আমাদের নিবেদন-মার্চ এপ্রিল ১৯৭১

মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সবচেয়ে গৌরবময় অধ্যায়। চেতনার উজ্জ্বলতম শিখা। জাতি হিসেবে আমাদের রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস; যার বেশিরভাগ জুড়েই পরাজয়, শোষণ আর নির্যাতন। আন্দোলন হয়েছে অনেক। বহু পটপরিবর্তনও হয়েছে; কিন্তু শৃঙ্খলে আবদ্ধ এ জাতি স্বাধীনভাবে নিজের মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারেনি এর আগে। ১৯৭০-এর নির্বাচনে

আওয়ামী লীগ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলেও পাকিস্তানিরা তালবাহানা ও ষড়যন্ত্র করে ক্ষমতা হস্তান্তরে গড়িমসি করে। বাঙালির অবিসংবাদিত নেতা জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বে তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানজুড়ে শুরু হয় সর্বাত্মক অসহযোগ আন্দোলন। দ্রুত পটপরিবর্তন হতে থাকে। এরই এক পর্যায়ে ২৫ মার্চ রাতের আঁধারে পাকিস্তানি বাহিনী অতর্কিত আক্রমণে দিশেহারা করে দেয় নিরস্ত্র বাঙালিকে। ঢাকা শহর রক্তে প্লাবিত হয়। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে অলিগলিতে নির্বিচার নারকীয়তার শিকার হয় নিরস্ত্র ঘুমন্ত বাঙালি। পাকিস্তানিরা ভেবেছিল, হত্যা করেই চিরদিনের জন্য স্তব্ধ করে দেওয়া যাবে এ জাতিকে।
অসীম সাহসী বাঙালি অনতিবিলম্বে রুখে দাঁড়ায় প্রবল পরাক্রান্ত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে। যুদ্ধ কাকে বলে, তা ছিল সাধারণ মানুষের জানার আওতার বাইরে। তাদের ছিল না কোনো প্রশিক্ষণ কিংবা নূ্যনতম প্রস্তুতি। এ সবকিছুর মধ্যে ১৯৭১-এর ২৫ মার্চের রক্তাক্ত অধ্যায়। এই দেশ ও জাতির প্রেক্ষাপট এরপর দ্রুত বদলে যায়। এবারের স্বাধীনতা দিবস বিশেষ সংখ্যায় আমরা দৃষ্টি দিয়েছি সেই রুদ্ধশ্বাস সময়ে; মার্চ-এপ্রিল ১৯৭১। ২৫ মার্চে পাকিস্তানিদের হিংস্র আক্রমণে যখন দিশেহারা বাঙালি; একদিকে নিরাপদ আশ্রয়ের জন্যে ছুটে চলা, অন্যদিকে পশুশক্তিকে রুখে দেওয়ার জন্য দুর্বার প্রতিরোধ। আমরা পেঁৗছুনোর চেষ্টা করেছি দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের অসীম সাহসী মানুষদের কাছে, যারা সেই সময়ের জ্বলন্ত প্রতিনিধি। তাদের অকপট বর্ণনায় উঠে এসেছে ১৯৭১-এর মার্চ-এপ্রিলের আগুনঝরা দিনগুলো। সবমিলিয়ে আমরা এতে পাব হঠাৎ আক্রমণে বিপর্যস্ত দেশের সাধারণ মানুষের সাহসী প্রতিরোধের অনুপম আখ্যান। মুক্তির মন্দির সোপানতলে যে অজস্র প্রাণ বলিদান হয়েছে ... আজ পরম শ্রদ্ধায় তাদের স্মরণ করি। একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তোলাই হতে পারে সেইসব অগণিত মানুষের আত্মদান ও স্বপ্নের প্রতিলিপি।

No comments

Powered by Blogger.