পবিত্র কোরআনের আলো-উপাসনা কেবলার উদ্দেশে নয়; বরং এক আল্লাহর উদ্দেশে

১১৩। ওয়াক্বা-লাতিল ইয়াহু-দু লাইছাতিন্নাসা-রা- আ'লা- শাইয়িন; ওয়া ক্বা-লাতিন্নাসা-রা- লাইছাতিল ইয়াহু-দু আ'লা- শাইয়িন; ওয়াহুম ইয়াতলু-নাল কিতা-বা; কাযা-লিকা ক্বা-লা ল্লাযি-না লা-ইয়া'লামু-না মিছলা ক্বাওলিহিম; ফাল্লা-হু ইয়াহকুমু বাইনাহুম ইওয়ামাল কি্বয়া-মাতি ফি-মা- কা-নু- ফি-হি ইয়াখতালিফুন।


১১৪। ওয়ামান আজলামু মিম্মাম্মানাআ' মাছাজিদাল্লা-হি আঁইয়্যুযকারা ফি-হাছ মুহু- ওয়াছাআ- ফি- খারা-বিহা-; উলা-ইকা মা- কা-না লাহুম আঁইয়্যাদখুলু-হা- ইল্লা- খা-য়িফি-না; লাহুম ফিদ্দুনইয়া খিযইঁয়ুও ওয়ালাহুম ফিল আ-খিরাতি আ'যাবুন আযীম।
১১৫। ওয়া লিল্লা-হিল মাশরিক্বু ওয়ালমাগরিবু; ফাআইনামা- তুয়াল্লু- ফাছাম্মা ওয়াজহুল্লা-হি; ইন্না ল্লা-হা ওয়াছিউ'ন আলীম।
(সুরা বাকারা : আয়াত ১১৩-১১৫)

অনুবাদ
১১৩। ইহুদিরা বলে, খ্রিস্টানরা কোনো কিছুর ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, খ্রিস্টানরা বলে ইহুদিরা কোনো কিছুর ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়। অথচ এরা উভয়ই আল্লাহর কিতাব পাঠ করে। আল্লাহর কিতাবের ব্যাপারে জানে না এমন লোকরা আবার এদের উভয়ের ব্যাপারে তাদের কথার মতো একই ধরনের কথা বলে। তারা যে বিষয়ে মতবিরোধ করছে আল্লাহ তায়ালা শেষ বিচারের দিনে সে বিষয়ে তাদের মধ্যে ফয়সালা করে দেবেন।
১১৪। সে ব্যক্তির চেয়ে জালেম আর কে আছে যে ব্যক্তি আল্লাহর মসজিদে তাঁর নাম স্মরণ করতে বাধা দেয় এবং তা ধ্বংস করতে চায়? এ ধরনের লোকদের তাতে ঢোকার কোনো যোগ্যতা নেই, তবে ভীত-বিনম্রভাবে ঢুকলে ভিন্ন কথা। তাদের জন্য ইহকালে অপমান রয়েছে। তেমনি রয়েছে পরকালে কঠিনতম শাস্তি।
১১৫। পূর্ব-পশ্চিম সবই তো আল্লাহর, তোমরা যেদিকে মুখ ফেরাবে সেদিকেই তো আল্লাহ রয়েছেন। আল্লাহ তায়ালা সর্বব্যাপী এবং সর্বজ্ঞানী।

ব্যাখ্যা
১১৩ নম্বর আয়াতটি আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় এসেছে। এখানে ইহুদি, খ্রিস্টান ও পৌত্তলিকদের চালানো পরস্পরবিরোধী প্রচারণার কথা আরো স্পষ্টভাবে বর্ণনা করা হয়েছে। এদের সব বক্তব্যই বিভ্রান্তিপ্রসূত ও প্রতিহিংসামূলক। শেষ বিচারের দিন তাদের সব বিভ্রান্তির অবসান ঘটবে। ১১৪ নম্বর আয়াতটি নাজিল হয়েছে কতিপয় ন্যক্কারজনক ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে। এসব ঘটনার কিছু ঘটেছিল সমকালীন পরিস্থিতিতে আর কিছু ঘটেছিল অতীতে। মসজিদ ধ্বংস করা এবং মসজিদে ইবাদত করতে বাধার সৃষ্টি করা। শুরুতে মুসলমানদের কেবলা ছিল মক্কার খানায়ে কাবা। এরপর ফিলিস্তিনে বায়তুল মুকাদ্দাসকে কেবলা করা হয়। উল্লেখ করা প্রয়োজন, বায়তুল মুকাদ্দাস ইহুদিদের কেবলা। এরপর আবার খানায়ে কাবাকেই মুসলমানদের কেবলা করা হয়। এ সময় ইহুদিরা মুসলমানদের মনে নানা রকম সন্দেহ ঢুকিয়ে নামাজে বিঘ্ন সৃষ্টির চেষ্টা করে। খ্রিস্টানদের পূর্বপুরুষ রোমান সম্রাট তাইতাস বায়তুল মুকাদ্দাস আক্রমণ করে উপাসকদের উপাসনায় বিঘ্ন সৃষ্টি করেছিল। হুদাইবিয়ার সন্ধির বছর রাসূল (সা.) সদলবলে কাবা জিয়ারতে গেলে মুশরিক কোরাইশরা বাধা দিয়েছিল। অতএব ইহুদি, খ্রিস্টান ও পৌত্তলিক_এরা সবাই এই গর্হিত কাজটির জন্য দায়ী। এদের শোচনীয় পরিণতির কথা এই আয়াতে বলা হয়েছে। ১১৫ নম্বর আয়াতটি নাজিল হয়েছে কেবলা পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে। এই আয়াতে স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে যে উপাসনা আসলে কেবলার উদ্দেশে নয়; উপাসনা একমাত্র আল্লাহর উদ্দেশে। নামাজের সময় মুখ পূর্বদিকে করা বা পশ্চিম দিকে করার স্বতঃসিদ্ধ কোনো তাৎপর্য নেই। আল্লাহ সর্বব্যাপী। আমরা মুখ যেদিকেই ফেরাই তিনি সেদিকেই আছেন। তবে কেবলার তাৎপর্য হলো মানুষের মধ্যে ঐক্য ও শৃঙ্খলা স্থাপন করা। কেবলা পরিবর্তনের তাৎপর্য আল্লাহই ভালো জানেন। তবে আমরা বুঝতে পারি এর তাৎপর্যও অনুরূপই। এই আয়াতের দ্বারা এ কথাই স্পষ্ট করা হয়েছে যে ইসলাম কেবলার উপাসনা শেখায় না; বরং একমাত্র আল্লাহর উপাসনা শেখায়।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.