হত্যা গণহত্যা ঘটনার পত্রিকার কাটিং নিয়ে জবানবন্দী অব্যাহত- যুদ্ধাপরাধী বিচার

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সিজার লিস্টের সাক্ষী বাংলা একাডেমীর সহকারী লাইব্রেরীয়ান এজাবউদ্দিন মিয়ার একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের সংঘটিত হত্যা, গণহত্যা,


নির্যাতনসহ বর্বরোচিত ও ঘটনার বিভিন্ন পত্রিকার কাটিং নিয়ে জবানবন্দী অব্যাহত রয়েছে। একই ট্রাইব্যুনালে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে তৃতীয় সাফাই সাক্ষীকে জেরা শেষ করেছে প্রসিকিউশন। বুধবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই সাক্ষ্য অনুষ্ঠিত হয়। অন্যদিকে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে আটক জামায়াত নেতা কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের অষ্টম সাক্ষী জেরায় বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম কিনা তা নিয়ে এত প্রশ্ন করলে আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই না। এ বিষয়ে বেশি প্রশ্ন করলে আমি আপনার বিরুদ্ধে মামলা করব। বুধবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যের ট্রাইব্যুনালে সাক্ষীকে আসামি পক্ষের আইনজীবীর জেরাকালে তিনি এ কথা বলেন।
গোলাম আযম
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষের চতুর্থ সাক্ষী মোঃ এজাবউদ্দিন মিয়ার জবানবন্দী অব্যাহত রয়েছে। বুধবার তিনি ৪র্থ দিনের মতো জবানবন্দী প্রদান করেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ তিনি এই জবানবন্দী প্রদান করেন।
এজাবউদ্দিন বাংলা একাডেমীর সহ-গ্রন্থাগারিক ও এই মামলায় জব্দ তালিকার প্রথম সাক্ষী। এজাবউদ্দিন প্রসিকিউশনপক্ষের জব্দ করা বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদন ও বিভিন্ন বইয়ের কাটিং ও নথিপত্র প্রদর্শনী হিসেবে ট্রাইব্যুনালে দাখিল করেন। বৃহস্পতিবারও তার জবানবন্দী গ্রহণ করা হবে।
পরে প্রসিকিউটর জেয়াদ আল মালুম সাংবাদিকদের বলেন, প্রসিকিউশনের এ সাক্ষী মুক্তিযুদ্ধকালে মানবতাবিরোধী অপরাধে গোলাম আযমের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ সম্পৃক্ততার বিষয়ে ১৯৭১Ñ’৭২ সালে পত্রপত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের ২৯০টি শিরোনাম উপস্থাপন করেছেন। জবানবন্দীকালে সাক্ষী এজাবউদ্দিন মিঞা ’৭১’র ১২ এপ্রিল থেকে ’৭২’র ৫ মার্চ পর্যন্ত (সিজারলিস্টে প্রদর্শনী ১৬৬ থেকে ২৪৯) পয়গম, আজাদ, ইত্তেফাক, সংগ্রামসহ বিভিন্ন পত্রিকায় মানবতাবিরোধী অপরাধ সংক্রান্ত প্রকাশিত প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন। এসব প্রতিবেদনে পাকবাহিনী ও তাদের সহযোগীদের লোমহর্ষক, বর্বরোচিত ও নির্মম হত্যাযজ্ঞ এবং নির্যাতন-নিপীড়নের ভয়াবহ চিত্র ফুটে উঠেছে।
সাক্ষী এজাবউদ্দিন মিয়ার জবানবন্দীতে পেশকৃত পত্রিকার প্রতিবেদনসমূহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য শিরোনাম হচ্ছে, ‘পাকবাহিনীর পৈশাচিক গণহত্যার আরও নজির উৎঘাটিত’, যা ১৯৭২ সালের ৫ মার্চ দৈনিক আজাদ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ‘ফসলের ক্ষেতে লাঙ্গল চলে না, কঙ্কাল আর করোটিতে ঠাসা’, যা ১৯৭২ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি একই পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। ‘পাকবাহিনী ৩০ লাখ লোককে হত্যা করেছে’ এই শিরোনামে একটি প্রতিবেদন ১৯৭২ সালের ৫ মার্চ দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। এ ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধকালে ও স্বাধীনতা লাভের পর পর ওই সময়কার বিভিন্ন পত্রিকায় প্রকাশিত মুক্তিযুদ্ধে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংঘটিত গণহত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রতিবেদন বুধবার জবানবন্দীকালে উপস্থাপন করেন প্রসিকিউশনের এ সাক্ষী। মামলার কার্যক্রম আগামীকাল পর্যন্ত মুলতবি করা হয়েছে।
জবানবন্দীর প্রথমদিনে সাক্ষী বলেন, ২০১০ সালে এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মতিউর রহমান বাংলা একাডেমীতে সংগৃহীত ১৯৭১-’৭২ সালের বিভিন্ন পত্রিকার কপি তাঁর কাছে চান। তিনি ওইসব কপি স্ক্যান করে তদন্ত কর্মকর্তাকে সরবরাহ করেন বলে উল্লেখ করেন। তিনি বলেন, পত্রিকার ওইসব কপিতে আমার উর্ধতন কর্মকর্তা সত্যায়িত স্বাক্ষর করেন। ৭১ সালের ১৮ মে থেকে ২৯ নবেম্বর পর্যন্ত দৈনিক সংগ্রামের ৩০টি ও দৈনিক আজাদের ২০টিসহ মোট ৫০টি নিউজ কাটিং তদন্ত কর্মকর্তা জব্দ করেন।
এজাবউদ্দিন মিঞা জবানবন্দী পেশকালে ’৭১ সালে প্রকাশিত বিভিন্ন পত্রিকায় গোলাম আযমের বক্তৃতা ও বিবৃতির প্রায় ৫০টি শিরোনাম ট্রাইব্যুনালে উদ্ধৃত করেন। শিরোনামগুলোর মধ্যে রয়েছেÑ ‘রাষ্ট্রের অখ-তা রক্ষায় সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ প্রয়োজন’, ‘নবনিযুক্ত মন্ত্রী সভার প্রতি অধ্যাপক গোলাম আযমের অভিনন্দন,’ ‘জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের প্রতি অধ্যাপক গোলাম আযম,’ পেশোয়ারের সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক গোলাম আযম,’ ‘প্রাদেশিক জামায়াতের মজলিশে শূরার সম্মেলন উদ্বোধন করেন অধ্যাপক গোলাম আযম,’ ‘রাজাকার শিবিরে অধ্যাপক গোলাম আযম’, করাচী বিমানবন্দরে অধ্যাপক গোলাম আযম।’
মানবতাবিরোধী ৫ ধরনের অপরাধের ৬১টি অভিযোগে অভিযুক্ত করে গত ১৩ মে গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে ট্রাইব্যুনাল। ১০ জুন তার বিরুদ্ধে ওপেনিং স্টেটমেন্ট উপস্থাপন করে প্রসিকিউশন পক্ষ। ১ জুলাই থেকে শুরু হয়েছে সাক্ষ্যগ্রহণ। গোলাম আযমের বিরুদ্ধে এ পর্যন্ত তিন জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁরা হলেন বিশিষ্ট ইতিহাসবিদ ও গবেষক ড. মুনতাসীর মামুন, বীর মুক্তিযোদ্ধা মাহবুবউদ্দিন আহম্মদ বীরবিক্রম এবং সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা, মানবাধিকার সংগঠক ও বীর মুক্তিযোদ্ধা এ্যাডভোকেট সুলতানা কামাল। গোলাম আযমের বিরুদ্ধে পাঁচ ধরনের অভিযোগ হলো, মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, ষড়যন্ত্র, উস্কানি, পাকিস্তানী সেনাদের সাহায্য করা এবং হত্যা-নির্যাতনে বাধা না দেয়া।

সাঈদী
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর পক্ষে তৃতীয় সাফাই সাক্ষীকে জেরা সম্পন্ন করেছেন প্রসিকিউটর সৈয়দ হায়দার আলী। জেরায় তিনি বলেছেন, দৈনিক জনকণ্ঠসহ কয়েকটি পত্রিকায় সাঈদীর বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অভিযোগ উঠেছে তা পড়েছি। আজ নতুন সাফাই সাক্ষীর জবানবন্দী গ্রহণ করা হবে। বুধবার চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিমের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই জেরা অনুষ্ঠিত হয়।
১১ সেপ্টেম্বর সাঈদীর পক্ষে তৃতীয় সাফাই সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেন পিরোজপুরের পাড়েরহাট এলাকার মোঃ নুরুল হক হাওলাদার (৬০)। অসুস্থ থাকায় তৃতীয় সাফাই সাক্ষীকে প্রসিকিউশনের জেরা অসমাপ্ত ছিল। এর আগে সাঈদীর পক্ষে ৫ জন সাক্ষ্য দিয়েছেন। তাঁরা হচ্ছেনÑ মোঃ শামসুল আলম তালুকদার, আব্দুর রাজ্জাক আকন্দ, মোঃ নুরুল হক হাওলাদার, আবুল হোসেন ও খসরুল আলম। তাদের জেরা শেষ করেছে প্রসিকিউশন।
নিম্নে জেরার কিছু অংশ দেয়া হলোÑ
প্রশ্ন : আপনার বািড় ও রাজাকারদের বাড়ির মধ্যে কয়টা বাড়ি ছিল।
উত্তর : আমার বাড়ি ও রাজাকারদের বাড়ির মাঝখানে ১০/১২টি বাড়ি ছিল।
প্রশ্ন : এর মধ্যে কয়টি হিন্দু বাড়ি।
উত্তর : ৭/৮টি হিন্দু বাড়ি ছিল।
প্রশ্ন : আপনার বাড়ি ও গৌরাঙ্গের বাড়ি থেকে মুসলমানের কোন্ বাড়িটি সবচেয়ে নিকটে।
উত্তর : সাফিউদ্দিন মৌলভীর বাড়ি।
প্রশ্ন : সফিউদ্দিন মৌলভীর কয় ছেলেমেয়ে।
উত্তর : এক মেয়ে দুই ছেলে।
প্রশ্ন : কার বয়স কত।
উত্তর : সেই সময় বড় ছেলের বয়স ছিল আনুমানিক ২০/২২ বছর।
প্রশ্ন : গৌরাঙ্গের বাড়ির পাশের বাড়ি কার।
উত্তর : সতিন্দ্র ডাক্তারের বাড়ি। সেই বাড়ি নেই। নদীতে ভেঙ্গে গেছে।
প্রশ্ন : সতিন্দ্র সাহার ছেলেমেয়ে কয়টা ছিল।
উত্তর : ছেলে সুভাষ আরেকটি নাম জানি না। মেয়ের কথা বলতে পারব না।
প্রশ্ন : মোসলেম মাওলানা কয়টা স্ত্রী আছে।
উত্তর : জানি না।
প্রশ্ন : কয়টি বিয়ে করেছিল।
উত্তর : জানি না।
প্রশ্ন : আপনার পরিবার রাজাকার পরিবার, মুক্তিযুদ্ধের সময় সরাসরি বিরোধিতা করেছেন। আপনার ভাতিজা রাজাকার ছিল। এবং আপনার পুরো পরিবার মুক্তিযুদ্ধের সময় সক্রিয়ভাবে বিরোধিতা করেছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনি জামায়াত করেন। বর্তমান পাড়েরহাটের জামায়াতে ইসলামীর দায়িত্বে আছেন।
উত্তর : সত্য নয়।
প্রশ্ন : আপনার বাবা শান্তি কমিটির সদস্য ছিল।
উত্তর : আমি এই শুনলাম।
প্রশ্ন : জামায়াত করেন বলে সাঈদীর পক্ষে সত্য গোপন করে মিথ্যা সাক্ষী দিলেন।
উত্তর : সত্য নয়।
আসামিপক্ষ গত ১৪ আগস্ট ট্রাইব্যুনাল-১-এ ৪৮ জন সাফাই সাক্ষীর সাক্ষ্য দেয়ার অনুমতির আবেদন করলে সাক্ষীর সংখ্যা ২০ জন নির্ধারণ করে দিয়েছে ট্রাইব্যুনাল। সাঈদীর বিরুদ্ধে তালিকাভুক্ত মোট ২০ জন প্রত্যক্ষদর্শী এবং জব্দ তালিকা থেকে আরও ৯ জন মিলিয়ে ২৭ জন মামলার তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) মোট ২৮ জন সাক্ষী সাক্ষ্য দিয়েছেন। বাকি আরও ৪৬ জন সাক্ষীর মধ্যে প্রসিকিউশনের আবেদনের প্রেক্ষিতে ১৬ জন সাক্ষীর তদন্ত কর্মকর্তার কাছে দেয়া জবানবন্দীকে তাদের অনুপস্থিতিতে সাক্ষ্য হিসেবে আমলে নিয়েছে ট্রাইব্যুনাল।
কামারুজ্জামান

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত জামায়াতের সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মোহাম্মদ কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধে শহীদের পুত্র ৮ম সাক্ষী জিয়াউল ইসলামকে জেরা করেছে আসামি পক্ষের আইনজীবী। অষ্টম সাক্ষী জেরায় বলেন, আমি মুক্তিযোদ্ধা ছিলাম কিনা তা নিয়ে এত প্রশ্ন করলে আমি আমার বাবার হত্যার বিচার চাই না। এ বিষয়ে বেশি প্রশ্ন করলে আমি আপনার বিরুদ্ধে মামলা করব। চেয়ারম্যান বিচারপতি এটিএম ফজলে কবীরের নেতৃত্বে তিন সদস্যবিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এ তিনি এ কথা বলেছেন।
কামারুজ্জামানের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের অষ্টম সাক্ষী জিয়াউল হককে জেরার সময় আসামির আইনজীবী কফিল উদ্দিন চৌধুরী সাক্ষী মুক্তিযোদ্ধা কিনা যাচাই করতে মুক্তিযুদ্ধের ট্রেনিং বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের এক পর্যায় তিনি এসব কথা বলেন। জেরা শেষে পরবর্তী সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণের জন্য ২৪ সেপ্টেম্বর দিন ধার্য করে দেন ট্রাইব্যুনাল।
জেরায় সাক্ষী বলেন, একাত্তর সালের এপ্রিল মাসের মধ্যভাগে আমি ভারতে গিয়েছি। সেখানে এক নাগাড়ে ১০ ডিসেম্বর পর্যন্ত ছিলাম। ১০ ডিসেম্বর ফিরে এসে যেদিন ময়মনসিংহ মুক্ত করি সে সময় মুক্তিবাহিনীর প্রধান ছিলেন বর্তমান সংসদ সদস্য আলহাজ অধ্যক্ষ মতিউর রহমান এবং ক্যাম্প প্রধান ছিলেন ব্রিগেডিয়ার সামসিং বাবাজি।
পরের প্রশ্নের জবাবে সাক্ষী বলেন, আমি ভারতে বিস্ফোরক দ্রব্য ট্রেনিং নিয়েছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় থ্রি নট- থ্রি রাইফেল এবং বিস্ফোরক দ্রব্য ব্যবহার করেছি। পরের প্রশ্নে আইনজীবী বলেন, সেনাবাহিনীর ভাষায় বিস্ফোরক দ্রব্যের পাওয়ারকে কি বলা হয় জানতে চাইলে সাক্ষী বলেন, আমি বলতে পারব না। ওই সময় সাক্ষী বলেন, আমি দেশ বাঁচানোর জন্য যুদ্ধ করেছি। অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্য নয়। এরপর আসামিপক্ষের আইনজীবীকে উদ্দেশ করে সাক্ষী বলেন, আপনি আমার মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে প্রশ্ন করলে আমি আপনার বিরুদ্ধে মামলা করব।
আইনজীবী প্রশ্ন করেনÑ স্বাধীনতার পর থেকে (বর্তমান সরকার আসার আগ পর্যন্ত) কামারুজ্জামানকে অভিযুক্ত করে কোথাও কোন অভিযোগ করেছেন কিনা। উত্তরে সাক্ষী বলেন, আমি আমার পিতার হত্যার বিচার চেয়ে কামারুজ্জামানকে অভিযুক্ত করে এই ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ করেছি। এ মামলার অভিযোগকারী আমি নিজেই। সাক্ষীর এ জবাবের পর প্রসিকিউটর নূরজাহান বেগম মুক্তা প্রসিকিউটরের অপর সদস্য একেএম সাইফুল ইসলামকে উদ্দেশ করে বলেন, সাক্ষী তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যে জবানবন্দী দিয়েছেন তা-ই তিনি লিখিত অভিযোগ বলে মনে করেছেন।
জেরায় সাক্ষী জিয়াউল ইসলাম বলেন, ১৯৭১ সালে আমি ১১নং সেক্টরের অধীনে যুদ্ধ করি। ১৯৭১ সালে ময়মনসিংহ জেলায় রাজাকার ও আলশামসের প্রধান কে ছিলেন তা বলতে পারব না। তবে আলবদরের প্রধান ছিলেন কামারুজ্জামান ও পিস কমিটির প্রধান ছিলেন আব্দুল হান্নান। সাক্ষী বলেন, ময়মনসিংহ জেলার আলবদর কমান্ডার কে ছিলেন তা আমি জানি না। ১৯৭০ সালে আমি ভোটার ছিলাম। তখন কারা কারা নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেছিল তা বলতে পারব না। তবে আমি আওয়ামী লীগে ভোট দিয়েছি।
কামারুজ্জামান যে রাজাকার ছিলেন সে সম্পর্কে আমি শাহরিয়ার কবিরের লেখা ‘রাজাকাররা কে কোথায়’ বই থেকে জেনেছি বলে মনে হয়। সাক্ষী জিয়াউল ইসলাম বলেন, এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আমার বাড়িতে যায়নি, তবে আমি ২০০৯/১০ সালে ময়মনসিংহ সার্কিট হাউসে জবানবন্দী দিয়েছি। আমার মা-ভাইবোন এবং বাড়ির আশপাশের লোকদের জিজ্ঞাসা করেছিল কিনা আমি দেখি নাই।
১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় এসে মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে আপনার নাম অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে বলে জেরায় সাক্ষী বলেন। ২০০৯ সালের ১১ জুন আপনার এলাকার মুক্তিযোদ্ধা ইউনিট কমান্ডারসহ ছয়জন মুক্তিযোদ্ধা আপনার বিরুদ্ধে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অভিযোগ এনে মুক্তিযোদ্ধা কেন্দ্রীয় কমান্ড কাউন্সিলে অভিযোগ করেছিলেন আইনজীবীর এমন প্রশ্নের উত্তরে সাক্ষী বলেন, এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। একাত্তর থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত এবং ১৯৯৬ থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় ছিল, তখন আপনার বাবার হত্যার মামলা করেননি কেন আইনজীবীর প্রশ্নের উত্তরে সাক্ষী বলেন, আমি সময় পাইনি। এরপর তার জেরা শেষ করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী।

No comments

Powered by Blogger.