ক্ষমতা কমে এসেছে অ্যান্টিবায়োটিকের

(খুব তাড়াতাড়ি কোনো কার্যকরী অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কৃত না হয়, তাহলে চিকিৎসকদের অসহায়ভাবে মানুষকে মৃত্যুর মুখে সঁপে দিতে হবে) বিশ্বের একদল নামকরা বিশেষজ্ঞ এক গবেষণা নিবন্ধে সম্প্রতি হুঁশিয়ারি দিয়েছেন, অ্যান্টিবায়োটিকের জীবাণু ধ্বংস ক্ষমতা ফুরিয়ে এসেছে। ফলে আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞান এক ভয়ঙ্কর বিপদের মুখোমুখি। চিকিৎসা সাময়িকী ল্যানসেটে সম্প্রতি এটি প্রকাশিত হয়েছে। তাদের মতে, খুব শিগগিরই যদি নতুন ওষুধ আবিষ্কার করা না যায়, সামান্য রোগ-ব্যাধিতেই আবার মারা যেতে পারে লাখ লাখ মানুষ। যেমনটি ঘটত অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কারের আগে। আলেক্সান্ডার ফ্লেমিং পেনিসিলিন আবিষ্কার করেছিলেন ১৯২৮ সালে। চিকিৎসা বিজ্ঞানে এটি ছিল এক যুগান্তকারী ঘটনা। এভাবেই প্রথম মানবদেহে জীবাণু সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার জন্য চিকিৎসকরা একটি কার্যকরী অস্ত্র খুঁজে পেয়েছিলেন। তারপর অবশ্য আরও বহু অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কৃত হয়েছে, যা বহু কোটি মানুষের প্রাণ বাঁচিয়েছে। কিন্তু এখন অ্যান্টিবায়োটিকের দিন ফুরিয়ে এসেছে, প্রাণঘাতী জীবাণুরা আর অ্যান্টিবায়োটিকের পরোয়া করছে না। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল ফার্মাকোলজির অধ্যাপক মুনিরউদ্দীন আহমেদ অ্যান্টিবায়োটিক নিয়ে বহুদিন ধরে গবেষণা করছেন। তিনি জানিয়েছেন, 'অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী যেসব নতুন ব্যাকটেরিয়া বা জীবাণু এখন বেরুচ্ছে, তা কেবল বিপদ নয়, মহাবিপদ।' জীবাণু বিধ্বংসী এরকম একটি দারুণ অস্ত্র কীভাবে অকার্যকর হয়ে পড়ল? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'নির্বিচারে অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহারই এর জন্য দায়ী। বাংলাদেশের মতো দেশে যে কেউ সহজে অ্যান্টিবায়োটিক কিনতে পারে। তারা জানে না কোন জীবাণু দ্বারা হয়েছে, কী অ্যান্টিবায়োটিক ব্যবহার করছে কিংবা সেই অ্যান্টিবায়োটিক কার্যকর হবে কি-না। আবার অনেকে অ্যান্টিবায়োটিকের কোর্সও ঠিকমতো শেষ করে না। একটু ভালো বোধ করলেই অ্যান্টিবায়োটিকের পুরো ডোজ নেওয়া বন্ধ করে দেয়। আর তখনই বিভিন্ন জীবাণু অ্যান্টিবায়োটিক প্রতিরোধী হয়ে ওঠে।' এই সমস্যা মোকাবেলায় বিশেষজ্ঞরা দু'ধরনের জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলেছেন। প্রথমত, অ্যান্টিবায়োটিকের নির্বিচার ব্যবহার বন্ধ করা। দ্বিতীয়ত, নতুন ধরনের জীবাণুর মোকাবেলায় নতুন অ্যান্টিবায়োটিক উদ্ভাবন করা। অধ্যাপক আহমেদ আশাবাদী, এই সমস্যার মোকাবেলায় ওষুধ কোম্পানিগুলো তাদের মানবিক দায়িত্ববোধের পরিচয় দেবে।
প্রদীপ সাহা, সূত্র : বিবিসি

No comments

Powered by Blogger.