঁর বিরুদ্ধে করা সব মামলা থেকে অব্যাহতি পেয়েছেন। আজ বৃহস্পতিবার র‌্যাবের করা দ্বিতীয় মামলা থেকেও অব্যাহতি পাওয়ায় এখন তিনি মামলামুক্ত। এতে মামলার বোঝা নিয়ে লিমন যে অভিশপ্ত জীবন কাটাচ্ছিলেন, তা থেকে মুক্ত হলেন তিনি।  সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে করা মামলা থেকে দীর্ঘ তিন বছর সাত মাস পর আজ লিমনকে অব্যাহতি দিয়েছেন আদালত। সহকারী সরকারি কৌঁসুলি মো. হোসেন আকনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঝালকাঠির মুখ্য বিচারিক হাকিম মো. আবু শামীম আজাদ আজ এ আদেশ দেন। ফৌজদারি কার্যবিধির ৪৯৪(ক) ধারা অনুযায়ী লিমনকে অব্যাহতি দেওয়া হয়েছে। শুনানির সময় আদালতের এজলাসকক্ষে ছিলেন লিমন। তাঁর মা হেনোয়ারা বেগম ছিলেন আদালতের সামনে। পরে প্রথম আলোকে লিমন বলেন, ‘আমি যে নির্দোষ এবং র‌্যাব যে আমার বিরুদ্ধে সাজানো মামলা করেছিল, তা আজ প্রমাণিত হয়েছে।’

আইন ও সালিশ কেন্দ্রের করা রিট আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে সরকারকে দেওয়া হাইকোর্টের নির্দেশ অনুযায়ী ক্ষতিপূরণ দাবি করেন লিমন। নানা বাধাবিপত্তি পেরিয়ে তিনি এখন ঢাকার অদূরে সাভারে গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) পর্বে পড়ছেন। গত বছরের ২৯ জুলাই র‌্যাবের করা অস্ত্র মামলা থেকে অব্যাহতি পান লিমন। ঝালকাঠির বিশেষ ট্রাইব্যুনাল-২-এর বিচারক কিরণ শঙ্কর হালদার অব্যাহতির ওই আদেশ দেন। গত বছরের ৯ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় লিমনের বিরুদ্ধে র‌্যাবের করা দুটি মামলা প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত নেয়। ১৬ জুলাই স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এই নির্দেশ ঝালকাঠি জেলা প্রশাসকের কাছে পৌঁছায়। জেলা প্রশাসক মামলা প্রত্যাহারের প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) আবদুল মান্নানকে অনুরোধ করেন। ২১ জুলাই সংশ্লিষ্ট আদালতে মামলা প্রত্যাহারের আবেদন করেন পিপি। ওই আবেদনের ওপর ভিত্তি করে আদালত ২৯ জুলাই শুনানি গ্রহণ করে লিমনকে অস্ত্র মামলা থেকে অব্যাহতির আদেশ দেন। মামলা করার প্রায় আড়াই বছর পর অস্ত্র মামলা থেকে অব্যাহতি পান তিনি।
লিমনের বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধাদানের মামলাটি ঝালকাঠির মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে বিচারাধীন ছিল। কিন্তু দীর্ঘদিন ধরে মুখ্য বিচারিক হাকিমের পদ শূন্য থাকায় মামলাটি থেকে অব্যাহতি পাননি লিমন। এ সম্পর্কে ঝালকাঠির পিপি আবদুল মান্নান বলেন, গত বছরের জুলাই মাসে ঝালকাঠির মুখ্য বিচারিক হাকিম বদলি হয়ে যান। প্রায় দেড় বছর পর গত মাসের ১০ সেপ্টেম্বর ওই পদে বিচারক আবু শামীম আজাদ যোগ দেন। বিচারক যোগ দেওয়ার পর দ্বিতীয় তারিখে আজ লিমনকে অব্যাহতি দেওয়া হলো। লিমনের আইনজীবী মানিক আচার্য্য জানান, ২০১১ সালের ২৩ মার্চ বিকেলে বাড়ির কাছে মাঠে গরু আনতে গেলে একাদশ শ্রেণীর ছাত্র লিমনকে ধরে নিয়ে পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করে র‌্যাব। এ কারণে লিমনের পা কেটে ফেলতে হয়। এ ঘটনার পর বরিশাল র‌্যাব-৮-এর তৎকালীন উপসহকারী পরিচালক (ডিএডি) লুৎফর রহমান বাদী হয়ে লিমনসহ আটজনের নামে রাজাপুর থানায় দুটি মামলা করেন। একটি মামলা অস্ত্র আইনে, অন্যটি সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে। এ নিয়ে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় ওঠে।
অন্যদিকে লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম তাঁর ছেলেকে হত্যা প্রচেষ্টার অভিযোগে র‌্যাবের ছয় সদস্যের বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২০১২ সালের ১৪ আগস্ট পুলিশ এ মামলায় র‌্যাব সদস্যদের অব্যাহতির সুপারিশ করে আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করে। একই বছরের ৩০ আগস্ট এই প্রতিবেদনের বিরুদ্ধে হেনোয়ারা বেগম নারাজি আবেদন করেন। ২০১৩ সালের ১৩ ফেব্রুয়ারি এই নারাজি আবেদন খারিজ করে দেন জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম।
একই বছরের ১৯ মার্চ নারাজি খারিজের বিরুদ্ধে ঝালকাঠির জেলা ও দায়রা জজ আদালতে রিভিশন দায়ের করেন হেনোয়ারা বেগম। এক বছর নয় মাস পার হলেও ওই রিভিশনের শুনানি হয়নি। রাষ্ট্রপক্ষের কৌঁসুলির সময়ের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ পর্যন্ত ১১ বার রিভিশনের শুনানির তারিখ পিছিয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.