শামুকে রূপচর্চা

বাগানের স্যাঁতসেঁতে মাটিতে তাদের বিচরণ। কখনো বা দেখা যায় ছোট গাছের কাণ্ড-ডালপাতায় বুক ঘষে ঘষে চলছে। শামুক নামের ছোট্ট এই প্রাণীটির প্রতি বাড়তি আগ্রহ কারো থাকার কথা নয়।
এটাকেই যদি দেখা যায় কোনো মানুষের মুখমণ্ডলের ওপর ঘোরাঘুরি করছে আর মানুষটি পরম যত্নে চোখ বুজে তা উপভোগ করছে তবে কেমন হয়? হ্যাঁ, শামুক এখন আর কোনো অবাঞ্ছিত প্রাণী নয়। সৌন্দর্যপিপাসুদের কাছে তা এক মূল্যবান মহৌষধ। জাপানের একটি রূপচর্চা কেন্দ্রে গতকাল রবিবার বিশ্বে প্রথমবারের মতো রূপচর্চায় জীবন্ত শামুক ব্যবহার শুরু হয়েছে। তাদের মতে, সুন্দর ত্বকের জন্য 'শামুক থেরাপির' তুলনা নেই।
পার্লারের কর্মীরা জানান, এই পদ্ধতিতে ফেসিয়ালের সময় মুখমণ্ডলের ওপর শামুক ছেড়ে দেওয়া হবে। এটি সারা মুখমণ্ডলে ঘুরে বেড়াবে। শামুকের চলার পথে সেটির শরীর থেকে বের হওয়া পিচ্ছিল আঠালো পদার্থের (শ্লেষ্মা) রেখা তৈরি হয়। এই থেরাপিতে শামুকের ওই শ্লেষ্মাই প্রধান উপকরণ। এতে রয়েছে ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধির উপাদান, যা প্রোটিন, অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও হায়ালিউরনিক এসিডের মিশ্রণ। এই উপাদান ত্বকের আর্দ্রতা বাড়ায়, প্রদাহ কমায় এবং ত্বকের ওপরের মৃত কোষগুলো তুলে ফেলে।
জাপানের সবচেয়ে বড় রূপচর্চা প্রতিষ্ঠান সিজেড ল্যাবো এ থেরাপি শুরু করেছে। এর একটি শাখা ক্লিনিক্যাল স্যালন। ক্লিনিক্যাল স্যালনের বিক্রয় ব্যবস্থাপক ইয়োকো মিনামি বলেন, এই স্যালনই বিশ্বের একমাত্র জায়গা, যেখানে জীবিত শামুক দিয়ে ফেসিয়াল করানো যাবে। শামুকের শ্লেষ্মা ত্বকের কোষের পুনর্গঠনে সহায়তা করতে পারে। তাই এই থেরাপির মাধ্যমে ক্ষতিগ্রস্ত ত্বক সারিয়ে তোলা সম্ভব।
রাজধানী টোকিওর এবিসু এলাকায় অবস্থিত স্যালনটিতে বর্তমানে পাঁচটি শামুক আনা হয়েছে। তাদের একটি স্বচ্ছ কাচের পাত্রে রাখা হয়েছে। খেতে দেওয়া হচ্ছে গাজর, জাপানি সবুজ কোমাৎসুনা, পালং শাকসহ অর্গানিক শাকসবজি। কর্মীরা জানান, একটি অর্গানিক শামুক উৎপাদনকারীর কাছ থেকে শামুকগুলো আনা হয়েছে। এদের খাওয়ানোও হচ্ছে অর্গানিক পদ্ধতিতে, যাতে এগুলো পরিষ্কার ও সুস্থ থাকে এবং সেবাগ্রহণকারীদের মুখমণ্ডলে স্থাপনে সমস্যা না হয়।
এক ঘণ্টার এই থেরাপির নাম রাখা হয়েছে সেলিব্রিটি এস্কারগট কোর্স। মুখমণ্ডল ম্যাসাজ, মাস্কস লাগানো, ইলেকট্র্রিক পালস দেওয়া, তারপর শামুক থেরাপিসহ পুরো প্রক্রিয়াটিতে খরচ পড়বে ১৬১ পাউন্ড।
জানা যায়, খ্রিস্টপূর্ব ৪০০ বছর আগে চিকিৎসায় শামুক ব্যবহারের প্রমাণ মেলে। বিশেষ করে ত্বকের প্রদাহ দূর করতে টক দুধের সঙ্গে শামুকের শ্লেষ্মা মিলিয়ে তৈরি উপাদান ব্যবহার করা হতো সে সময়।
গত দুই বছরে জাপান ও দক্ষিণ কোরিয়ায় শামুকের ওষুধ বেশ জনপ্রিয়তা পেয়েছে। সূত্র : টেলিগ্রাফ।

No comments

Powered by Blogger.