নারীমঞ্চ তাঁরা আনসার কর্মকর্তা by মাসুদ রানা

৩০ জুন তাঁরা যোগ দেবেন তাঁদের কর্মস্থলে। এর আগে এক বছর ধরে চলেছে তাঁদের মৌলিক প্রশিক্ষণ। যাঁদের কথা বলা হচ্ছে, তাঁরা হলেন ৩০তম বিসিএস পরীক্ষায় আনসার ও ভিডিপি ক্যাডারে নিয়োগ পাওয়া পাঁচ নারী কর্মকর্তা।
৩০তম বিসিএসে ২৯ জনের নিয়োগ হয়েছে বাংলাদেশ আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীতে (ভিডিপি)।
১৬ জুন গাজীপুরের সফিপুর আনসার একাডেমিতে গিয়ে দেখা যায়, প্রশিক্ষণে ব্যস্ত পাঁচ নারী আনসার-ভিডিপি কর্মকর্তাকে। তাঁদের প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে গত বছরের ২১ জুন। প্রশিক্ষণ থেকে এই পাঁচজন যোগ দেবেন পাঁচ জায়গার কর্মস্থলে। নরসিংদীর বেলাব থানার মেয়ে ফারজানা আক্তার। তিনি গাজীপুর জেলার সহকারী কমান্ড্যান্ট হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন। কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ার তানজিনা বিনতে এরশাদ কাজ করবেন সফিপুর আনসার-ভিডিপি একাডেমিতেই। সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পেয়েছেন তিনি।
ইডেন কলেজ থেকে উদ্ভিদবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়ে বিসিএসে উত্তীর্ণ হয়েছেন মাদারীপুরের শিবচরের মেয়ে নাদিরা ইয়াসমিন। তাঁরও কর্মস্থল সফিপুরের বাংলাদেশ আনসার ও ভিডিপি একাডেমি। পদের নাম সহকারী পরিচালক (ব্যাটালিয়ন প্রশিক্ষণ)। বরিশালের বানারীপাড়া উপজেলার মেয়ে মেহেনাজ তাবাসসুম। তিনি কাজ করবেন বাংলাদেশ আনসার-ভিডিপি সদর দপ্তরে সহকারী পরিচালক হিসেবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইতিহাসে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নিয়েছেন তিনি। ময়মনসিংহ সদর উপজেলার মির্জা সিফাত-ই-খোদা যোগ দেবেন নারায়ণগঞ্জের জেলা কমান্ড্যান্ট হিসেবে। তিনি ফারসি ভাষা ও সাহিত্যে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেছেন।
আনসার-ভিডিপির কর্মকর্তা হয়ে কেমন লাগছে, তা নিয়ে বিস্তারিত কথা হলো তানজিনা ও ফারজানার সঙ্গে। ‘যখন ছোট ছিলাম তখন থেকেই কাউকে ইউনিফর্ম পরা দেখলে ভালো লাগত। ইউনিফর্ম আমাকে টানত সেই সময় থেকেই। বিসিএস পরীক্ষা আমার সেই স্বপ্ন পূরণ করেছে।’ বললেন তানজিনা বিনতে এরশাদ। বিসিএসের আনসার ও ভিডিপি ক্যাডারে যোগ দিয়ে মৌলিক প্রশিক্ষণ নেওয়ার পাশাপাশি হিউম্যান সিকিউরিটি বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিও নিচ্ছেন। মা ও বাবার চাকরির কারণে বেড়ে উঠেছেন চট্টগ্রামে। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পদার্থবিদ্যায় স্নাতক (সম্মান) ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি নেওয়ার পর দেন বিসিএস পরীক্ষা।
তানজিনা বলেন, ‘পড়াশোনার জন্য সব সময় ঘরের বাইরে আসা-যাওয়া ছিল। রাস্তাঘাটে নারীদের সব সময় কী ধরনের অসুবিধার সম্মুখীন হতে হয়, ছোটবেলা থেকেই জানি। তাই একটি শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হয়ে নারী উন্নয়নে কাজ করার ইচ্ছা ছিল। বিসিএস পরীক্ষার ফরম পূরণ করার সময় জানতে পারি, আনসার-ভিডিপি ছয় লাখ সদস্য নিয়ে দেশের প্রতিটি গ্রামে-শহরে দায়িত্ব পালন করে। তখনই পছন্দের তালিকায় আনসার ক্যাডার প্রাধান্য পেল। যখন গেজেটে নিজের নামটি এই বাহিনীর কর্মকর্তাদের তালিকায় আবিষ্কার করলাম, তখন থেকেই আমার পরিচয় আনসার।’ এরপর শুরু হলো প্রশিক্ষণ। তানজিনা জানতে পারলেন তাঁর কাজ সম্পর্কে। তিনি বলেন, ‘তখন থেকেই সাজাতে শুরু করলাম আমার পরিকল্পনা। এই বাহিনীতে থেকে নারী উন্নয়নে যে অবদান রাখতে পারব, অন্য কোথাও সেটা সম্ভব নয়।’
‘লিডার হওয়ার স্বপ্নটা পূরণ হয়েছে’—এমনটাই বললেন ফারজানা আক্তার। যোগ করেন, ‘সব সময় একটি স্বপ্ন দেখতাম আমি যেকোনো ভালো কাজের লিডার হব। নিজের ইউনিফর্মটা যখন পরি, তখন অনেক গর্ববোধ করি। এখন সঠিকভাবে দায়িত্ব পালন করে কর্মক্ষেত্রে দক্ষতার পরিচয় দিতে হবে।’
ফারজানা আক্তার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকল্যাণে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। ৩০তম বিসিএসের মাধ্যমে আনসার বাহিনীতে যোগদান করেন। আনসার ও ভিডিপিতে যোগ দেওয়ার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘এই বাহিনী একদিকে জননিরাপত্তা বাহিনী, অন্যদিকে জেন্ডার সেনসেটিভ। আমি সব সময় চেয়েছি যেকোনো ইউনিফর্মড বাহিনীতে যোগদান করার। আমি মনে করি, এই বাহিনীতে যোগদান করে মানুষের সেবা করার পাশাপাশি নিজের স্বপ্নকে পূরণ করতে পেরেছি। এ ক্ষেত্রে আমার বাবা-মা আমাকে অনুপ্রেরণা দিয়েছেন।’

No comments

Powered by Blogger.