সংসদ বসছে ২৯ জানুয়ারি

দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন শুরু হবে ২৯ জানুয়ারি। রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ সংবিধানের ৭২ অনুচ্ছেদের (১) দফার ক্ষমতাবলে দশম সংসদের প্রথম অধিবেশন আহ্বান করেছেন বলে জানিয়েছে সংসদ সচিবালয়। গত ৫ জানুয়ারি নির্বাচনের মধ্য দিয়ে গঠিত হয় দশম জাতীয় সংসদ। বিএনপিবিহীন এই নির্বাচনে নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে রোববার টানা দ্বিতীয়বার সরকার গঠন করেছেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। ২৯ জানুয়ারি বুধবার সন্ধ্যা ৬টায় অধিবেশন শুরু হবে। সংসদ অধিবেশনের প্রথম দিনে নিয়ম অনুয়ায়ী রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ভাষণ দেবেন। যে কোনো সংসদের প্রথম অধিবেশন এবং বছরের প্রথম অধিবেশনে রাষ্ট্রপতির ভাষণ দেওয়ার বিধান রয়েছে। বিদায়ী স্পিকার শিরীন শারমিন চৌধুরীর সভাপতিত্বে প্রথম দিনের অধিবেশন শুরু হবে। প্রথম অধিবেশনের শুরুতেই নিয়ম অনুযায়ী নতুন স্পিকার ও ডেপুটি স্পিকার নির্বাচন করার বাধ্যবাধকতা রয়েছে।
দশম সংসদে ইতিমধ্যেই সংখ্যাগরিষ্ঠ দলের নেতা হিসেবে সংসদ নেতা নির্বাচিত হয়েছেন শেখ হাসিনা। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তৃতীয় মেয়াদে শপথ নেওয়া শেখ হাসিনা তৃতীয়বারের মতো সংসদ নেতার দায়িত্ব পালন করবেন। বিএনপির অনুপস্থিতিতে সংসদে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল হিসেবে আবির্ভূত হওয়া জাতীয় পার্টির সভাপতিম লীর সদস্য রওশন এরশাদ বিরোধীদলীয় নেতা নির্বাচিত হয়েছেন। ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ থেকে প্রতিটি সংসদে শেখ হাসিনা ও খালেদা জিয়া সংসদ নেতা কিংবা বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্বে ছিলেন। এবারই ব্যতিক্রম ঘটল।
সংবিধান অনুযায়ী চলতি নবম সংসদের মেয়াদ ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত। মেয়াদ অবসানের কারণে ২৪ জানুয়ারির পর নবম সংসদ এমনিতেই বিলুপ্ত হয়ে যাবে। নবম সংসদের যাত্রা শুরু হয়েছিল ২০০৯ সালের ২৫ জানুয়ারি। মোট কার্যদিবস ছিল ৪১৮, যা দেশের সংসদীয় ইতিহাসে রেকর্ড। বিল পাসের ক্ষেত্রেও বিদায়ী সংসদ রেকর্ড করেছে, মোট পাস হওয়া বিলের সংখ্যা ২৭১। অন্য যে কোনো সংসদের চেয়ে বিদায়ী সংসদে বিরোধী দলের বর্জনেও ছিল রেকর্ড। বিএনপির নেতৃত্বাধীন বিরোধী দল অনুপস্থিত ছিল ৩৪২ কার্যদিবস, উপস্থিত ছিল ৭৬ কার্যদিবস। বিরোধীদলীয় নেতা খালেদা জিয়া উপস্থিত ছিলেন ১০ দিন।
বাংলাদেশে গঠিত সব সংসদের তালিকা :১. দেশের প্রথম সংসদের মেয়াদকাল ছিল ২ বছর ৬ মাস (৭ এপ্রিল ১৯৭৩ থেকে ৬ নভেম্বর ১৯৭৫)। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগের প্রধান ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন আতাউর রহমান খান। ২. দ্বিতীয় সংসদের মেয়াদকাল ছিল ২ বছর ১১ মাস (২ এপ্রিল ১৯৭৯ থেকে ২৪ মার্চ ১৯৮২)। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বিএনপির প্রধান ছিলেন জিয়াউর রহমান। ওই সংসদে বিরোধী দল ছিল আওয়ামী লীগ। বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন আসাদুজ্জামান খান। ৩. তৃতীয় সংসদের মেয়াদকাল ছিল ১ বছর ৫ মাস (১০ জুলাই ১৯৮৬ থেকে ৬ ডিসেম্বর ১৯৮৭)। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল জাতীয় পার্টির প্রধান ছিলেন এইচএম এরশাদ। বিরোধী দল ছিল আওয়ামী লীগ। বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন শেখ হাসিনা। ৪. চতুর্থ সংসদের মেয়াদকাল ছিল ২ বছর ৭ মাস (১৫ এপ্রিল ১৯৮৮ থেকে ৬ ডিসেম্বর ১৯৯০)। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল জাতীয় পার্টির প্রধান ছিলেন এইচএম এরশাদ। কয়েকটি ছোট দলের সমন্বয়ে গড়া 'সম্মিলিত বিরোধী দল' ১৯ আসন নিয়ে বিরোধী দলের দায়িত্ব পালন করে। রাষ্ট্রপতি এরশাদের নিযুক্ত বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন আ স ম আবদুর রব। ৫. পঞ্চম সংসদের মেয়াদকাল ছিল ৪ বছর ৮ মাস (৫ এপ্রিল ১৯৯১ থেকে ২৪ নভেম্বর, ১৯৯৫)। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বিএনপির প্রধান ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। বিরোধী দল ছিল আওয়ামী লীগ এবং বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন শেখ হাসিনা। ৬. ষষ্ঠ সংসদের মেয়াদকাল ছিল মাত্র ১২ দিন (১৯ মার্চ ১৯৯৬ থেকে ৩০ মার্চ ১৯৯৬)। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বিএনপির প্রধান ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। ওই সংসদে কোনো বিরোধী দলই ছিল না। ৭. সপ্তম সংসদের মেয়াদকাল ছিল ৫ বছর (১৪ জুলাই ১৯৯৬ থেকে ১৩ জুলাই ২০০১)। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল আওয়ামী লীগ প্রধান ছিলেন শেখ হাসিনা। বিরোধী দল ছিল বিএনপি। বিরোধীদলীয় নেতা ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। ৮. অষ্টম সংসদের মেয়াদকাল ছিল ৫ বছর (২৮ অক্টোবর ২০০১ থেকে ২৭ অক্টোবর ২০০৬)। সংখ্যাগরিষ্ঠ দল বিএনপির প্রধান ছিলেন বেগম খালেদা জিয়া। বিরোধী দল ছিল আওয়ামী লীগ। বিরোধীদলীয় নেতার দায়িত্ব পালন করেন শেখ হাসিনা।

No comments

Powered by Blogger.