দুর্গত মানুষের হাহাকার কবে ঘুচবে?-আইলার দুই বছর

২০০৯ সালের ২৫ মে ঘূর্ণিঝড় আইলা আঘাত হানে। উপকূলবর্তী বাঁধ ভেঙে ভেসে যায় হাজার হাজার ঘরবাড়ি। আইলার ভয়াবহ আঘাতে মানুষ যেমন ঘরছাড়া হয়, তেমনি হারায় জীবিকাও। দুই বছর পেরিয়ে গেল, অথচ আজও তাদের দুর্দশা ঘোচেনি। সাধারণত বড় কোনো বিপর্যয়ের পর জরুরি ভিত্তিতে নেওয়া হয় পুনর্বাসনের ব্যবস্থা।

কিন্তু এত দিনেও আইলাদুর্গত মানুষের যথাযথ পুনর্বাসন হলো না। মাসের পর মাস উদ্বাস্তু মানুষ বেড়িবাঁধের ওপর বসবাস করছে। বিকল্প জীবিকার পর্যাপ্ত সুযোগ তৈরি করা যায়নি। কেন এমন হলো? এসব মানুষ কি রাষ্ট্র ও সরকারের কাছে অপাঙেক্তয় হয়েই থাকবে?
বেড়িবাঁধ মেরামত করে আইলাদুর্গত মানুষের জরুরি ভিত্তিতে পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করায় তাদের হাতে কাজ নেই। মঙ্গাপীড়িত অঞ্চলের মতো এখানেও বছরের বড় একটা সময় কোনো কাজ থাকে না। কাজের সন্ধানে অনেকে চলে যাচ্ছে অন্যত্র। আজও প্রায় ৫৪ হাজার মানুষ ঘরে ফিরতে পারেনি, তাদের মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। সেখানে আছে খাওয়ার পানির তীব্র সংকট। ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত করা হলেও এগুলো অত্যন্ত দুর্বল। ঝড়বৃষ্টিতে ভেঙে পড়ার ঝুঁকি আছে।
এসব মানুষের দুর্গতি দুই বছরেও কেন ঘোচানো যাবে না? সরকার আন্তরিক হলে এ ক্ষেত্রে অর্থসংস্থানের ঘাটতি হওয়ার কথা নয়। আইলাদুর্গত মানুষের জীবন-জীবিকা নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে সময়মতো ও দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পরিকল্পনার স্পষ্ট ঘাটতি আছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, মুখ্যত সরকারের অবহেলা এবং সংশ্লিষ্ট লোকজনের দুর্নীতির কারণে আজকের অবস্থা তৈরি হয়েছে। তা ছাড়া স্থানীয় পর্যায়ে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের দুর্নীতি ও নিজ স্বার্থরক্ষার চেষ্টার কারণে বেড়িবাঁধ মেরামত দীর্ঘায়িত হয়েছে এবং পুনর্বাসন-প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয়েছে।
জবাবদিহির মাধ্যমে অনিয়ম ও দুর্নীতির প্রতিকার করার পাশাপাশি মঙ্গাপীড়িত এলাকায় যেমন বড় পরিকল্পনা করে মৌসুমি কর্মসংস্থানহীনতা দূর করার ক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়া গেছে, সে ধরনের পরিকল্পনা প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা উপকূলীয় মানুষের জন্যও থাকা জরুরি। সংস্কারের পাশাপাশি বেড়িবাঁধের যথাযথ ব্যবস্থাপনা গড়ে তোলা প্রয়োজন। কৃষিকাজ বাড়াতে লবণসহিষ্ণু জাত উদ্ভাবন করে কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া দরকার। আইলাদুর্গত মানুষের দুর্দশা ঘোচাতে হবে। এটা সরকারের দায়িত্বও বটে।

No comments

Powered by Blogger.