সবার দৃষ্টি এখন গাজীপুরের দিকে স্থানীয় নেতাদের থেকে শিক্ষা নিন

জাতীয় সংসদে যখন সরকারি ও বিরোধী দলের সাংসদেরা পরস্পরের প্রতি বিষোদ্গার করে চলেছেন, উচ্চারণের অযোগ্য শব্দ ব্যবহার করেছেন, তখন সদ্য অনুষ্ঠিত চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিজয়ী ও বিজিত প্রার্থীদের মুখে সহযোগিতার আহ্বান আমাদের মনে কিছুটা হলেও আশা জাগায়।
রাজনীতিতে রুচির চরম দুর্ভিক্ষের মধ্যে স্থানীয় রাজনীতিকেরা সম্প্রীতির যে দৃষ্টান্ত রেখেছেন, তা থেকে উভয় দলের সাংসদদের অনেক শিক্ষণীয় আছে। রাজশাহী সিটির বর্তমান ও বিদায়ী মেয়র কেবল পারস্পরিক সহযোগিতা বাড়ানোর অঙ্গীকারই করেননি, রাজনীতিতেও নতুন সংস্কৃতি আনার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এবং বলেছেন, রাজশাহী সারা দেশকে পথ দেখাবে। তাঁদের এই প্রত্যয়কে সাধুবাদ জানাই। এটাই তো জনপ্রতিনিধিদের মনোভাব হওয়া উচিত।
আমরা আনন্দের সঙ্গে লক্ষ করছি যে অন্য তিন সিটি করপোরেশনের বর্তমান ও সাবেক মেয়রও এলাকার উন্নয়ন কার্যক্রমকে রাজনীতির ঊর্ধ্বে রাখার কথা বলেছেন। চার সিটি করপোরেশনের বাইরে দ্বিতীয় বৃহত্তম নগর চট্টগ্রামের সাবেক ও বর্তমান মেয়রও রাজনৈতিক বিভাজন ভুলে একসঙ্গে উন্নয়নকাজ করার অঙ্গীকার করেছেন। রাজনৈতিক নেতৃত্ব ভিন্ন চিন্তা করলেও দেশের মানুষ কিন্তু এটাই চায়।
চার সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের পর এখন সবাই গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের দিকে তাকিয়ে আছেন। নির্বাচনে কে জিতবেন, কে হারবেন, সেই রায় দেওয়ার মালিক ভোটাররা। প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী, নির্বাচন কমিশন, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব, ভোটাররা যাতে নির্ভয়ে ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারেন সেই পরিবেশ তৈরি করা। স্থানীয় পর্যায়ে কাজটি যে খুব কঠিন নয়, চার সিটি করপোরেশন নির্বাচনই তার প্রমাণ।
আরেকটি জরুরি কথা হলো, স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচন অরাজনৈতিক হলেও প্রায় সব পর্যায়েই রাজনৈতিক রূপ পেয়েছে। কিন্তু সেই রাজনীতি পরিচ্ছন্ন ও পরমতসহিষ্ণু হলে উদ্বেগের কিছু নেই। স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচিত প্রতিনিধিরা যে দলেরই হোন না কেন, দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে তাঁরা দলমতের ঊর্ধ্বে থাকবেন আশা করি। স্থানীয় সরকার সংস্থাগুলোকে মাত্রাতিরিক্ত রাজনীতিকীকরণের ফলে অনেক ক্ষতি হয়েছে। এই ক্ষতির মাত্রা আর বাড়ানো কোনোভাবেই ঠিক হবে না।

No comments

Powered by Blogger.