মালয়েশিয়াতে সরকারী পর্যায়ে লোক পাঠালে আন্দোলনে নামবে বায়রা

সরকারী পর্যায়ে মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানি শুরু হলে আন্দোলনে নামার ঘোষণা দিয়েছে বায়রা। সরকার যদি নিজে ব্যবসা করবে তাহলে জনশক্তি রফতানির লাইসেন্স দিয়েছে কেন। জনশক্তি রফতানির বাজার সৃষ্টি করেছে বায়রা। এখন সেই বায়রাকে বাদ দিয়ে সরকার নিজে ব্যবসায় নামছে।


নতুন করে এই সেক্টরে দালাল, ফড়িয়া তৈরি হবে বলে অভিযোগ তুলেছে বায়রার নেতৃবৃন্দ।
বুধবার রাজধানীর রূপসী বাংলা হোটেলে সংবাদ সম্মেলন করে জনশক্তি রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ এ্যাসোসিয়েশন অব ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এ্যাজেন্সিজ (বায়রা) মোঃ সভাপতি শাহজালাল মজুমদার ও মহাসচিব আলী হায়দার চৌধুরী এ কথা বলেন। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, সরকার অবস্থান না বদলালে তারা আর জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে (বিএমইটি) লোক পাঠানোর জন্য ছাড়পত্র নিতে যাবেন না। এই অবস্থা থেকে জনশক্তি রফতানি খাতকে রক্ষায় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন বায়রা নেতারা। দীর্ঘদিন থেকে কর্মী নিয়োগ নেয়া বন্ধ রাখার পর বাংলাদেশ সফরে এসে মালয়েশিয়ার মানবসম্পদমন্ত্রী এস সুব্রামানিয়াম গত ১২ সেপ্টেম্বর জানান, বাংলাদেশ থেকে আবার জনশক্তি নিতে তারা রাজি। তবে অভিবাসন ব্যয় কমাতে হবে। মালয়েশিয়ার মন্ত্রীর শর্ত মেনে প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থানমন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, অভিবাসন ব্যয় কমাতে সরকারীভাবে কর্মী পাঠানো হবে। অতিরিক্ত অভিবাসন ব্যয় এবং দালাল বা মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য এ সিদ্ধান্ত হয়েছে।
বুধবারের সংবাদ সম্মেলনে বায়রা নেতৃবৃন্দ বলেন, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১২ সালের আগস্ট পর্যন্ত মোট ৮১ লাখ ৮১ হাজার ২৭৪ জন কর্মী বিশ্বের ১৪৩টি দেশে গেছেন। এর মধ্যে সরকারীভাবে গেছেন মাত্র ৫০ হাজার কর্মী। বাকি ৮১ লাখ বাংলাদেশী কর্মী বায়রার সদস্য রিক্রুটিং এজেন্সির সহযোগিতায় বিভিন্ন দেশে চাকরি নিয়ে গেছেন। বায়রার মাধ্যমে পাঠানো কর্মীদের প্রেরিত বৈদেশিক মুদ্রার পরিমাণ প্রায় পাঁচ লাখ ১২ হাজার ৬৬৪ দশমিক ৬৬ কোটি টাকা। এই টাকাই দেশের অর্থনীতির চাকাকে সচল করে রেখেছে। বায়রার সদস্যদের মাধ্যমে ২০০৯ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১২ সালের জুলাই মাস পর্যন্ত ১৮ লাখ ৭১ হাজার ৫৯২ বাংলাদেশী নাগরিককে বিদেশে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এই সময়ের মধ্যে অভিবাসী কর্মীরা দেশে ৪১ হাজার ৮৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার রেমিটেন্স পাঠিয়েছে। এই রেমিটেন্স দেশের সার্বিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করেছে।
বায়রার নেতৃবৃন্দ বলেন, রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো ১৯৮২ সালে অর্ডিন্যান্সের ১০ ধারা এবং এসআরও ৩৭১-আইন/২০০২-এ বর্ণিত বিধিমালা অনুযায়ী বিদেশে জনশক্তি রফতানি কার্যক্রমের জন্য লাইসেন্সপ্রাপ্ত হয়। তখন থেকে লাইসেন্সে প্রদত্ত শর্ত পালন ও সংশ্লিষ্ট বিধি মোতাবেক বিদেশের শ্রম বাজারের সঙ্গে সঙ্গতি রেখে কর্মী নিয়োগের চাহিদা সংগ্রহ, চাহিদাপত্রের যথার্থতা যাচাই করার জন্য সংশ্লিষ্ট দেশে নিয়োজিত বাংলাদেশ দূতাবাসের সত্যায়ন গ্রহণ, চাহিদার বরাবরে কর্মী নিয়োগের জন্য মন্ত্রণালয়-জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোতে অনুমোদন গ্রহণ, টেস্টের মাধ্যমে যথাযথ কর্মী নিয়োগ, নিয়োগকৃত কর্মীদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা, ভিসা প্রসেস, চাকরির চুক্তি স্বাক্ষর, সরকার কর্তৃক কর্মীদের প্রিডিপারচার ব্রিফিং এবং জনশক্তি, কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো (বিএমইটি) হতে কর্মীদের বহির্গমন ছাড়পত্র গ্রহণ করে নিয়োগকারীর চাহিদা অনুযায়ী কর্মী পাঠানো হয়। মন্ত্রণালয়, বিএমইটি, দূতাবাস থেকে জনশক্তি রফতানির স্বচ্ছতা, সত্যতা ইত্যাদি নিশ্চিত করে আসছে। এর বাইরে তাদের আর কোন দায়-দায়িত্ব মন্ত্রণালয় ও নিয়ন্ত্রণাধীন অফিসগুলোর নেই।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, বাংলাদেশে প্রতি বছর ৩০ লাখ করে মানুষ বেকার হচ্ছে। বেকারদের কর্মসংস্থানের জন্য দেশে তেমন কোন ক্ষেত্র নেই। এদের মধ্যে দেড় থেকে দুই লাখ দেশে কর্মসংস্থান হয়। বাকি বেকারদের কর্মসংস্থানের একমাত্র সুযোগ হয় বিদেশে। আর এই কাজটি করে থাকে বায়রার প্রায় ১২০০ সদস্য। জনশক্তি রফতানি করতে গিয়ে অনেক প্রশ্ন উত্থাপিত হচ্ছে। এই প্রশ্নগুলোর যৌক্তিক সমাধান ও জনশক্তি রফতানি অধিকতর স্বচ্ছ করতে বায়রাও চায়। এর মানে এই নয় যে ব্যবসা বন্ধ করে দিয়ে স্বচ্ছতা ও অভিবাসন ব্যয় সঙ্কোচন করতে হবে। দেশের এমন একটা গুরুত্বপূর্ণ শিল্প খাতের ব্যবসায়ীদের দেশে-বিদেশে দালাল, প্রতারক ও রক্তচোষা বলে অখ্যায়িত করা হচ্ছে। বায়রাকে ছোট করে মন্ত্রী-সচিবরা কতটুকু বড় হয়েছেন আমাদের জানা নেই। তবে বায়রার সদস্যরাই জনশক্তি রফতানির বাজারটি আজকের অবস্থায় নিয়ে এসেছে। বর্তমানে পৃথিবীর ১৪৩টি দেশে লোক পাঠানো হচ্ছে। সরকারের অবদান কতটুকু তা নিয়ে যথেষ্ট প্রশ্ন রয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে ২০০৭ ও ২০০৮ সালে মালয়েশিয়ায় কর্মী পাঠানোর বিষয়ে চরম অব্যবস্থাপনার মধ্য দিয়ে অযৌক্তিকভাবে প্রয়োজনের অতিরিক্ত বহুসংখ্যক কর্মী বিদেশে পাঠানো হয়েছে। এমন অভিযোগ তুলে মন্ত্রী-সচিবসহ কর্মকর্তারা বায়রার সদস্যদের দোষারোপ করছেন। মালয়েশিয়ার বাংলাদেশস্থ হাইকমিশনের সত্যায়িত ব্যতিরেকে কোন রিক্রুটিং এজেন্সি চাহিদাপত্র মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়নি। মন্ত্রণালয় রিক্রুটিং এজেন্সির চাহিদাপত্র পাওয়ার পর পুনরায় তার সত্যতা যাচাইপূর্বক নিয়োগানুমতি এবং বহির্গমন ছাড়পত্র দিয়েছে। এক্ষেত্রে প্রয়োজনের তুলনায় অতিরিক্ত কর্মী পাঠানোর সুযোগ রিক্রুটিং এজেন্সির নেই। তারপরও যে কোন অনিয়মের দায়-দায়িত্ব রিক্রুটিং এজেন্সির ওপরে কেন চাপানো হচ্ছে। রিক্রুটিং এজেন্সিগণ কোন অনিয়ম করলে তা বহির্গমন আইনের ১৪ ধারা মোতাবেক লাইসেন্স বাতিল করার ক্ষমতা মন্ত্রণালয়ের রয়েছে। ২০০৭ এবং ২০০৮ সালে অনিয়মের কারণে একটি লাইসেন্সও বাতিল করেনি মন্ত্রণালয়।

No comments

Powered by Blogger.