আমাদের অভিনন্দন-নতুন উচ্চতায় মুহাম্মদ ইউনূস

মুহাম্মদ ইউনূসের প্রধান অবদান গ্রামীণ ব্যাংক। তাঁর উদ্যোগে প্রতিষ্ঠিত গ্রামীণফোনও আজ ঘরে ঘরে। সংগঠন বা সফল ও টেকসই ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার সাফল্য অনেকেরই আছে। কিন্তু মুহাম্মদ ইউনূসের প্রধান অবদান হলো, তিনি শুধু সংগঠনই গড়েননি, গ্রামীণ নারীর ক্ষমতায়নের সূচনা করেছেন।

গ্রামীণ ব্যাংকের সহায়তায় গ্রামে গ্রামে নারী আজ সংসার ও সমাজে সিদ্ধান্ত গ্রহণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছেন। বাংলাদেশের অনুন্নত গ্রামীণ সমাজের জন্য এটা এক অসাধারণ অর্জন। বিশ্বখ্যাত সাময়িকী ফরচুন বিশ্বসেরা ১২ জন উদ্যোক্তার তালিকায় মুহাম্মদ ইউনূসের স্থান করে দিয়ে সেই ব্যতিক্রমী অর্জনেরই স্বীকৃতি দিল।
এটা সত্যিই গর্বের বিষয় যে অ্যাপল, মাইক্রোসফট, আমাজন ডটকম, ফেসবুক, গুগলের মতো বিশ্বকে নাড়া দেওয়া প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তাদের পাশে গিয়ে দাঁড়ালেন বাংলাদেশের মুহাম্মদ ইউনূস। লক্ষণীয়, যে ১২টি সংগঠনের উদ্যোক্তাকে বিশ্বসেরা হিসেবে সম্মানিত করা হয়েছে, তাঁদের ১০ জনই যুক্তরাষ্ট্রের, আর যে দুজন বাইরের তাঁদের একজন ভারতের, আরেকজন বাংলাদেশের। তাহলে ব্যাপারটা দাঁড়াল এই যে, সৃজনশীল ও কালজয়ী উদ্যোক্তা হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রের পরই ভারত ও বাংলাদেশ। এ যে কত বড় সম্মান বাংলাদেশের জন্য, তা সহজেই বোঝা যায়।
মুহাম্মদ ইউনূসই প্রথম এই তত্ত্ব প্রচার শুরু করেন যে গরিবদেরও ঋণ পাওয়ার অধিকার আছে, যদিও সেই ঋণের জন্য প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী জামানত দেওয়ার সহায়-সম্পত্তি তাঁদের নেই। গরিব মানুষের কঠোর শ্রমের অঙ্গীকার, ঋণ ফেরত দেওয়ার প্রকৃত সততা ও ঋণ পরিশোধ করতে না পারলে যে তাঁদের পাশে দাঁড়ানোর কেউ থাকে না, এই বাস্তব উপলব্ধিই তাঁদের ঋণের জামানত। এই ভিত্তিতে তিনি গ্রামের গরিবদের মধ্যে ক্ষুদ্রঋণ বিতরণ শুরু করেন। যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বের অনেক দেশই বর্তমানে ক্ষুদ্রঋণপদ্ধতি গ্রহণ করেছে। সামাজিক ব্যবসার নতুন ধারণা নিয়ে বর্তমানে কাজ শুরু করেছেন তিনি।
মুহাম্মদ ইউনূস ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পুরস্কারে ভূষিত হয়ে বাংলাদেশকে বিশ্বের দরবারে অন্যন্য মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছিলেন। আজ আবার বিশ্বসেরা উদ্যোক্তাদের তালিকায় স্থান লাভ করে বিশ্ববাসীকে মনে করিয়ে দিলেন, বাংলাদেশের রয়েছে অফুরন্ত মেধা ও সম্ভাবনা। দিনে দিনে বাংলাদেশ আরও পল্লবিত হবে, আরও এগিয়ে যাবে। আমরা তাঁকে অভিনন্দন জানাই।

No comments

Powered by Blogger.