মন্ত্রীর ভাইয়ের পক্ষে এমপির ওকালতি by হায়দার আলী ও সুমন বর্মণ,

রসিংদী সদরের আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য লে. কর্নেল (অব.) নজরুল ইসলাম হীরু বীরপ্রতীক বলেছেন, লোকমান হত্যা মামলায় কিছু ব্যক্তির নাম বলা হচ্ছে। নামগুলো কার? জেলার দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রীর ভাইয়ের, শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি, মন্ত্রীর এপিএসের। অথচ ঘটনার সময় এপিএস ও মন্ত্রী ছিলেন বিদেশে। হত্যাকাণ্ডের সময় শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোন্তাজ উদ্দিন ভুঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক লোকমান হোসেন পাশাপাশি বসা ছিলেন। তিনি বলেন, 'এতে নরসিংদীর অনেক মানুষ বুঝতে পারছে না এ নামগুলো কেন মামলায় এল। তাঁদের নামগুলো দেওয়ার কারণেই মানুষ মনে করছে মামলাটি বিভ্রান্তমূলক হয়েছে।'


গতকাল বৃহস্পতিবার জেলা আইনশৃঙ্খলা সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন নজরুল ইসলাম হীরু। মামলার প্রধান আসামি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, 'আমি শুধু এমপি হিসেবেই নয় একজন বিবেকবান মানুষ হিসেবে বলছি, সালাউদ্দিন বাচ্চু সাহেবকে আমি যত দিন ধরে চিনি, আমার জন্য এটা বিশ্বাস করতে অত্যন্ত কষ্ট হচ্ছে এবং আমার মন কিছুতেই বলছে না তিনি এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত। ভালো মানুষের ব্যাপারে আমাকে অবশ্যই বলতে হবে।' প্রসঙ্গত, বাচ্চু ডাক ও টেলিযোগাযোগমন্ত্রী রাজিউদ্দিন আহমেদ রাজুর ছোট ভাই।
সংসদ সদস্যের বক্তব্যে বিস্ময় প্রকাশ করেছে নিহত লোকমান হোসেনের পরিবার। মামলাটিকে ভিন্ন খাতে নেওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে লোকমান হোসেনের ছোট ভাই ও মামলার বাদী কামরুজ্জামান বলেন, 'সংসদ সদস্য একটি দায়িত্বশীল পদ। মামলার তদন্ত চলাকালীন এমন দায়িত্বশীল ব্যক্তির এ ধরনের মন্তব্য মামলাকে প্রভাবিত করতে পারে।
উনি যদি জেনে থাকেন আসামিরা আমার ভাইকে হত্যা করেনি, তাহলে তিনি অবশ্যই জানেন এ হত্যার সঙ্গে কারা জড়িত। তিনি তাদের নাম বলছেন না কেন?'
সংসদ সদস্য হীরু আরো বলেন, 'মেয়রকে হত্যা করা হয়েছে বিশেষ উদ্দেশ্য নিয়ে। যার ফলে নরসিংদীর মানুষের নিরাপত্তার ব্যাঘাত ঘটেছে। নরসিংদীর মানুষ বঞ্চিত হয়েছে নিবেদিত একজন সেবকের সেবা থেকে। তাঁর অনেক সুন্দর সুন্দর পরিকল্পনা ছিল শহরকে নিয়ে এবং সেগুলো বাস্তবায়ন করার আগেই তাঁকে পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেওয়া হলো।'
সংসদ সদস্য হীরু নরসিংদীবাসীকে আশ্বস্ত করতে বলেন, 'লোকমান হত্যার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী নিজে অত্যন্ত ব্যথিত। কারণ তিনিও প্রকাশ করেছেন তাঁর পরিবার-পরিজনকে এভাবে ঘাতকের বুলেটে পৃথিবী থেকে চলে যেতে হয়েছিল। সুতরাং তিনি কোনোমতেই এই অনুসন্ধানে ছাড় দেবেন না। প্রধানমন্ত্রী নিজে এ ব্যাপারে তদারক করছেন। এরই ফলে নরসিংদীতে পুলিশ প্রশাসনে রদবদল করা হয়েছে। সুতরাং তদন্তকার্য নিয়ে কারো কোনো শঙ্কা থাকা উচিত নয়। তদন্তে সময় লাগতেই পারে, যদি আমরা দৃঢ় বিশ্বাস করি। এটা খুব দ্রুত নতুন পুলিশ কর্মকর্তারা খুঁজে বের করবেন।'
নজরুল ইসলাম হীরু বলেন, 'একটা হত্যকাণ্ড তদন্ত করতে কিছু সময় লাগে। সেই সময়টা আমাদের দিতে হবে। যাঁরা আজ উচ্চারণ করেন ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে নরসিংদীকে অচল করে দেব, আমি তাঁদের সতর্ক করে দিতে চাই, তাঁরা যেন এই কাজটি না করেন। আইন আইনের গতিতে চলবে এবং পুলিশের ও তদন্তকারী সংস্থার কার্যক্রম নিষ্ঠা ও সততার সঙ্গে চলছে। তাদের যতটুকু সময়ের প্রয়োজন, তা আমাদের দিতে হবে।'
জেলা বিএনপির সভাপতি খায়রুল কবিরের মামলা প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নজরুল ইসলাম হীরু বলেন, 'খায়রুল কবির খোকনকে গ্রেপ্তার করা নিয়ে আমরা জেলা আওয়ামী লীগের নেতারা এমনকি কোনো সংসদ সদস্যও জানি না। যতটুকু আমরা শুনেছি, গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনের ভিক্তিতে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।' এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, 'দেশের বিভিন্ন স্থানে এ রকম আলোচিত হত্যাকাণ্ড হয়েছে। সুতরাং দুঃখজনক হলো, আমরা একজন শ্রেষ্ঠ মেয়রকে হারিয়েছি। কিন্তু এ রকম ঘটনা শুধু নরসিংদীতেই নয়, সারা দেশেই ঘটছে। আমরা সারা দেশের মানুষ হানাহানিতে মগ্ন হয়ে গেছি। কারণ আমরা ব্যাপক অর্থনীতিসহ বিভিন্ন কারণে চাপে রয়েছি।'
৯ দিনেও কোনো আসামি গ্রেপ্তার না হওয়া প্রসঙ্গে এক প্রশ্নের জবাবে হীরু বলেন, মামলা নিয়ে নরসিংদীর মানুষ বিভ্রান্তিতে ভুগছে। সাধারণত এ রকম একটি হত্যাকাণ্ডের মামলা এমন হয় না। অনেকে এটাও মনে করছেন, কিছু স্বার্থান্বেষী মহল এই বিপর্যস্ত পরিবারটিকে তাদের মানসিক দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে ভুল পরামর্শ দিচ্ছে।
হীরু বলেন, আইনশৃঙ্খলা সভায় একজন প্রত্যক্ষদর্শী বলেছেন, এক মুখোশধারী সন্ত্রাসী ঢুকে ১০-১২ সেকেন্ডের মধ্যে চার-পাঁচটি গুলি করে মুহূর্তের মধ্যে পালিয়ে যায়। কিন্তু মামলার এজাহারে বলা হয়েছে চারজন গুলি করেছে। ফলে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। সাধারণত কোনো ঘটনায় আসামিকে চেনা না গেলে ঘটনার বর্ণনা দিয়ে মামলার এজাহারে লেখা হয়, অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিরা হত্যা করেছে। কিন্তু লোকমান হত্যা মামলায় কিছু ব্যক্তির নাম বলা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে শিবপুরের সংসদ সদস্য জহিরুল হক মোহন, পলাশের সংসদ সদস্য আনোয়ারুল আশরাফ খান দিলীপ, জেলা প্রশাসক মো. ওবায়দুল আজম, নবাগত পুলিশ সুপার খ. মুহিদ উদ্দিন, জেলার বিভিন্ন উপজেলা চেয়ারম্যান, নির্বাহী কর্মকর্তাসহ আওয়ামী লীগের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে নরসিংদীর লোকমান হোসেন হত্যার ঘটনায় সার্কিট হাউস ভাঙচুরের মামলা থেকে জামিন পেয়েছেন জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য খায়রুল কবির খোকন। গতকাল বৃহস্পতিবার সকালে খোকনের আইনজীবী নরসিংদীর প্রধান বিচারিক হাকিম আদালতে জামিন আবেদন করলে বিচারক মো. শাহজাহান আবেদনটি মঞ্জুর করেন। রেলস্টেশন ভাঙচুরের অন্য মামলায় তাঁর জামিন আবেদনের শুনানির দিন আগামী রবিবার ধার্য করেছেন আদালত।

No comments

Powered by Blogger.