কেন বাদ পড়লেন দীপু মনি

আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডা. দীপু মনি এবারের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাননি। এর পেছনে ভারতের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি ও স্থল সীমান্ত চুক্তির ব্যর্থতাকে কারণ হিসেবে দেখছে পশ্চিমবঙ্গের প্রভাবশালী দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা। গতকাল সোমবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, এ দুই চুক্তি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়া এবং 'বেশি কথা বলা' কাল হয়েছে দীপু মনির। প্রতিবেদনে বলা হয়, আগের পাঁচ বছর তিনি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করলেও ভারতের সঙ্গে তিস্তার জলবণ্টন ও স্থল সীমান্ত চুক্তি করে ওঠা যায়নি। সে জন্যই কি এবার শেখ হাসিনার নতুন মন্ত্রিসভা থেকে বাদ পড়লেন দীপু মনি? বাদ পড়েছেন আগের দুই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন ও মহীউদ্দীন খান আলমগীরও। পররাষ্ট্র ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় নিজের হাতেই রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বাংলাদেশের কূটনৈতিক সূত্রের খবর, দীপু মনির বিরুদ্ধে তার সতীর্থরাই 'বেশি কথা বলা'র অভিযোগ করতেন। ভারতের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা হাসিনার উপদেষ্টারাও তাদের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর ওপর খুশি ছিলেন না। তিস্তা চুক্তি নিয়ে আলোচনার জন্য দীপু মনি কলকাতায় এসে মহাকরণে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে তিনি বাদানুবাদে জড়িয়ে পড়েন। অনেকের বদ্ধমূল ধারণা, এ ঘটনার পর থেকেই তিস্তা চুক্তি ও স্থল সীমান্ত চুক্তি নিয়ে বিরোধিতায় অনড় অবস্থান নেন মমতা। ফলে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং ঢাকা সফরে গিয়ে শেখ হাসিনাকে প্রতিশ্রুতি দিয়ে আসার পরও অতি গুরুত্বপূর্ণ এ দুই চুক্তি বাস্তবায়ন করা যায়নি। মমতার সঙ্গে বাদানুবাদকে দীপু মনির সবচেয়ে বড় 'কূটনৈতিক হঠকারিতা' বলে মনে করা হয়, যার খেসারত দিতে হয়েছে দেশ ও সরকারকে। নির্বাচনী অন্তর্বর্র্তী সরকারেই দীপু মনিকে ছেঁটে দিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। এবারও বাদ পড়তে হলো তাকে। রোববার বিকেলে শেখ হাসিনার ৪৯ সদস্যের নতুন মন্ত্রিসভাকে শপথবাক্য পাঠ করান রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ। ২৯ জন পূর্ণ মন্ত্রী, ১৭ জন প্রতিমন্ত্রী ছাড়া শপথ নেন দুই উপমন্ত্রীও। পুরনো শরিক ওয়ার্কার্স পার্টির নেতা রাশেদ খান মেনন আগেরবার মন্ত্রিত্বের প্রস্তাব ফিরিয়ে দিলেও এ দফায় বিমান ও পর্যটনের দায়িত্ব পেয়েছেন। পুরনো তথ্য মন্ত্রণালয় দেওয়া হয়েছে জাসদ নেতা হাসানুল হক ইনুকেও। কিন্তু শেখ হাসিনা মন্ত্রিসভার সবচেয়ে বড় নতুনত্ব বিরোধী দল জাতীয় পার্টির একজনকে পূর্ণ মন্ত্রী ও দু'জনকে প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্ব দেওয়া।
ওই দলের নেত্রী রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা হলেও তার স্বামী দেশের সাবেক সেনাশাসক হুসেইন মুহম্মদ এরশাদকে মন্ত্রী পদমর্যাদায় নিজের বিশেষ দূত নিয়োগ করেছেন হাসিনা। বিরোধীরাও মন্ত্রিসভায় স্থান পাওয়ায় গণতন্ত্র ক্ষুণ্ন হয়েছে বলে কেউ কেউ অভিযোগ করেন। এ প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, 'আপনারাই সকলকে নিয়ে চলতে বলেন, আবার তা করতে গেলে আপনারাই প্রশ্ন তোলেন!'

No comments

Powered by Blogger.