স্বাধীনতা দিবস-নতুন প্রেক্ষাপটে মুক্তির লড়াই

স্বাধীনতা মানে কেবলই রাজনৈতিক পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্ত হওয়া নয়। নতুন মানচিত্র ও জাতীয় পতাকার গৌরবেও তা সীমিত থাকে না। স্বাধীনতা মানে ইচ্ছার স্বাধীনতা, রাজনীতির স্বাধীনতা এবং অবশ্যই উন্নত-সমৃদ্ধ অর্থনৈতিক পরিবেশে শ্রেণী-পেশা-ধর্ম নির্বিশেষে সবার আরও ভালো থাকার জন্য নিশ্চিত অধিকার।

বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণে দ্ব্যর্থহীনভাবে বলেছিলেন, 'এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম মুক্তির সংগ্রাম।' অশেষ আত্মত্যাগের বিনিময়ে রাজনৈতিক স্বাধীনতা আমরা অর্জন করেছি। মুক্তির সংগ্রামে বিজয়ী হওয়াই নবতর প্রেক্ষাপটের প্রধান চ্যালেঞ্জ। এ জন্য অর্থনীতির প্রতিটি শাখাকে শক্তিশালী করা চাই। একই সঙ্গে মনোযোগী হতে হবে এমন পরিবেশ সৃষ্টিতে, যেখানে উন্নয়নের সুফল মুষ্টিমেয় লোকের অধিকারে না থাকে, বরং ছড়িয়ে পড়ে সমাজের সর্বত্র। এভাবেই আসতে পারে সমাজের সার্বিক মুক্তি।
প্রতিটি স্বাধীনতা দিবসই বিশেষ তাৎপর্য নিয়ে আমাদের সামনে হাজির হয়। গতকাল ২৫ মার্চ একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধে অভিযুক্তদের বিচারের জন্য আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২-এর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। এর ফলে আরও কয়েকজন অপরাধীর বিচারের কার্যক্রম শুরু করা সম্ভব হবে। এখন প্রত্যাশা, বিচার কাজ দ্রুত সম্পন্ন করে অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করা।
এবারের মার্চেই আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা ছিল সমুদ্র সীমানা নিয়ে প্রতিবেশী মিয়ানমারের সঙ্গে বিবাদে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল ইটলস কর্তৃক বাংলাদেশের পক্ষে রায় ঘোষণা। এর ফলে আমাদের সার্বভৌমত্বের দিগন্ত যেমন প্রসারিত হয়েছে, তেমনি অর্থনীতির সম্ভাবনাও বেড়েছে বিপুলভাবে। টেকসই উন্নয়নের পরিকল্পনা সামনে রেখে এ সম্পদ যথাযথ কাজে লাগানো সম্ভব হলে অর্থনৈতিক মুক্তির মূল লক্ষ্যে পেঁৗছানো সহজ হবে।
স্বাধীনতার ৪১ বছর পূর্তির এই দিনে প্রত্যাশা থাকবে, নতুন প্রজন্ম দেশকে বিশ্বসমাজে সমাদৃত হওয়ার মতো পর্যায়ে পেঁৗছে দিতে অগ্রণী ভূমিকা পালন করুক। আজকের বাংলাদেশে একাত্তরের সেই কঠিন সময় অতিক্রম না করা প্রজন্মের সংখ্যাই অধিক। কিন্তু তাদেরও রয়েছে মুক্তিযুদ্ধের সময়ের নারী-পুরুষের মতো স্বপ্ন ও সাহস। আর একটি দশকের কম সময় অতিক্রান্ত হলেই আমরা স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী পালন করব। এ প্রজন্ম ইতিহাসকে জেনে, ইতিহাসের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে উচ্চকিত হয়েছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে। আগামী দিনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় আলোকিত থেকে তারাই স্বাধীন বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেবেন। বলা হয়ে থাকে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত তারুণ্যের নবউত্থান চার দশকের বাংলাদেশের ইতিহাসে উলেল্গখযোগ্য অভিজ্ঞতা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এ চেতনা অব্যাহত থাকলে সেটি হবে মুক্তিযুদ্ধের শ্রেষ্ঠ অর্জন। অসাম্প্রদায়িক ও গণতান্ত্রিক এবং অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গঠনের এভাবেই রচিত হবে প্রকৃত ও কার্যকর ভিত।
আজ ২৬ মার্চ বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায় জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এবং তার সহকর্মীদের স্মরণের দিন, মুক্তিসংগ্রামের প্রতি সম্মান জানানোর দিন। তাদের স্মৃতিচারণের দিন। যে চেতনা নিয়ে একদিন কৃষকের সন্তান অস্ত্র ধারণ করেছিলেন, শ্রমিক কারখানার হাতুড়ি ছেড়ে আধুনিক অস্ত্র নিয়ে পাকিস্তানি সেনাবাহিনীর বাঙ্কারে অমিত বিক্রমে ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন, ছাত্ররা ছেড়েছিলেন ক্যাম্পাস, নারীসমাজ সামলেছিল ঘর ও বাইরের চ্যালেঞ্জ এবং বুদ্ধিজীবীরা অসির বিরুদ্ধে মসিকেই সংগ্রামের হাতিয়ার বানিয়েছিলেন, সে চেতনার মর্ম সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ূক, এটাই প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.