মনমোহন ও মমতা নিজ নিজ অবস্থানে অনড়

কেন্দ্রে মনমোহন সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়ার ঘোষণার পরও অনড় অবস্থানে ক্ষমাতাসীন কংগ্রেস। ৭২ ঘণ্টার আল্টিমেটামের পর সমর্থন প্রত্যাহারের ঘোষণার পর সিদ্ধান্ত কার্যকর করার জন্য কেন্দ্রকে দৃশ্যত মমতা আরও ৭২ ঘণ্টা সময় দিলেন।


মমতার ৭২ ঘণ্টার চক্করে পড়ে অনেকটা বেকায়দায় থাকা কংগ্রেসের নীতি-নিধারকরা উদ্ভূত পরিস্থিতি থেকে উত্তরণের উপায় খুঁজতে গতকাল বিকেলে জরুরী বৈঠকে বসেছেন। মমতার সমর্থন প্রত্যাহারের এই ঘোষণা মনমোহন সরকারের জন্য বড় ধরনের ধাক্কা হিসেবে মনে করা হলেও তাঁর এই ঘোষণাকে খুব একটা পাত্তা দিচ্ছে না কংগ্রেস। মধ্যবর্তী নির্বাচনকে এড়ানোর জন্য কংগ্রেস নেতৃত্ব ইতোমধ্যেই বিভিন্ন আঞ্চলিক দলগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করতে শুরু করেছে। বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরে জানা গেছে, তৃণমূল কংগ্রেসের ১৯টি আসন রয়েছে লোকসভায়। চূড়ান্তভাবে ক্ষমতাসীন সংযুক্ত প্রগতিশীল মোর্চার (ইউপিএ) মধ্যে দ্বিতীয় বৃহত্তম দল তৃণমূল কংগ্রেস যদি আখেরে কেন্দ্রের ওপর সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়ই, তাহলে জোটের আসন সংখ্যা দাঁড়াবে ২৫৪তে এবং এ সংখ্যা প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন থেকে ১৯টি কম। তব বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবরে বলা হয়েছে, মনমোহন সরকারকে বাইরে থেকে সমাজবাদী পার্টি (এসপি), বহুজন সমাজবাদী পার্টি (বিএসপি), জনতা দল (জেডি-এস) ও আরজেডি সমর্থন দিয়ে যেতে প্রস্তুত। এসব দল যদি সমর্থন দেয়ই তাহেল সরকারের পক্ষে মোট আসন সংখ্যা দাঁড়াবে ৩শ’র ওপরে। এই সমীকরণ সম্পর্কে মমতাও যথেষ্ট ওয়াকিবহাল বলেই দৃশ্যত মনে করা হচ্ছে। সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়ার পর সরকার ভেঙ্গে যাওয়ার সম্ভাবনা কম থাকার বিষয়টি জানার পরও বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রীর লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির দায় আর নিতে রাজি নয় মমতা। জিনিসপত্রের লাগামহীন মূল্যবৃদ্ধির কারণে সাধারণ মানুষ এমনিতেই সরকারের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে আছে। তার ওপর জ্বালানির মূল্য বৃদ্ধির কারণে তা আরও বৃদ্ধি পেয়েছে। খবর টাইমস অব ইন্ডিয়া ও এনডিটিভি অনলইনের। মঙ্গলবার রাতে টাউন হলের এ্যানেক্স ভবনে দলীয় বৈঠক শেষে মমতা ঘোষণা করলেন, শুক্রবার বিকেলে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহের কাছে গিয়ে তাঁদের এক পূর্ণমন্ত্রী ও ছয় প্রতিমন্ত্রী পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। একই সঙ্গে ইউপিএ’র সঙ্গেও সম্পর্ক ছেদ করবেন তাঁরা। কিন্তু একই সঙ্গে এ-ও জানালেন যে, এখনও শেষরক্ষা হতে পারে, যদি তার মধ্যে কেন্দ্র (প্রকৃতপক্ষে কংগ্রেস নেতৃত্ব) খুচরা ব্যবসায়ী প্রত্যক্ষ বিদেশী লগ্নির সিদ্ধান্ত প্রত্যাহার করে, ডিজেলের বর্ধিত দাম তিন-চার টাকা কমায়, পরিবারপিছু ভর্তুকির সিলিন্ডারের সংখ্যা বছরে ২৪টা (পরে অবশ্য বলেন বছরে ১২টা) করার সিদ্ধান্ত নেয় এবং সারের দাম কমায়। মমতা সাফ জানিয়ে দেন, আমরা তো অপেক্ষা করেছি। ওঁদের যথেষ্ট সময় দিয়েছি, এবার ওঁরা বলুন। অর্থনীতির অঙ্ক কষে প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ অবশ্য সংস্কারের পথে চলতে অনড়। ফলে মমতার দাবি মেনে নেয়ার কোন সম্ভাবনা যে নেই তা বোঝাই যাচ্ছে কংগ্রেস নেতৃত্বের কথায়। তবে কংগ্রেস নেতারা বলছেন যে, তৃণমূল নেত্রীকে ধরে রাখার শেষ একটা চেষ্টা চালানো হবে।

No comments

Powered by Blogger.