পবিত্র কোরআনের আলো-হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর দাওয়াতি কার্যক্রমের প্রশংসা

১০৩. ওয়া মা--- আকছারুন না-সি ওয়া লাউ হারাসতা বি মু'মিনীনা। ১০৪. ওয়ামা- তাসআলুহুম 'আলাইহি মিন আজরিন, ইন হুওয়া ইল্লা যিকরুল লিল 'আ-লামীনা। সুরা ইউসুফ।
অনুবাদ : ১০৩. তুমি যতই কামনা করো, বাস্তবে অধিকাংশ মানুষই ইমান আনার মতো নয়।* ১০৪. অথচ তুমি (দীনের দাওয়াতি কাজের জন্য) তাদের কাছ থেকে কোনো বিনিময় চাও না। এটা তো সারা বিশ্বের জন্য অবিস্মরণীয় শিক্ষা।*
তাফসির : * নবী-রাসুলদেরই যেখানে আল্লাহ তায়ালা বহুবার বলেছেন, তোমাদের দায়িত্ব হলো আল্লাহর পথে মানুষকে আহ্বান করা। এ জন্য সম্ভব সব ধরনের চেষ্টা করা। এ ক্ষেত্রে উম্মতে মুহাম্মদির আলেমদের নবী-রাসুলগণের উত্তরসূরি বা প্রতিনিধি হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে। দীনের দাওয়াতি কাজে বহুমুখী কৌশল অবলম্বন করা হয়। অনেক সময় কোনো বিষয়ে দেখা যায়, কোনো কৌশলই দৃশ্যত সাফল্য পাচ্ছে না। এমন সময় অনেক মুবাল্লিগ আলেম হতাশ হয়ে পড়েন। এটি ঠিক নয়। এ ধরনের হতাশায় নবী-রাসুলগণের জীবনকাহিনী স্মরণ করতে হবে। এসব আয়াত তেলাওয়াত করতে হবে। তখন বেশি পরিমাণে আল্লাহ তায়ালার দরবারে দোয়া করতে হবে। কারণ চেষ্টা করার দায়িত্ব বান্দার। সব চেষ্টাকে সাফল্যে পরিণত করেন একমাত্র তিনিই। এ আলোচনা দ্বারা প্রমাণ হয়, বাহ্যিকভাবে কোনো দীনি উদ্যোগকে সফল মনে না হলেও এর বিরুদ্ধে সমালোচনা করা যেমন অন্যদের জন্য উচিত নয়, তেমনিভাবে উদ্যোক্তারাও অন্য কারো দীনি উদ্যোগের সাফল্য দেখে মর্মাহত হওয়ার কোনো কারণ নেই। সব অবস্থায় আল্লাহর পথের প্রত্যেক দাওয়াতি কর্মীর সতর্ক থাকার বিষয় হলো, তাঁর কাজ সুন্নত তরিকায় হচ্ছে কি না, নির্ভেজালভাবে আল্লাহ ও তাঁর রাসুলকে সন্তুষ্ট করার জন্য হচ্ছে কি না এবং এসব ক্ষেত্রে নিজের কোনো ত্রুটি ধরা পড়লে তা শুধরে নেওয়া চেষ্টা করতে হবে। বাস্তবতা হলো, বিভিন্ন তরফ থেকে সমালোচনা আসবে। এ অবস্থায় সমালোচনাগুলোও নিজের সংশোধনের সুযোগ মনে করে সাফল্য নিশ্চিত করার সিঁড়ি বানাতে তৎপর হতে হবে। এটাই এই আলোচনার মূল বক্তব্য।
* আল্লাহর পথে দাওয়াতি কাজ পরিচালনার জন্য প্রিয়তম রাসুল মুহাম্মদ (সা.) কারো কাছে কোনো পারিশ্রমিক কামনা করেননি। এমনকি এ মহান দাওয়াতি কার্যক্রম বন্ধ করার জন্য যখন তৎকালীন কাফের-মুশরিকগণ প্রথমে কল্পনাতীত প্রলোভন এবং পরে কঠিনতম চাপ ও নির্যাতন এমনকি তাঁকে দেশান্তরিত হতে বাধ্য করল, তখনো তিনি তাঁদের কাছে মাথা নত করেননি। বরং বলেছেন, আমার এক হাতে চাঁদ এবং আরেক হাতে সূর্য এনে তুলে দিলেও আমি আল্লাহর পথের দাওয়াতি কার্যক্রম পরিচালনা থেকে নিবৃত্ত হব না। প্রিয়তম রাসুল মুহাম্মদ (সা.)-এর এই যে পাহাড়সম দৃঢ়তা, পথহারা মানুষদের জন্য ইহ ও পারলৌকিক মঙ্গল কামনা এবং কোনো ধরনের পারিশ্রমিক ছাড়াই যে এই কাজ তিনি আঞ্জাম দিয়েছেন, পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তায়ালা এসব মহান উদ্যোগকে 'গোটা বিশ্বের জন্য জিকরুন বা অবিস্মরণীয় শিক্ষা' বলে অভিহিত করেছেন। হজরত মুহাম্মদ (সা.)-কে গোটা বিশ্বের জন্য রহমত হিসেবে পাঠানো হয়েছে বলে কোরআন শরিফের অন্যত্র উল্লেখ করা হয়েছে। তাঁর শুধু দাওয়াতি কার্যক্রম নয়, প্রতিটি তৎপরতাই বিশ্বের জন্য মহান শিক্ষা।
তাফসিরে ইবনে কাছির ও মাআরেফুল কোরআন অবলম্বনে হাসানুল কাদির

No comments

Powered by Blogger.