নির্ধারিত ভাড়া নিশ্চিত করার দায়িত্ব সরকারের-বাসভাড়া নিয়ে নৈরাজ্য

বাসভাড়া নিয়ে গণপরিবহন-ব্যবস্থায় যা ঘটছে, তা এককথায় নৈরাজ্য ছাড়া আর কিছুই নয়। পরিবহনমালিকেরা তাঁদের খেয়ালখুশিমতো ভাড়া আদায় করছেন, যাত্রীরা তা মানতে বাধ্য হচ্ছেন, আবার কখনো প্রতিবাদ করছেন—এ নিয়ে বচসা-মারামারি এখন প্রতিদিনের ঘটনা। পরিবহনমালিকদের স্বেচ্ছাচারিতাই যেন চূড়ান্ত কথা।

সরকার জ্বালানির দাম বাড়িয়েছে, এরপর এর সঙ্গে সমন্বয় করে গণপরিবহনের ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে। কাজটি সরকার একতরফাভাবে করেছে এমনও নয়। পরিবহনমালিকদের প্রতিনিধিরাও সেখানে উপস্থিত ছিলেন। জ্বালানির দাম যে হারে বেড়েছে, সেটা বিবেচনায় নিয়েই নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। সেই ভাড়া কার্যকর হবে, এটাই স্বাভাবিক। কিন্তু বাস্তবতা ভিন্ন। বাসমালিকেরা ভাড়া বাড়িয়েছেন অনেকটাই নিজেদের মতো করে, যাত্রীদের কাছ থেকে সেই ভাড়া আদায়ও চলছে জোর করে। বলা যায়, জনগণ জিম্মি হয়ে পড়েছে বাসমালিকদের কাছে। প্রথম আলো পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাসমালিকদের পক্ষ থেকে যে নেতা বাসভাড়া নির্ধারণের সভায় উপস্থিত ছিলেন, তাঁর পরিবহনের বাসে যাত্রীদের কাছ থেকে বেশি ভাড়া আদায় করা হচ্ছে।
সরকার যেহেতু ভাড়া নির্ধারণ করে দিয়েছে, তাই এই ভাড়া যাতে কার্যকর হয়, সেটা দেখার দায়িত্ব সরকারের। জনগণ বাসশ্রমিক ও বাসমালিকদের ভাড়া করা গুন্ডাপান্ডার সঙ্গে মারামারি করে বেশি ভাড়া নেওয়া ঠেকাবে, বিষয়টি নিশ্চয়ই তা নয়। আমরা দেখছি, সরকার সে কাজটি করতে পারছে না। বাড়তি বাসভাড়া আদায় রোধ করতে উচ্চ আদালতের পক্ষ থেকেও কিছু নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। বলা হয়েছে একাধিক ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে, বাস কাউন্টারে ভাড়ার তালিকা টাঙিয়ে দিতে। বিআরটিএর পক্ষ থেকে ভাড়ার তালিকাও সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু প্রথম আলোর প্রতিবেদক রাজধানীর বিভিন্ন বাস কাউন্টার ঘুরে দেখেছেন, অনেক কাউন্টারেই এই তালিকা নেই।
নির্ধারিত হারে ভাড়া আদায় নিশ্চিত করা বা আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়ন—কাজ দুটি কার্যকর করার দায়িত্ব সরকারের। জনগণের প্রতি সরকারের দায়বদ্ধতা থাকলে সরকারকে তা নিশ্চিত করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্যর্থতার কোনো সুযোগ নেই। সরকার নিজের নির্ধারিত ভাড়া বাস্তবায়ন করবে, না বাসমালিকদের স্বেচ্ছাচারিতা মেনে নিয়ে জনগণের দুর্ভোগ বাড়াতে থাকবে, সেই সিদ্ধান্ত সরকারকেই নিতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.