যুক্তরাষ্ট্রে ১৭ দিনের ব্যবধানে দুই বাংলাদেশী নিহত দুর্বৃত্তের গুলিতে কমিউনিটিতে আতঙ্ক

যুক্তরাষ্ট্রের দেলাওয়ার রাজ্যের নিউয়ার্ক এলাকায় মোহাম্মদ রফিক উল্লাহ (৪৮) নামক এক বাংলাদেশী কর্মরত অবস্থায় ১২ সেপ্টেম্বর বুধবার প্রথম প্রহরে মুখোশধারী কৃষ্ণাঙ্গ দুর্বৃত্তের গুলিতে নিহত হয়েছেন। এর ঠিক ১৭ দিন আগে প্রায় একই সময়ে কৃষ্ণাঙ্গ দুর্বৃত্তের বুলেট কেড়ে নিয়েছে কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যের বেলাল তরফদারের জীবন।


যুক্তরাষ্ট্র আওয়ামী লীগের নেতা বেলাল তরফদার (৪৭) কাজ করছিলেন এবং দুর্বৃত্তটি দোকানের ক্যাশ বাক্স ছিনিয়ে নিয়ে যাওয়ার সময় তার বুকে গুলি করেছিল। ঘটনাস্থলেই তাঁর মৃত্যু হয়। কঠোর পরিশ্রমী বাংলাদেশীদের এভাবে টার্গেট করার ঘটনায় কমিউনিটিতে এক ধরনের আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। রাতের শিফটে এখন অনেকেই কাজ না করার কথা ভাবছেন। এ ধরনের পরিস্থিতিতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ড. এ কে মোমেন এবং ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জাতীয় কমিটির মেম্বার খোরশেদ খন্দকার। পৃথকভাবে তারা বার্তা সংস্থা এনাকে বলেছেন, এধরনের হিংসাত্মক আচরণের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে হবে স্ব স্ব এলাকার নির্বাচিত প্রতিনিধির কাছে। তাঁরা বলেন, বাংলাদেশের একজন গার্মেন্টস শ্রমিকের খুনের ঘটনা নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যন্ত ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। অথচ এই আমেরিকায় গত কয়েক মাসে আটলান্টা, মিশিগান, নিউজার্সিতে অন্তত ৬ বাংলাদেশী কর্মরত অবস্থায় খুন হয়েছেন। এ নিয়ে স্টেট ডিপার্টমেন্ট একটি শব্দও করেনি।
দেলাওয়ার থেকে প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, মঙ্গলবার রাত ১২টা ৪০ মিনিট তথা ১২ সেপ্টেম্বর বুধবার প্রথম প্রহরে মুখোশধারী দুই ডাকাত নিউয়ার্ক এলাকায় ১০০ ফোর সিজনস পার্কওয়েতে অবস্থিত ‘৭-ইলেভেন’ স্টোরে প্রবেশ করে। এ সময় তাদের পরনে ছিল কালো পোশাক। তারা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে রফিক উল্লাহর কাছে অর্থ চায়। রফিক তার কাছে যে অর্থ ছিল তা দিয়ে দেন ডাকাতদের। তারা চলে যাওয়ার সময় পেছন ফিরে গুলি করে। এতে মারাত্মক আহত হন রফিক। পুলিশের মুখপাত্র সার্জেন্ট পল শাভাক বলেন, ঘটনাস্থলেই মারা যান রফিক। তিনি ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, রফিকের কাছ থেকে অর্থ নিয়ে চলে যাওয়ার সময় দোকানের গেটে দাঁড়িয়ে পেছন ফিরে তাদের একজন গুলি করে। এ ঘটনায় ৪৪ ঘণ্টা পর এক মহিলাসহ ৩ ডাকাতকেই পুলিশ গ্রেফতার করেছে। এরা হচ্ছে ভ্যানিশা ডি কারসন, ভিনসেন্ট স্টলিং এবং আন্দ্রে ডি পালমার। স্টোরের ভিডিও ফুটেজ দেখে এদের শনাক্ত করা হয় এবং তাদের বিরুদ্ধে সশস্ত্র ডাকাতি ও হত্যা মামলা দায়ের করা হয়েছে। এর আগে কানেকটিকাট অঙ্গরাজ্যে বেলাল তরফদারের ঘাতককেও গ্রেফতার করা হয়েছে। সেও কৃষ্ণাঙ্গ।
প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, নোয়াখালীর সন্তান মোহাম্মদ রফিক উল্লাহ ৮ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্রে এসেছিলেন। দেশে তাঁর একমাত্র পুত্র এবং স্ত্রী রয়েছেন। কাজ করে উপার্জিত অর্থের সিংহভাগ পাঠাতেন তাঁদের কাছে। তিনিই ছিলেন ওই পরিবারের ভরসা। যে স্টোরে কাজ করতেন সেটির মালিক ভারতীয়-আমেরিকান কৈলাশ ঠাকুর। তিনি বলেন, একজন সৎমানুষ হিসেবে পরিচিত ছিলেন রফিক উল্লাহ। তাই তাঁকে সবাই আদর করে ডাকতেন ‘পপি’। তিনি ছিলেন কর্মঠ। কঠিন কাজ করতেন। তাঁর একটিই লক্ষ্য ছিল জীবনে ভাল কিছু করা। তাই তিনি অর্ধ-পৃথিবী দূরে পরিবার, আপনজনদের ফেলে পাড়ি দিয়েছিলেন যুক্তরাষ্ট্রে। তিনি স্বপ্ন দেখেছিলেন দেশে তাঁর পরিবারকে ভাল অবস্থানে নিয়ে যেতে। কিন্তু তাঁর সেই স্বপ্ন ঘাতকের গুলিতে ধূলিসাত হয়ে গেছে। দেলাওয়ার অঙ্গরাজ্যে খোঁজখবর নেয়ার পর খোরশেদ খন্দকার এনাকে আরও জানান যে, নিহত রফিক উল্লাহর লাশ দেশে পাঠানোর প্রস্তুতি চলছে।

No comments

Powered by Blogger.