'ভালো কাজে সব দলেরই ঐক্য থাকা দরকার'

সরকারি চাকরিতে, বিশেষ করে বিসিএস পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতির পুনর্বিন্যাস করতে সরবকারের প্রতি আহ্বান জানিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেছেন, 'শুধু বিসিএসের কোটা পদ্ধতির পুনর্বিন্যাস নয়, সব ভালো কাজে রাজনীতিবিদদের ঐক্য দরকার।
কারণ তা না হলে এক দলের সরকার এসে একটি ভালো সিদ্ধান্ত নেবে, অন্য দলের সরকার এসে তা বাতিল করে দেবে। এ ধরনের সংস্কৃতি থেকে আমাদের বের হয়ে আসতে হবে।' তিনি বলেন, 'কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীদের ধৈর্য ধরা উচিত। কারণ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ধর্মঘট করে কাদের ক্ষতি হবে? শিক্ষার্থীদেরই ক্ষতি হবে।'
শনিবার রাতে বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল আরটিভির সমকালীন বিষয়ভিত্তিক টক শো আওয়ার ডেমোক্রেসি অনুষ্ঠানে আলোচনা করতে গিয়ে তিনি এ কথা বলেন।
সাংবাদিক জামিল আহমেদের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে আরো আলোচনা করেন সাবেক রাষ্ট্রদূত সালমা খান ও ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক অধ্যাপক পিয়াস করীম।
আলোচনার শুরুতে সঞ্চালক জানতে চান, বিসিএস পরীক্ষায় কোটা পদ্ধতি বাতিল নিয়ে আন্দোলন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শুরু হয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আন্দোলন করতে গিয়ে বেশ কিছু ছাত্রের বিরুদ্ধে পুলিশ মামলাও করেছে। বিষয়টি কিভাবে দেখছেন?
জবাবে অধ্যাপক পিয়াস করীম বলেন, 'মেধা বিকাশে কোটা পদ্ধতি মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা। এ পদ্ধতি বিভিন্ন দেশে আছে। তবে শতকরা ৫৫ ভাগ কোটা! এটা মনে হয় কোনো দেশে নেই।' তিনি বলেন, 'কয়েক দিন ধরে দেখছি কোটা পদ্ধতি বাতিল চেয়ে ছাত্ররা আন্দোলন করছে। তাদের ওপর সরকারি দলের ছাত্রসংগঠন ছাত্রলীগ হামলাও করছে। আসলে এটা মোটেও ঠিক না। কারণ আন্দোলন হচ্ছে কোটার বিরুদ্ধে। এটা তো সরকারের বিরুদ্ধে না। তাই আন্দোলনকারীদের যেমন নির্দিষ্ট গণ্ডির মধ্যে থাকা উচিত, তেমনি সরকারি দলের ছাত্রসংগঠনেরও বাড়াবাড়ি করা উচিত হয়নি।'
আলোচনার এ পর্যায়ে সাবেক রাষ্ট্রদূত সালমা খান বলেন, 'এখন যেটা চলছে, তা হলো, কোটা ভার্সাস মেধা। কোনটা বড়। যেখানে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর ভালো চাকরিতে প্রবেশের জন্য কোটা পদ্ধতি চালু করা হয়েছিল। সেখানে এখন কোটার পরিমাণই বেশি হয়েছে।' তিনি বলেন, 'কোটা পদ্ধতি হলো সরকার কর্তৃক অঙ্গীকারবদ্ধ আইনি সুযোগ-সুবিধা।'
আলোচনার এ পর্যায়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, 'আমি আপনাদের দুজনের সঙ্গে একমত যে কোটা পদ্ধতি পুনর্বিন্যাস করা উচিত। তাই বলে কোটা পরিবর্তনের নামে যে আন্দোলন চলছে, তার পক্ষে নই। কারণ কোটার বিরুদ্ধে আন্দোলন মানে এই নয় যে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসির বাসায় ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করতে হবে, তছনছ করতে হবে। চারুকলার সামনে বাংলাদেশের ঐতিহ্য মঙ্গল শোভাযাত্রার নিদর্শন ভাস্কর্যগুলোতে অগ্নিসংযোগ করতে হবে!'
আলোচনার এ পর্যায়ে টেলিফোনে অংশ নিয়ে এক দর্শক আলোচকদের কাছে জানতে চান, 'দেশে যেখানে এত বিপুল পরিমাণ শিক্ষিত বেকার। সেখানে মুক্তিযোদ্ধা ও পোষ্যদের কোটা দেওয়া কতটা যুক্তিযুক্ত?'
আলোচনার এ পর্যায়ে সালমা খান বলেন, 'একসময় কোটা নির্ধারণ করা হয়েছিল। মুক্তিযোদ্ধারা দেশের সম্মান। তাঁদের প্রতি আজীবন সম্মান দেখাতে হবে। তাঁদের সন্তানদের সরকারি চাকরিতে কোটা দেওয়াটাও তাঁদের প্রতি এক ধরনের সম্মান প্রদর্শন।' তিনি বলেন, 'কোটা পদ্ধতির মধ্যে জেলা কোটা রাখার এখন কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ সব জেলা এখন উন্নত। কোনো জেলা অনগ্রসর নেই। আর মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বিন্যাস করা দরকার। কারণ সময়ের পরিবর্তনে সব কিছুরই পরিবর্তন হতে পারে।'
আলোচনার এ পর্যায়ে অধ্যাপক পিয়াস করীম বলেন, 'মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে এখন মনে হয় এমন কেউ নেই যিনি এখনো চাকরিতে আছেন। তা ছাড়া মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যেও তো ক্যাটাগরি আছে। অনেক ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা আছে। মুক্তিযোদ্ধাদের ক্ষেত্রে রিভিউ প্রয়োজন। যাতে প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধাদের নামে অন্য কেউ সুযোগ-সুবিধা নিতে না পারে।' তিনি বলেন, 'সব মিলিয়ে কোটা ২০ শতাংশের মধ্যে নিয়ে আসা দরকার। ৮০ শতাংশ মেধাবীদের জন্য থাকা দরকার।'
আলোচনার এ পর্যায়ে সালমা খান বলেন, 'অনগ্রসর লোকদের সরকার অনেকভাবে পুরস্কৃত করতে পারে। মেধাবীরা যেহেতু দেশ গড়ার কারিগর; তাই তাদের ক্ষেত্রে মেধাকে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত। কোটা পদ্ধতির সংস্কার করা উচিত। কারণ আগে দেশ, তারপর অন্য কিছু।'
আলোচনার এ পর্যায়ে অধ্যাপক শফিউল আলম ভূঁইয়া বলেন, 'পিএসসির উচিত, এ সময়ে কয়েকজন এক্সপার্টের মতামত নিয়ে কোটা পদ্ধতি পুনর্বিন্যাস করা।

No comments

Powered by Blogger.