সমঝোতা ও সহনশীলতাই গণতন্ত্রের পথ-সংসদে গিয়ে কথা বলুন

প্রধান বিরোধী দল বিএনপি জাতীয় সংসদের চলতি অধিবেশনে যোগদানের যে ইঙ্গিত দিয়েছে, তাকে আমরা স্বাগত জানাই। গত মঙ্গলবার পত্রিকান্তরে দলের একাধিক নেতা বলেছেন, দেশ ও জনগণের মঙ্গলের জন্য যা প্রয়োজন, তাঁরা তা-ই করবেন। বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্র সফরে আছেন।

তিনি দেশে ফেরার পর ২৮ মে বিএনপি সংসদীয় দলের সভা অনুষ্ঠিত হবে। দেশবাসীর প্রত্যাশা, বিএনপির সংসদীয় দলের বৈঠকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত হবে এবং দলটি সংসদে যোগ দিয়ে তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবে। বিরোধী দলের সূত্রে জানানো হয়েছে, বাজেট অধিবেশনে যোগ দিলেও তারা ৯ জুন বাজেট পেশের দিন যাচ্ছে না। এ ধরনের নেতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি অবশ্যই পরিত্যাজ্য। এর আগে বিরোধী দল সংসদে যোগদানের ব্যাপারে কিছু শর্তের কথাও বলেছিল। বিরোধীদলীয় নেত্রীর মামলা প্রত্যাহারসহ কিছু দাবি তারা সরকারের কাছে তুলে ধরেছে। এগুলো যোগদানের পূর্বশর্ত না করে সবকিছু নিয়েই সংসদে আলোচনা হতে পারে।
সংসদের চলতি অধিবেশনটি নানা কারণে তাৎপর্যপূর্ণ। এই অধিবেশনে ২০১১-১২ অর্থবছরের বাজেট অনুমোদন ছাড়াও সংবিধান সংশোধনের প্রস্তাব পেশ করার কথা। বাজেট পেশের দিন সংসদে বিরোধী দল উপস্থিত থাকলে তা একটি ভালো দৃষ্টান্ত হতো। জাতীয় সংসদ কোনো দলের সম্পত্তি নয়, সমগ্র জাতির সম্পত্তি। বিরোধী দল কেন এই সংসদের ওপর তাদের হক ছেড়ে দেবে? সরকারি দলই বা কেন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সংসদে আলোচনায় আগ্রহ দেখাবে না? চলতি অধিবেশনের শুরুতে স্পিকার আবদুল হামিদ সংসদে যোগদানের জন্য বিরোধী দলের প্রতি আবার আহ্বান জানিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি সরকারি ও বিরোধী—উভয় দলকে সহনশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। আমরাও মনে করি, সরকারি ও বিরোধী দলের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই সংসদ প্রাণবন্ত ও কার্যকর হতে পারে। বিরোধী দলের অনুপস্থিতিতে সংসদ নিষ্প্রাণ হয়ে ওঠে, জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয় থাকে অনালোচিত।
মাননীয় সুপ্রিম কোর্টের রায়ের পরিপ্রেক্ষিতে সংবিধান সংশোধনের বিষয়টি সামনে এসেছে। সব পক্ষের মধ্যে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে এটি হওয়া প্রয়োজন। কিন্তু বিরোধী দল বলেছে, তারা সংবিধান সংশোধন-প্রক্রিয়ায় অংশ নেবে না। সংবিধান সংশোধনের মতো জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে তাদের এই নেতিবাচক মনোভাব সমর্থনযোগ্য নয়। বিরোধী দলের উচিত হবে সংবিধান সংশোধন বিষয়ে তাদের যুক্তিগুলো সংসদে তুলে ধরা। সরকারেরও কর্তব্য হবে বিরোধী দলকে কেবল সংখ্যার ভিত্তিতে বিচার না করে তাদের যুক্তিপূর্ণ বক্তব্য ও প্রস্তাব আমলে নেওয়া। দায়িত্ব গ্রহণের পর প্রধানমন্ত্রী ও সংসদ নেত্রী বিরোধী দল তথা দেশবাসীকে সে ধরনের আশ্বাসই দিয়েছিলেন। একগুঁয়েমি নয়, সমঝোতা ও সহিষ্ণুতার পথেই সমস্যার সমাধান খুঁজতে হবে।
নির্বাচনের আগে দুই প্রধান দলই জাতীয় সংসদকে রাজনীতির কেন্দ্রবিন্দু করার ওয়াদা করেছিল। আজ সেই ওয়াদা থেকে সরে আসার সুযোগ নেই। অব্যাহত সংসদ বর্জন কিংবা একতরফা সংসদ পরিচালনা—কোনোটিই দেশ ও জনগণের জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না।

No comments

Powered by Blogger.