অনলাইন থেকে-মিয়ানমারে সাম্প্রদায়িকতা

হাজার বছরেরও আগে মিয়ানমারে মুসলমানদের প্রভাব চোখে পড়ে। ব্যবসা-বাণিজ্যে তাদের অবস্থান ছিল বেশ ওপরে। তেমনি রাজসভায় পরামর্শক হিসেবেও মুসলমানদের অংশগ্রহণের প্রমাণ আছে। সুতরাং মিয়ানমারে মুসলমানরা কোন কারণে বহিরাগত কিংবা শরণার্থী হিসেবে বিবেচিত হবে?
বিভেদ-বিভাজন অস্বাভাবিক আকার ধারণ করে মিয়ানমারে নতুন জাতীয়তাবাদের উন্মেষ হওয়ার পর। এর পর থেকে সেখানে ভাঙা-গড়ার চেষ্টা চলছে। সংখ্যালঘু মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চালানোর যে চেষ্টা, সেটাও এরই ধারাবাহিকতা। বিশেষ করে গত শতাব্দীর আশির দশকের পর থেকে নেতিবাচক ধারায় তা ধাবিত হতে থাকে। মিয়ানমারের শহরাঞ্চলের মুসলমানদের অধিকাংশই প্রতিষ্ঠিত। অর্থনৈতিকভাবে সচ্ছল। তারা মিয়ানমার অনুসৃত বৈষম্যমূলক নীতিমালা গ্রহণ করেছে কিংবা বলা চলে তাদের সামনে বিকল্প কোনো পথ খোলা ছিল না। মিয়ানমারের মানুষও তাদের কাছের মানুষ হিসেবে মানতে চায়। কিন্তু গ্রামের মুসলমানদের প্রতি তাদের দৃষ্টি মোটেও সহনীয় নয়। বহিরাগত রোহিঙ্গা হিসেবে আখ্যায়িত করার পরই তারা ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। এমন অভিযোগকে স্বীকার করে নেওয়ার কথাও নয়। মিয়ানমারের মুসলমানদের ওপর নির্যাতনের বিষয়টি দুনিয়ার গণমাধ্যমে স্থান করে নেয়। এর বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দেয় মুসলিমপ্রধান দেশগুলোতে। বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর মুসলমানরা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। পাকিস্তানের মুসলমানরা রাস্তায় প্রতিবাদ মিছিল করেছে। ইন্দোনেশিয়ার জাকার্তায় মিয়ানমার দূতাবাসের সামনে মুসলমানরা জমায়েত হয়ে রাষ্ট্রদূতকে হুমকি দিয়েছে। ভারতের গয়ায় বৌদ্ধমন্দিরে হামলা এবং বোমা বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে অতি সম্প্রতি। তবে এসব কাজে উৎসাহ বোধ করে এমন মুসলমানের সংখ্যা খুবই কম।
কিন্তু প্রশ্ন হলো, শান্তিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী অং সান সু চি কোন কারণে এমন নৃশংসতার ব্যাপারেও চুপ করে থাকেন? এমন নৃশংসতা কমাতে কিংবা থামাতে কি তাঁর কোনো ভূমিকা থাকতে পারে না? সমস্যা হচ্ছে, যা-ই তিনি বলতে যান না কেন, সেটাই যাবে তাঁর নিজের বিরুদ্ধে। তিনি এই মুহূর্তে চান না মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের পক্ষাবলম্বন করে সামরিক সরকারকে খেপাতে। কারণ মিয়ানমারের সংস্কার সম্পন্ন করতে হলে সামরিক সরকারকে তাঁর প্রয়োজন হবে। চুপ করে সহ্য করতে পারেন বলে তাঁর সুনাম আছে। কিন্তু সব সময় চুপ থাকা কি সুফল আনতে পারে? মানবাধিকার আদায় করতে গিয়ে তিনি যে চুপচাপ থাকার কৌশল নিয়েছিলেন, তা ফল এনেছিল। কিন্তু বার্মিজভাষী মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চলার পরও তিনি যে চুপ রয়েছেন, সেটা মোটেও গ্রহণযোগ্য নয়। সে কারণেই একসময়ের বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ও গণতান্ত্রিক নেত্রী হিসেবে যেই সু চি জায়গা করে নিয়েছিলেন, মিয়ানমারে মুসলমানদের ওপর নির্যাতন চলার পর সেই জায়গাটি ফিরে যেতে শুরু করেছে।

লেখক : বের্টিল লিনটনার, সুইডেনের সাংবাদিক
আউটলুক থেকে ভাষান্তর মোস্তফা হোসেইন

No comments

Powered by Blogger.