ইবিতে উত্তপ্ত ছাত্ররাজনীতি হামলার টার্গেট পরিবহন BY সাইফুল ইসলাম রাজ

কুষ্টিয়ার ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) ছাত্র রাজনীতির প্রতিহিংসার শিকার হচ্ছে শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের প্রধান বাহন পরিবহন। বিভিন্ন দলের রাজনৈতিক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহনকে টার্গেট করছে ছাত্র সংগঠনগুলো। এ পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তত ৩০টি গাড়ি ভাংচুর করেছে ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীরা। এসব অপকর্মের কোনো সাজা না হওয়ায় পার পেয়ে যাচ্ছে দোষীরা। ফলে এ হীন কর্মকাণ্ড বেড়েই চলেছে। এতে পরিবহন খাতে প্রতিবছর গচ্চা যাচ্ছে কোটি কোটি টাকা। জানা যায়, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ শহর থেকে যথাক্রমে ২৪ ও ২২ কিলোমিটার দূরে শান্তিডাঙ্গা-দুলালপুরে অবস্থিত। বিশ্ববিদ্যালয়ের ২২ শতাংশ ছাত্রছাত্রী আবাসন সুবিধা পেয়ে থাকেন। বাকি শিক্ষার্থীদের কুষ্টিয়া-ঝিনাইদহ শহরে মেস ও ছাত্রাবাসে অবস্থান করতে হয়। এসব শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীকে ক্যাম্পাসে আনা-নেওয়ার প্রধান বাহন বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবহন। বিশ্ববিদ্যালয়ের নিজস্ব ৩১ ও বেসরকারি ৩২টি বাস রয়েছে। কোনো কারণে পরিবহন ব্যবস্থা বাধাগ্রস্ত হলে শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারীরা ক্যাম্পাসে না আসতে পারায় বিশ্ববিদ্যালয় কার্যত অচল হয়ে পড়ে।
সর্বশেষ শনিবার রাতে কুষ্টিয়ায় ডিপোতে পার্ক করা অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি বাসে অগি্নসংযোগ করা হয়। এর আগে ৮ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকটি গাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদল। এর আগে ২০০৬ সালে সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. এম রফিকুল ইসলামের পদত্যাগের দাবিতে উপাচার্যের গাড়িসহ দুটি গাড়ি পুড়িয়ে দেয় তারা। চাকরির দাবিতে ২০১২ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকটি গাড়িতে আগুন দেয় ছাত্রলীগের চাকরিপ্রত্যাশী নেতাকর্মীরা। ২০১১ সালে শিবিরের দুই নেতা অপহৃত হলে তাদের মুক্তির দাবিতে ক্যাম্পাসে আন্দোলন করে ছাত্রশিবির। তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুটি গাড়িতে ভাংচুর করে। পরিবহন প্রশাসক অধ্যাপক ড. মামুনুর রহমান বলেন, 'দেড় বছরের ব্যবধানে যে দুটি গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে, তার মূল্য প্রায় পৌনে দুই কোটি টাকা। আগুন দেওয়ার ফলে গাড়ির যে ক্ষতি হয়েছে, তার জন্য ব্যয় হবে প্রায় ১৫ লাখ টাকা। এদিকে, প্রায় দেড় বছর আগে ছাত্রলীগের দেওয়া আগুনে পুড়ে যাওয়া গাড়িটি আজও মেরামত করা হয়নি।
জানা যায়, গাড়ি ভাংচুর ও পোড়ানোর ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন এবং থানায় মামলা করা হলেও অজানা কারণে দোষীদের আটক করা হয় না। এমনকি বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাক্ট অনুযায়ী কোনো ব্যবস্থাও নেওয়া হয় না। অভিযোগ রয়েছে, আওয়ামী লীগ ও বিএনপির রাজনৈতিক মতাদর্শে বিশ্বাসী 'পদলোভী' কিছু শিক্ষক তাদের স্বার্থরক্ষায় ছাত্র সংগঠনকে এসব কাজে ব্যবহার করেন। এসব শিক্ষকই মূলত তাদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থানার তদন্ত কর্মকর্তা নূর মোহাম্মদ খান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে অধিকাংশ সময়ে অজ্ঞাতপরিচয়ে মামলা করা হয়। এসব মামলায় কেউই সাক্ষ্য দিতে চায় না। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ মামলা করেই ক্ষান্ত হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ কোনো দুষ্কৃতকারীকে আটক করতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের নির্দেশে থেমে যেতে হয়। এদিকে, এসব ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে তদন্ত কমিটি গঠন করা হলেও অধিকাংশ কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয় না বলে অভিযোগ রয়েছে। কদাচিৎ তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেওয়া হলেও ওই সব প্রতিবেদনে কাউকে দোষী হিসেবে চিহ্নিত করা হয় না। বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. আবদুল হাকিম সরকার সমকালকে বলেন, 'বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ইচ্ছা করলে অনেক কিছুই করতে পারে। কোনো ছাত্রের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নিতে গেলে ওই মতাদর্শে বিশ্বাসী শিক্ষকরা এতে বাদ সাধেন। তারা অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে দেন না।'

No comments

Powered by Blogger.