সরকার উৎখাতে ‘ব্যাংকক অচল’ কর্মসূচি শুরু

থাইল্যান্ডে গতকাল ‘ব্যাংকক অচল’ কর্মসূচি চলার
সময় বিক্ষোভকারীরা রাজধানীর আসোক এলাকায়
কয়েকটি রাস্তার সংযোগস্থল অবরোধ করেন। এ
সময় সরকারবিরোধী স্লোগান দেন তাঁরা। ছবি: এএফপি
থাইল্যান্ডে সরকার উৎখাত এবং আগামী ২ ফেব্রুয়ারির আগাম নির্বাচন প্রতিহত করার লক্ষ্যে ‘ব্যাংকক অচল’ কর্মসূচি শুরু করেছেন বিক্ষোভকারীরা। তাঁরা গতকাল সোমবার রাজধানী ব্যাংককের কয়েকটি এলাকার রাস্তা বন্ধ করে অবস্থান নিয়েছেন। এই কর্মসূচিকে সামনে রেখে নিরাপত্তা জোরদার করে সরকার। বিক্ষোভকারীরা রাস্তাগুলোতে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে কয়েকটি মোড়ে অবস্থান নেন।
তাঁরা প্রধানমন্ত্রী ইংলাক সিনাওয়াত্রার নির্বাচিত সরকারকে সরিয়ে একটি অনির্বাচিত ‘গণপরিষদ’ গঠনের দাবি জানিয়ে আসছেন। তাঁদের দাবি, পরিষদটি নতুন নির্বাচনের আগে সিনাওয়াত্রা পরিবারের রাজনৈতিক প্রভাব খর্ব করতে সংস্কার করবে। হাজার হাজার বিক্ষোভকারী গতকাল জাতীয় পতাকা হাতে ব্যাংককের কয়েকটি এলাকায় অবস্থান নেন। তাঁরা এসব স্থানে মঞ্চ তৈরির পাশাপাশি রাতে অবস্থানের জন্য এরই মধ্যে তাঁবু খাটিয়েছেন। ‘ব্যাংকক অচল’ নামে এ কর্মসূচি শুরুর কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই সফলতা পেয়েছেন বিক্ষোভকারীরা। কর্মসূচির কারণে মধ্য ব্যাংককের দোকানপাট ও হোটেলগুলো বন্ধ হয়ে যায়। অনেক বাসিন্দা খাদ্য ও পানি মজুত করেছেন। তবে আন্দোলনকারীরা এক কোটি ২০ লাখ জনসংখ্যার শহর ব্যাংকককে পুরো অচল করতে সক্ষম হননি। অন্য এলাকাগুলোতে স্বাভাবিক কর্মকাণ্ড চলছিল। কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে ব্যাংককে ২০ হাজার পুলিশ ও সেনাসদস্য মোতায়েনের কথা ছিল। অবশ্য, গতকাল বিক্ষোভের সময় পুলিশ বা সেনাসদস্যদের তেমন কোনো তৎপরতা দেখা যায়নি। সাবেক থাই কূটনীতিক এবং জাপানের কিয়োটো বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক পাভিন চাচাভালপোংপুন বলেন, ‘পরিস্থিতি ভয়াবহ অস্থিরতার দিকে যাচ্ছে।
বিক্ষোভকারীদের পিছু হটার কোনো সুযোগ নেই।তাঁরা অনেক দূর পর্যন্ত চলে এসেছেন।’ সরকার বলেছে, আগামী বুধবার একটি বৈঠকে অংশ নিতে তারা সব পক্ষকে আমন্ত্রণ জানাবে। বৈঠকে ২ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন স্থগিত করা নিয়ে আলোচনা হবে। তবে কমপক্ষে এক বছর পেছানোর ব্যাপারে বিক্ষোভকারীরা যে দাবি তুলেছেন, তাতে সরকার রাজি হবে না বলেই মনে হচ্ছে। থাইল্যান্ডে কয়েক বছর ধরে চলে আসা রাজনৈতিক সংকটের সর্বশেষ ধাপ হচ্ছে চলমান বিক্ষোভ। এ বিক্ষোভ শুরু হয় একটি ব্যর্থ সাধারণ ক্ষমার বিল নিয়ে। নির্বাসনে থাকা সাবেক প্রধানমন্ত্রী থাকসিনের দেশে ফেরার পথ সুগম করতে ওই বিল পার্লামেন্টে তোলা হয় বলে মনে করা হয়। থাকসিন অতীতে একটি দুর্নীতির মামলায় অভিযুক্ত হন। দেশে ফিরলে তিনি গ্রেপ্তার হতে পারেন। বিলটির বিরুদ্ধে বিক্ষোভের জের ধরেই থাকসিনের বোন ইংলাক পার্লামেন্ট ভেঙে দিয়ে আগাম নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছিলেন। বিক্ষোভকারীরা ইংলাককে তাঁর ভাই থাকসিন সিনাওয়াত্রার হাতের পুতুল হিসেবে চিহ্নিত করে থাকেন। ২০০৬ সালে সামরিক বাহিনীর হাতে ক্ষমতাচ্যুত থাকসিন স্বেচ্ছানির্বাসনে আছেন। থাকসিনপন্থী রাজনৈতিক দলগুলোর সমর্থনের মূল ভিত্তি হচ্ছে দেশটির গ্রামীণ জনগোষ্ঠী। তারা গত চারটি নির্বাচনেই জয়লাভ করেছে। তবে মূলত মধ্য ও উচ্চবিত্ত শ্রেণী থেকে আসা বিক্ষোভকারীদের অভিযোগ, ওই দলগুলোর লোককে তুষ্ট করার নীতি দেশে একটি ত্রুটিপূর্ণ গণতন্ত্রের জন্ম দিয়েছে। এএফপি ও বিবিসি।

No comments

Powered by Blogger.